আজ রবিবার, ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চার খুনে চাঞ্চল্য

স্টাফ রিপোর্টার :

একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে নারায়ণগঞ্জে। জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক অবক্ষয়, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঘটে যাওয়া এসব হত্যাকান্ডের সারি ক্রমশই দীর্ঘ হচ্ছে। সম্প্রতি আলোচিত ৪টি খুন বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এ জেলার সাধারণ মানুষের মাঝে। এসব খুনের ৩টিই ঘটেছে প্রকাশ্যে, যার দুটি আবার একেবারেই দিনে দুপুরে! অপরটি পারিবারিক সৃষ্ট জটিলতা থেকে ন্যাক্কারজনক খুন।

নাগরিক মহলের নেতৃবৃন্দ বলছেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে বলেই এমন লোম হর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেন, ঘটনার পর খুনিদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নিচ্ছেন কঠোর ব্যবস্থাও। তাই আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটনার মত পরিবেশ দেখছেন না তারা।

জানা গেছে, গত কয়েকদিনে নারায়ণগঞ্জে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর ওই ৬ খুনের মধ্যে ২টি বন্দর, একটি আড়াইহাজার এবং একটি ঘটেছে ফতুল্লায়। অল্প দিনের ব্যবধানে ভয়াবহ এই চার খুনের ঘটনায় উদ্বেগ তৈরী হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।

ঘটনা সূূত্রে জানা যায়, গত ৬ এপ্রিল বন্দর উপজেলার কুঁড়িপাড়া এলাকা থেকে ৭ বছর বয়সি শিশু সৌরভের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশি তদন্তে বেড়িয়ে আসে শিশু সৌরভ হত্যার চাঞ্চল্যকর কাহিনী। পুলিশ বলছে, সৎ ভাই সানি মিয়া ও ভাবি আয়েশা আক্তারের ব্যাক্তিগত সময় কাটানোর সময় চলে আসতো শিশু সৌরভ (৭)। এতে বিব্রত ও বিরক্ত হয়ে শ্বাশুড়ি শিল্পী বেগমের সাথে পরামর্শ করে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে গত ৪ এপ্রিল শিশু সৌরভকে নিজ ঘরে হত্যা করে একটি ড্রামে ভরে খাটের নিচে রেখে দেয়। রাতে সুযোগ বুঝে স্ত্রীর সহযোগীতায় বাড়ির পেছনে পরিত্যাক্ত ঝোপে ফেলে দেয়া হয় সৌরভের লাশ। অনেকটা রগরগে এই ঘটনা ও নিষ্ঠুরতায় ঠাসা খুন নিয়ে সর্বত্র আলোচনা সমালোচনা চলছে।

অন্যদিকে, গত ৬ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকায় আফজাল নামে এক সন্ত্রাসীকে তুলে নিয়ে নির্মম ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী বাহিনী রাজু প্রধান, রাশেদ ও রাসেল সহ তাদের সহযোগিরা। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা ও পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রকাশ্য দিবালোকে এই খুন নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জে।

এদিকে গত ৪ এপ্রিল সকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রকাশ্যে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় দুপ্তারা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল আলমকে। জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও বায়নার ৩ লাখ টাকার জেরে দুপ্তারা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৬নং ওয়ার্ডের সভাপতি হাসমত আলী, তার ভাই কিছমত আলী, কামাল, ডলি আক্তার, ইব্রাহীম, আবু তাহের, আইয়ুব, হান্নান, অনিক, আলামিন, শান্ত, নূরা, সাইফুল ও আমানসহ কয়েক জন মিলে নিজ বাড়িতে আটকে রেখে স্বজনদের সামনেই কুপিয়ে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এবং চোখ উপড়ে ফেলে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় মাহাবুবুলকে। এই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সহ সর্বত্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে ১৪ জনের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে গত ৩ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটে বন্দরে। সন্ধ্যায় উপজেলার রুপালী আবাসিক এলাকায় মেরাজ নামে এক যুবককে নৃসংশ ভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয় ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহিন মিয়ার হুকুমে তার লোকেরা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় কাউন্সিলর শাহীনকে প্রধান আসামী করে আকিব হাসান রাজু ওরফে চুইল্লা রাজু (৩৪), সোয়েব ওরফে সৌরভ (২৮), সাখাওয়াত হোসেন পিংকি (৩৮), বাবু (৪৫), ফয়সাল ওরফে রবিন (৩০), মোঃ কাজল প্রধান (৪৮), মাসুদ ওরফে মাইচ্ছা (৪৮), মানিক (৩৫), স্বপন (৪৮), আব্দুর রব (৫৫), বিল্লাল হোসেন বিল্লু (৩৩), রানা ওরফে কাইল্লা রানা (৩২) ও নাদিম (৩৭) নামে ১৪ জনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

এদিকে, গত কয়েক দিনে একের পর এক হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও।

এই বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।