স্টাফ রিপোর্টার :
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ সদর এবং বন্দর উপজেলার নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনায় এসেছেন প্রভাবশালী দুই এমপি। উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করলেও তা যেন তোয়াক্কাই করছেন না দুই সংসদ সদস্য। তারা উভয়েই চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এক প্রকার নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্যে এমনটা পরিস্কার হয়েছে বলে মনে করছেন বোদ্ধা মহল। তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে সর্বত্র।
জানা গেছে, সদর উপজেলার মধ্যে ফতুল্লা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাটি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নির্বাচনি অঞ্চল। অন্যদিকে, তার বড় ভাই এমপি সেলিম ওসমানের নির্বাচনি অঞ্চল সদর ও বন্দর থানা এলাকা। এর মধ্যে শামীম ওসমান যেমন সদর উপজেলার নির্বাচনে প্রার্থীতা দেয়া না দেয়ার বিষয়ে ফ্যক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তেমনই বন্দরেও এখন ফ্যক্টর হয়ে উঠেছেন সেলিম ওসমান।
তথ্য মতে, গোটা সদর উপজেলাতেই শামীম ওসমানের নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগের একটি বৃহৎ বলয় রয়েছে। তার বলয় থেকে এবার সদর উপজেলার নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য ইচ্ছে পোষন করেছেন একাধিক নেতা। তবে এই উপজেলায় শামীম ওসমান যাকে সমর্থন দিবেন, সেই প্রার্থী হবেন। এর বাইরে তার বলয় থেকে কেউ প্রার্থী হওয়ার মত দুঃসাহস দেখাবেন না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, বন্দরে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সাবেক নেতাও প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে নেমেছেন। যদিও তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো ভাবে সেলিম ওসমানের নিয়ন্ত্রণে আছেন। এর মধ্যে সেলিম ওসমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এমএ রশিদকে প্রত্যক্ষ ভাবে সমর্থন করেছেন। বাকিদের মধ্যে কেউ কেউ সেলিম ওসমানের পরোক্ষ সমর্থন পেয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও অনেকেই বলছেন, সেলিম ওসমান যাকে সত্যিকার অর্থে সমর্থন দিবেন বন্দরে তার বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত।
তথ্য বলছে, বিএনপি অংশ না নেয়ায় নির্বাচন জমিয়ে তুলতে এবার দলীয় প্রতিক থাকছে না। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক নেতা নির্বাচনে লড়তে পারবেন- এতে হাই কমান্ড থেকেও কোনো বাধা থাকছে না। ফলে প্রার্থীতা উন্মুক্ত করে উপজেলা নির্বাচন জমিয়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও নারায়ণগঞ্জ সদর এবং বন্দর উপজেলায় সেই উন্মুক্ত নির্বাচনই বাধাগ্রস্থ হতে যাচ্ছে দুই এমপির হস্তক্ষেপের কারণে।
জানা গেছে, গত ৩০ মার্চ ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাচন এবং প্রার্থীতা প্রসঙ্গে নানা বক্তব্য রেখেছেন এমপি শামীম ওসমান। এর মধ্যে তিনি তার অনুসারীদের প্রতি একপ্রকার হুংকারও দিয়ে রেখেছেন। শামীম ওসমান বলেছেন, তার সমর্থনের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচন করতে চাইলে শামীম ওসমানকে ভুলে যেতে হবে, যে শামীম ওসমানের সাথে কখনও তার সম্পর্ক ছিলো!
প্রবীন রাজনীতিবিদরা বলছেন, শামীম ওসমান এই বক্তব্যের মাধ্যমে তার অনুগতদের প্রতি একপ্রকার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। এক্ষেত্রে তার সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে গিয়ে বলয়ের অন্য কোনো নেতা প্রার্থী হতে চাইলেও হবেন না। এমনটা হলে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের মত সদর উপজেলার নির্বাচনও হবে আমেজহীন। কেননা, শামীম ওসমান যাকে সমর্থন করবেন, তার বিরুদ্ধে শক্ত প্রার্থী না থাকলে তিনিই যে পাশ করবেন- তা এক প্রকার নিশ্চিত। নিশ্চিত সেই নির্বাচনে ভোটাররা ভোট প্রদানে আগ্রহ হারাবেন বরাবরের মতই। সে যাহোক, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় যেমন এমপি শামীম ওসমান তার পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচিত করবেন, তেমনই সেলিম ওসমানও তার পছন্দের ব্যক্তিকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে চেষ্টা চালাবেন। এক্ষেত্রে সদর ও বন্দর উপজেলা নির্বাচনে দুই ভাইয়ের যে একই মিশন রয়েছে- তা নিয়েই স্থানীয়দের মাঝে চলছে নানা আলোচনা।