আজ বৃহস্পতিবার, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পানির জন্য ১৮শ কোটি প্রজেক্ট

স্টাফ রিপোর্টার :

ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানির সঙ্কট লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে এ সঙ্কট আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। নভীর নলকূপ থেকে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ার কারণে প্রায় বিকল হয়ে পরে পাম্প। ফলে পর্যাপ্ত ব্যবহার্য্য পানির অভাবে দিনের পর দিন দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
নগরবাসীর দীর্ঘদিনের পানির সঙ্কট সমাধানে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘নারায়ণগঞ্জ গ্রীন রেজিলিয়েন্ট আরবার ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক একটি মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে নাসিক। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দূর হবে নারায়ণগঞ্জের পানি সংক্রান্ত সকল সঙ্কট। প্রতিদিন চাহিদার তিনগুণ বেশি পানি উৎপাদন সম্ভব হবে এবং শুষ্ক মৌসুমেও নগরবাসী পর্যাপ্ত পানি পাবে বলে জানিয়েছে পানি সরবরাহ বিভাগের কর্মকর্তারা।
তথ্যমতে, ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়াসা নারায়ণগঞ্জ জোনের দায়িত্ব নেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। প্রতিদিন এই জোনে প্রায় ১১ কোটি ১১ লাখ লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা পূরণের জন্য শীতলক্ষ্যা নদী ও ভূ-গর্ভস্থ এই দুই উৎস থেকে পানি সংগ্রহ ও শোধন করে তা সরবরাহ করে নাসিক পানি সরবরাহ বিভাগ। এর জন্য নাসিকের ৩৮টি গভীর নলকূপ, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল ও বন্দরের সোনাকান্দা এলাকায় দুইটি পানি শোধনাগার ও একটি ল্যাব রয়েছে।
নাসিক পানি সরবরাহ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ওয়াসা হস্তান্তর ও দায়িত্ব গ্রহণের পরই বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখিন হন তারা। দীর্ঘদিনের পুরনো জরাজীর্ণ সংযোগ, নিয়ম বহির্ভূত বিশৃঙ্খল ও অবৈধ সংযোগ, অব্যবস্থাপনা, পানি শোধনাগার সংস্কার, পানির মান, অপরিশোধিত বিল, রেভিনিউ সংকট, চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান, পুরনো প্লান্টের যন্ত্রাংশ সংস্কারসহ নানাবিদ সমস্যা চিহ্নিত করে নাসিক। এসব সমস্যা ধীরে ধীরে সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে নাসিক। এ লক্ষ্যে পানির মান উন্নয়ন, ১০টি নতুন পাম্প স্থাপন, পানি শোধনাগার সংস্কার, পুরনো জরাজীর্ণ সংযোগ পরিবর্তনসহ নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নাসিকের প্রচেষ্টায় সেবার মান কিছুটা উন্নতি হওয়ার পরপরই বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভূ-গর্ভস্ত পানির স্তর।
নাসিক নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণের কারণে পর্যাপ্ত পানি শোধন করা সম্ভব হচ্ছে না। নদীর পানির দূষণের মাত্রা বেশি হওয়ায় এই পানি শোধনের জন্য অতিরিক্ত ক্যামিকেল ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয় এবং সময়ও লাগে বেশি। এছাড়া শোধনাগার দুটি যথাযথভাবে সংস্কার না করার কারণে সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বর্তমানে গোদনাইল শোধনাগার থেকে প্রতিদিন ২ কোটি ৩ লাখ লিটার এবং সোনাকান্দা শোধনাগার থেকে মাত্র ৬৫ লাখ লিটার পানি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।
পানি সরবরাহ বিভাগের তথ্যমতে, নাসিকের ৩৮টি গভীর নলকূপের মধ্যে ৩৪টি নলকূপ সচল রয়েছে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিবছরই শহরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৬ থেকে ১০ ফিট নিচে নামছে। আর শুষ্ক মৌমুমে পানির স্তর আরও নিচে থাকে। ফলে বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ার কারণে পাম্প বিকল হয়ে পড়ে। এর জন্য প্রতিবার এলাকা ভেদে অতিরিক্ত একটি অথবা দুটি কলাম পাইপ সংযোজন করতে হয়। তবে সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চল, শহরের দেওভোগ ও আশেপাশে এলাকা এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থা খুবই খারাপ। সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে অনেক ডাইং কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা বছরের পর বছর ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে করতে ওই এলাকার পানির স্তর অনেক নিচে নিমে গেছে। এ অবস্থায় সেখানে নতুন পাম্প স্থাপনও সম্ভব না।
‘নারায়ণগঞ্জ গ্রীন রেজিলিয়েন্ট আরবার ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে বিভিন্ন স্থানে ২০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে এবং পানি শোধনাগার দুটি সংস্কার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দিনে ৩৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন সম্ভব হবে। যা বর্তমান চাহিদার তিনগুণ।
এ বিষয়ে নাসিক সহকারী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল জোবায়ের বলেন, বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয় বড় দুটি বাধা হচ্ছে জরাজীর্ণ শোধনাগার ও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে দুই সমস্যাই সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, শহরের অন্যান্য এলাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামলেও নদীর পাড়ের এলাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর কখনো নিচে নামে না। তাই শীতলক্ষ্যার নদীর পাড়ে গভীর নলকূপগুলো স্থাপন করা হলে শুষ্ক মৌসুমেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাবে এবং কোনো সঙ্কট দেখা দিবে না। এছাড়া আমাদের দুটি শোধনাগার মোটামুটি ভালো অবস্থায় আছে। এদুটির যথাযথ সংস্কার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়, তাহলে আমরা ভালো ফলাফল পাবো।
নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর বলেন, প্রকল্পটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটির বাজেট ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার ও বিদেশী অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। তাই গত আগস্ট মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটি প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে। যা আগামী একনেকের সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে।