স্টাফ রিপোর্টার :
এম এ রশীদকে সমর্থন দিতে গিয়ে অন্য প্রার্থীদের নিয়ে সেলিম ওসমানের হুঙ্কার অনেকটা তার সমর্থিত প্রার্থীর জন্যই বুমেরাং হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, সাংসদ সেলিম ওসমান ডেড হর্স নিয়ে রেসে জিতার চেষ্টা করছেন।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, রশিদের পক্ষে সেলিম ওসমানের অমন জোড়ালো বক্তব্যের পরেও ভোটারদের মাঝে সাড়া ফেলা তো দূরকি বাত, দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও সাড়া ফেলতে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে গত ৩০ মার্চ ধামগড়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেই বক্তব্যকে ভালভাবে নেয়নি বন্দরের সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, গত প্রায় ২৫ বছর ধরে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে এম.এ রশিদ। দীর্ঘ সময় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেও তিনি বন্দরে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী সংগঠনে রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ২৫ বছরে তিনি দলীয় পদ ব্যবহার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতার সাথেই তিনি বৈরীতায় জড়িয়েছেন। দলকে সুসংগঠিত করতে না পারার পাশাপাশি তিনি নিজের অনুসারীও তৈরি করতে পারেনি। এর ফলে ২০০৯ ও ২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েও আতাউর রহমান মুকুলের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে এমপি সেলিম ওসমানের হস্তক্ষেপে বিনাপ্রতিদ্ব›দ্ধীতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ছিলেন তিনি। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গত ৫ বছরে তিনি পুরোপুরি ভাবে জন বিছিন্ন হয়ে পড়েন। বন্দর আওয়ামী লীগের তৃনমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গত ৫ বছরে কোন কাজেই তারা এম.এ রশিদের সহযোগীতা পায়নি। এমনকি তিনি সাধারণ কর্মীদের কাছ থেকে পুরোপুরি ভাবে বিচ্ছিন্ন থেকেছেন। তিনি আমাদের থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন এলাকার মানুষের কোন প্রকার সমস্যা নিয়ে তার কাছে গিয়েও কোন সুরাহা করতে পারিনি আমরা কেউ। এবারের নির্বাচনে তার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাওয়ার মতও পরিস্থিতি তিনি তৈরি করতে পারেননি গত ৫ বছরে।
অপরদিকে এমপি সেলিম ওসমানের বক্তব্য ঘিরে সাধারণ মানুষের মাঝে রশিদকে নিয়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পাড়া মহল্লায় সাধারণ মানুষের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে এখন একটাই বিষয়, বন্দর উপজেলা নির্বাচন ও রশিদের পক্ষ নিয়ে অন্য প্রার্থীদের সেলিম ওসমানের হুংকার। সাধারণ মানুষের দাবী নির্বাচনে যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন। সাধারণ মানুষ ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিবেন। কিন্তু এমপি সেলিম ওসমান ভোটের পক্ষে না। তিনি ইলেকশন নয় সিলেকশনের পক্ষে। তাইতো তিনি অন্য প্রার্থীদের বসিয়ে দিয়ে বিনাপ্রতিদ্ব›দ্ধীতায় এম.এ রশিদকে নির্বাচিত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের কোন প্রকার প্রভাব বিস্তারে সম্পূর্ন রূপে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছেন। কিন্তু এমপি সেলিম ওসমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে একজন অজনপ্রিয় ব্যক্তিকে আগামী ৫ বছরের জন্য সাধারণ জনগনের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছেন। যা সাধারণ ভোটাররা মানতে চাইছেন না। সাধারণ মানুষ চাইছে ভোটের মাধ্যমে আগামী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে।
সেলিম ওসমান তাঁর বক্তব্যে মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন এবং দুইবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলকে বসে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান হতে শুরু করেছে এমপি সেলিম ওসমান যে প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন যদি সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠিত হয় তাহলে তার সমর্থিত প্রার্থী আতাউর রহমান মুকুল এবং মাকসুদ হোসেনের থেকেও কম ভোট পাওয়ার আশঙ্খা রয়েছে। কারন এর পূর্বে এই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এম.এ রশিদ দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে আতাউর রহমান মুকুলের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। তৃতীয় বারে এমপি সেলিম ওসমান আতাউর রহমান মুকুলকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিয়ে এম.এ রশিদকে বিনাপ্রতিদ্ব›দ্ধীতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। এবারেও তিনি একই পন্থায় নির্বাচনে এম.এ রশিদকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছেন বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
এমপি সেলিম ওসমানের ঘোষণার পর এম.এ রশিদ এখন পর্যন্ত দুটি আলোচনা সভা করেছেন। যেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা বক্তব্যে বড় বড় কথা বললেও আড়ালে এম.এ রশিদের সমালোচনা করতেই শোনা গেছে। সেই সাথে তারা এও বলছেন এম.এ রশিদের মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা একদম তলানিতে বিষয়টি এমপির অজানা নয়। এরপরও কেন তিনি উনাকে এভাবে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে জোড়ালো বক্তব্য রাখলেন। ওই বক্তব্যের পর আগামী নির্বাচন এখন এম.এ রশিদ নয় এমপি সেলিম ওসমানের জন্য সম্মান রক্ষার লড়াই হয়ে দেখা দিয়েছে।