আজ বুধবার, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শক্তি দেখতে চান শামীম ওসমান

স্টাফ রিপোর্টার :
বিএনপির সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙ্গা বিষয়ে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, তারা অতন্ত্য সুকৌশলে এ কাজটি করেছে। কাউকে দিয়ে করিয়েছে বা নিজে নিজে ম্যুড়াল ভেঙ্গে পড়েছে। যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে এটা নিয়ে ইস্যু সৃষ্টি করবে। ইস্যু করে চেষ্টা করবে, যাতে প্রকৃত ইতিহাস প্রকাশ না হয়। এই অপচেষ্টাকারীদের জানাতে চাই, এটা অসম্ভব। আপনারা পারবেন না। টাউন হল ভাঙ্গা হবে।
গতকাল বিকেল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, শুনলাম আমাকে দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল থাকারই কথা না। ৫ম সংশধনীতে সুপ্রীম কোর্ট জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তার সমস্ত কর্মকান্ড এবং তার রাষ্ট্রপতির পদকেও অবৈধ ঘোষণা করেছে। সুপ্রীম কোর্টের রায় যাকে অবৈধ বলেছে, তার ম্যুরাল কোথাও থাকার কথা না। ব্যক্তিগতভাবে রাখলে তাতে আপত্তি নাই। তারা নাকি ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাদের আল্টিমেটামের সত্যতা দেখতে চায়।
সংসদ সদস্য বলেন, শুনলাম আগের দিন এরাই নাকি ফোন করে বলেছে, ভাইকে মাইন্ড করতে মানা কইরেন (ভাই মানে শামীম ওসমান)। ভাইয়ের বিরুদ্ধে যদি কিছু বলি তাহলে কেন্দ্রে আমাদের একটু দাম বাড়ে। দাম বাড়ানোর জন্য যদি বলে থাকে তাহলে আমার কোনো আপত্তি নাই।
তিনি বলেন, গতকাল সাংবাদিকের কাছে প্রথম অবগত হই জিয়াউর রহমানের একটি ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে আর এটার জন্য আপনাকে দায়ী করা হয়েছে। আমি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাইনি। যারা দায়ী করছে তাদেরকে আমি ওই পর্যায়ের নেতা বলে মনে করিনা।
এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, কাগজে-কলমে, ডকুমেন্টে সব জায়গায় এটা টাউন হল হিসেবে আছে। টাউন হল জেলা প্রশাসকের সম্পত্তি, সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ এই দায়িত্বে অবহেলা করা হয়েছে। আমি ওই কমিটির উপদেষ্টা। ২০১৪ সালে ডিসি আনিস মিটিং ডাকেন এবং সিদ্ধান্ত হয়েছিল এটা ভেঙ্গে ফেলা হবে। অতি আওয়ামী প্রশাসনের কারণে গত ১০ বছরেও কিছু হয়নি। বর্তমান জেলা প্রশাসকের সঙ্গে গত ৬ মাস যাবৎ কথা বলছি। রাউজক সারাদেশে যে ভবনগুলোকে ঝুকিপূর্ণ বলেছে তার মধ্যে ১ নম্বরে এই ভবনটি।
জেলা প্রশাসকের একটি চিঠি তুলে ধরে তিনি বলেন, চিঠিটি গত ২ এপ্রিল ইস্যু করেছে। চিঠি অনুযায়ী ৪ এপ্রিল বেলা ১২টায় টাউন হল কমিটির সভা। সেখানে উপদেষ্টা হিসেবে আমাকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হয়। আমরা তো জানি সিদ্ধান্ত কি হবে সেটাই হয়েছে।
শামীম ওসমান বলেন, গত দুই তারিখে সভা ডাকা হয়েছে, ৩ তারিখ এটা ভাঙ্গল, ৪ তারিখ আমরা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরা এতদিন ভাঙ্গলাম না কেন। কারণ জানি এমনিতেই প্রশাসনিকভাবে এটা ভাঙ্গা হবে। জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙ্গলে আগেই ভাঙ্গতে পারতাম। রাতের বেলায় ভাঙ্গার কি আছে! তারা বুঝছে এখন সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে সে কারণে তারা সুকৌশলে এ কাজটি করেছে বা করিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আসার সময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করছিল, নারায়ণগঞ্জে কিছু ঘটলে বিএনপি কিংবা জামাত আপনাকে দায়ী করেন কেন? আওয়ামী লীগ, মন্ত্রী ছিলেন, মেয়র আছেন অন্যান্যদের দায়ী করে না, শুধু আপনাকে কেন দায়ী করে? যারা আছেন তারা অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি তো তাই কেউ তাদের বলার সাহস পায় না। আমার যোগ্যতা একটু কম, রাস্তা থেকে উঠে এসেছি তাই। আমার বিপক্ষে বলে এতে বুঝি, আমি ঠিক আছি। যদি আমার পক্ষে বলত তাহলে বুঝতাম আমি ভুল।
এমপি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে ইতিহাস বিকৃতির পালা চলছে। কিছুদিন আগে আমি প্রেসক্লাবে বলে গিয়েছিলাম ডকুমেন্ট দিবো। সে কারণে বইগুলো ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ১৯৪৬ সালের পেপার কাটিং নিয়ে এসেছি। ৬ দফা যেখানে ঘোষণা করা হয়েছে ঠিক সেখানে টাউন হল করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যেখানে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন সেখানে শিশু পার্ক করা হয়েছে। এটি খুব পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। যাতে স্মৃতিগুলো মুছে দেয়া যায়। তিনি আরও বলেন, ৬৯ গণঅভ্যুত্থানে সারাদেশে গুলিতে ১১জন নিহত হয়। আমি ছাড়া এখানে কেউ বলতে পারবেন না, ওই ১১ জনের মধ্যে ১০জন শুধু নারায়ণগঞ্জের ছিল। ওই শহীদদের নাম আমরা বলতে পারবো না, যদি কোনো বয়োজ্যেষ্ঠরা না পারে।
স্বাধীনতা, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, তাদের স্মৃতি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। স্বাধীনতার ইতিহাস যদি কেউ অপব্যখ্যা করে আমরা তাকে বর্জন করবো, নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাকে বর্জন করবে। কিছুদিন আগে চরম বামপন্থী, যারা তাদের সন্তানদের নিয়ে রাজনীতি করে তারও একই চেষ্টা করেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে গিয়েছিলাম প্রমাণ করবো। তাই আজ তথ্য-প্রমাণ নিয়ে এসেছি।
শামীম ওসমান বলেন, এই যে ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র হয় এটা কিন্তু ডান আর বাম নাই। জামাত আর বাম না। এটা একটি গ্রুপ। এই গ্রুপটি অবিরত চেষ্টা করছে নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার। এখন তারা ইন্ডিয়ার সাথে হাত মিলিয়েছে।