আজ মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাণিজ্য মেলায় বিদেশিদের পণ্যে ক্রেতাদের চাহিদা বেশি

এম এমোমেন:
ঢাকা আন্তজার্তিক বাণিজ্যমেলায় তুর্কি কার্পেট ও শৌখিন বর্ণিল বিলাসী পণ্য, কাশ্মীরি শাল, অ্যালুমিনিয়ামের গৃহস্থালি পণ্য, ভারতীয় আচারসহ বিদেশিদের পণ্যে ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি। বিলাসী পণ্যের চাহিদাও প্রচুর। হাতের নাগালে গুণগতমান সম্পন্ন বিদেশি পণ্য পেয়ে ক্রেতারাও খুশি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দেশি পণ্যের স্টলের চেয়ে বিদেশি পণ্যের স্টলে ক্রেতাদের ভিড় বেশি। ছোট বড় সবাই পণ্য দেখছেন। আলোকসজ্জার স্টলে কেউবা বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে পছন্দের পণ্যটি পরখ করে নিচ্ছেন। তরুণী ও মহিলারা ঘরের সাজ-সজ্জার স্টলে ভিড় করছেন। কেউবা কাশ্মীরি শাল গায়ে জড়িয়ে লুকিং গ্লাসে নিজেকে কেমন লাগছে তা যাচাই করছেন। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটার ধুম। মূল্য ছাড়ের নানা অফারে পুরো দমে চলছে কেনাবেচা।
তুর্কি প্যাভিলিয়নের অরজিনাল ইস্তাম্বুল স্টলের মালিক সিহান জামুর বলেন, এদেশের মানুষ শৌখিন। তারা সুন্দরের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়। পছন্দও ভালো। আপ্যায়ন জানেন। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় শখের জিনিস কেনেন। এদেশের মানুষের শৌখিনতার কারণেই বাণিজ্যমেলায় অংশ নেওয়া তুর্কির বাতিঘর স্টলে প্রচুর কেনাবেচা হচ্ছে। এ স্টলে ৫শ’ টাকা থেকে ৩লক্ষ টাকা মূল্যের পণ্য রয়েছে। এ পণ্যের চাহিদাও প্রচুর। তাদের স্টলের প্রায় সকল পণ্যই বিক্রি হয়ে গেছে। মেলায় তুরস্কের এই প্যাভিলিয়নে গিয়ে পণ্য বিক্রির কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি এ কথা বলেন। মেলায় নিজেদের পণ্য বিক্রি নিয়ে উচ্ছ্বসিত সিহান জামুর।
তুরস্কের নাগরিক সিহান জামুর তার পিতা সিমাল জামুরকে সঙ্গে নিয়ে গত কয়েক বছর মেলায় স্টল দিয়েছিলেন। তার পিতা অসুস্থ থাকায় এবার মেলায় আসেননি। মেলায় এসেছেন তার বড় ভাই সাইহান জামুর। আলোকসজ্জার উপকরণাদি ও কসমেটিকস বিক্রি করছেন তারা। গত ১৯ বছর ধরে তারা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অংশ নিচ্ছেন।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় এবারের মেলায় দেশি-বিদেশি ৩৫১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি বিদেশি স্টল রয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, ইরাণ, তুরস্ক, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এবারের মেলায় অংশ নিয়েছেন।
এবার মেলায় ৩৫১টি স্টল বসেছে। এদের মধ্যে দেশি ৩৩৪টি। বিদেশি ১৭টি। বিদেশি এসব স্টলে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের বেশ ভিড়। বিদেশি এই স্টগুলোতে জুতা, পোশাক, কসমেটিকস, হারবাল, শীতবস্ত্র, কার্পেট, শালসহ গৃহস্থালির উপকরণের চাহিদা বেশি। বিদেশি কার্পেট ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা-দর্শনার্থীরা জানান, বিদেশি পণ্য বেশি দৃষ্টিনন্দন বিলাসী। তবে সব পণ্য দেখেশুনে দাম যাচাই করে কেনার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারতের কাশ্মীরি শালের বিক্রয় প্রতিনিধি নারায়ণ চক্রবর্তী বলেন, মেলার আয়োজন ভালো। সমস্যা নেই। তবে ধুলাবালুতে কিছুটা সমস্য হয়েছে। মেলায় তুরস্কের বাতিঘর সবার নজর কেড়েছে। তৈজসপত্র, গহনা, থালা-বাসন, আলোকসজ্জারও ঘর সাজানোর উপকরণ দর্শনর্থীদের আকৃষ্ট করেছে। একটি ল্যাম্প ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। তুরস্কের সুলতান হোমসের মালিক শাহ্ আলী তাজ ২০১০ সাল থেকে বাণিজ্যমেলায় পণ্য নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, গত দুই বছরের তুলনায় এবার মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী ছিলো বেশি। বিক্রিও হয়েছে প্রচুর।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে মেলায় আসা গৃহবধূ তানিয়া ইসলাম বলেন, নিজের ঘর ভিন্ন ভাবে সাজাতে চায় সবাই। সাজসজ্জার জন্য তুর্কির ল্যাম্পগুলো খুবই সুন্দর। এখানকার পণ্যের দাম বিশি হলেও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগ্রহের কমতি নেই।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব বিবেক সরকার বলেন, দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে বিদেশিদের বিশেষভাবে মেলায় সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হয়েছে। বাণিজ্যমেলায় প্রতিবছর বিদেশিদের স্টল বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশি স্টলের মালিকরা নিশ্চয় ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়েছে।