আজ সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঈদের পর রণপ্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার :

আগামী কয়েক মাস পরই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। তাই রাজনীতিতে নির্বাচন কেন্দ্রীক আলোচনা জমে উঠতে শুরু করেছে। জেলার ৫টি আসনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি অন্যতম। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের উত্তাপ ছড়াতে পারে এই আসন থেকেই। কেননা, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নির্বাচনি এই আসনে দেখা দিয়েছে তুমুল লড়াইয়ের সম্ভাবনা। এই লড়াই দেখা যাবে দলীয় মনোনয়ন এবং ভোটের মাঠেও আগামী ঈদুল আজহার পর নির্বাচন কেন্দ্রীক এই লড়াই পুরো দস্তর শুরু হবে বলে মনে করছেন বোদ্ধা মহল।

জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে নৌকা প্রতিক চাইবেন বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। পাশাপাশি জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশও নৌকার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্যদিকে, বিএনপির মনোনয়ন প্রসঙ্গে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তিনি জেলা বিএনপিকে সংগঠিত করে তুলেছেন। আগামীতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে তার কাঁধেই তুলে দেয়া হবে ধানের শীষ প্রতিক; এমনটা প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।

তথ্য মতে, এমপি শামীম ওসমান ও কাউসার আহমেদ পলাশের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। অন্যদিকে, গিয়াস উদ্দিনের সাথে দূরত্ব রয়েছে এমপি শামীম ওসমানের। তাই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নানা ইস্যুতে এই আসনে উত্তাপ দেখা দিয়েছে মোটা দাগে।

জানা গেছে, বক্তাবলীতে শ্রমিক লীগের কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল শামীম ওসমান অনুসারী হিসেবে পরিচিত চেয়ারম্যান শওকত আলী এবং তার কর্মীদের বিরুদ্ধে। এতে শামীম সমর্থকদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কাউসার আহমেদ পলাশ এবং তার অনুসারীরা।

অতীত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, শামীম ওসমানের দলীয় মনোনয়নের পথে একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শ্রমিক নেতা কাউসার আহমেদ পলাশ। যদিও শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমানকেই নৌকা প্রতীক দেয়া হয়। পলাশের অনুসারী নেতারা বলছেন, এবারও নৌকা প্রতিক চাইবেন পলাশ।

অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। নেতাকর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর গিয়াস উদ্দীনের কাঁধে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দায়িত্ব তুলে দেয়ার মাধ্যমে দলের হাইকমান্ড আবারও তাকে ফ্রন্ট লাইনে এনেছেন। এর নেপথ্যের কারণ আগামী জাতীয় নির্বাচন। কেননা, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনী লড়াইয়ে টক্কর দেয়ার সক্ষমতা রাখেন বিএনপির সাবেক এই সংসদ সদস্য।

যদিও বিগত নির্বাচনগুলোতে এই আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় শিল্পপতি শাহ-আলমের নাম ছিলো। কিন্তু শাহআলম মাঠের রাজনীতিতে পোক্ত নন। তিনি আপাদমস্তক একজন ব্যবসায়ী। তাছাড়া, বিগত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় রাজনীতি থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, গিয়াস উদ্দিন বিএনপির নেতৃত্বে আসায় নেতাকর্মীরা এখন তার নেতৃত্বে বিএনপির ব্যনারে সমবেত হয়েছেন। তাই আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে গিয়াস উদ্দিনই বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্ত হবেন এমনটা অনেকে হলফ করেই বলছেন।

বোদ্ধা মহল বলছেন, আওয়ামী লীগে শামীম ওসমান ও কাউসার আহমেদ পলাশের মধ্যে মনোনয়নের লড়াইয়ে যিনি জয়ী হবেন, তার সাথে ভোটের লড়াইয়ে দেখা যেতে পারে গিয়াস উদ্দিনকে।

তথ্য মতে, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে শামীম ওসমান ও বিএনপি থেকে গিয়াস উদ্দিন ভোটের লড়াইয়ে নামেন। ওই নির্বাচনে শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন বিএনপির গিয়াস উদ্দিন। এখনো পর্যন্ত চার বার জাতীয় সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করা শামীম ওসমান তিনবার জয়ী হলেও একবারের পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিনের কাছেই। ঘুরে ফিরে আবারও সেই গিয়াস উদ্দিনই হতে পারেন আগামী নির্বাচনে শামীম ওসমানের প্রতিদ্বন্দ্বী।

প্রবীন রাজনীতিবীদরা বলছেন, ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এমনিতেই বিএনপির কর্মী সমর্থক বেশী। বিশেষ করে, ফতুল্লার প্রতিটি ইউনিয়নে বিএনপির ঘাঁটি রয়েছে। এই অঞ্চলে বিএনপির ভোটার সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি। এখানে বিএনপির ভোট ব্যাংক রয়েছে। তাছাড়া, গিয়াস উদ্দিনের মত শক্ত, অভিজ্ঞ ও গ্রহনযোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে যদি বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয়, তাহলে বিএনপির সর্বস্তরের কর্মী-সমর্থকরা তার দিকেই ঝুঁকবে। তাই এবারের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে তুমুল লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বোদ্ধা মহল।

প্রসঙ্গত, ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে শেষ ৯টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪, বিএনপি- ৩ এবং জাতীয় পার্টি ২ বার জয় পেয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে পরপর দুই বার জাতীয় পার্টির আব্দুস সাত্তার, ১৯৯১ সনের পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ নির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মদ আলী, ১৯৯৬’র জুনে সপ্তম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শামীম ওসমান, ২০০১ সালের অষ্টম নির্বাচনে বিএনপির গিয়াস উদ্দিন, ২০০৮ সালের নবম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সারাহ বেগম কবরী, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে পরপর দুইবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন শামীম ওসমান।