আজ মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নয় হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান

এম.এ মোমেন

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৩-এ অংশ নিয়েছিলাম। পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। এ সুযোগে আন্তর্জাতিক মেলায় কাজ করছি। খন্ডকালীন বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে। বেতন কম। অভিজ্ঞতা বেশি। কাজের চাপও অনেক। ঘুমানো সময় ছাড়া বাকি সময় কাজের পিছনেই ছুটতে হয়। তবে আয়ের সাথে অভিজ্ঞতাও হচ্ছে। বাণিজ্য মেলায় কাজের প্রসঙ্গে এভাবেই অনুভুতির কথা বলছিলেন শিক্ষার্থী অনিমা চন্দ্র সরকার। তিনি গোল্ড কসমেটিকসের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।
গাজীপুরের সালনা এলাকার রাতুল আহমেদ মি. বাইট রেস্টুরেন্টের খাবার সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করছেন। পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করার সময় তিনি পিতাকে হারান। মা জহুরা আক্তার অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। রাতুল এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে লেখাপড়া করছেন। অভাব অনটনের মধ্যে তিনি বাণিজ্য মেলায় কাজ করতে এসেছেন। এ মাসের আয়ে তার ৩/৪ মাসের লেখাপড়ার খরচ হবে এমনটাই আশা তাঁর। শুধু অনিমা চন্দ্র সরকার আর রাতুল আহমেদ নন, তাদের মতো অনেকেই পড়াশোনা শেষ করে চাকরিপ্রার্থী কিংবা হঠাৎ করে বেকার হয়ে পড়েছেন কিংবা লেখাপড়ার খরচ জোগাতে বাণিজ্য মেলায় কাজ করছেন। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলার স্টলে তরুণ-তরুণীদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হয়।
বাণিজ্য মেলাকে ঘিরে প্রায় ৯ হাজার তরুণ-তরুণীর খন্ডকালীন চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। স্টলগুলোতে কেউ বিক্রয় প্রতিনিধি। কেউ হিসাবরক্ষক। কেউবা খাবার সরবরাহকারী। আবার কেউবা প্রহরী। নানা পদে তারা কাজ করছেন। কোন কোন স্টলে তরুণীরা একই রঙের জামা কিংবা শাড়ি পড়ে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
খাবারের স্টল মি.বাইটের ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজ বলেন, তাদের রেস্টুরেন্টে ৪৫ জন তরুণ বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন। খাবারের স্টল ফুড বাংলোর মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, বেকারদের দিয়েই তিনি কাজ করাচ্ছেন। কিছুটা হলেও তিনি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনজুমান আরা। অর্থের অভাবে তিনি সারা বছর টিউশনি করেন। লেখাপড়ার খরচ জোগাতেই এ কাজে প্রথমবারের মতো যোগদান করেছেন। তাতে আয় এবং অভিজ্ঞতা দুই-ই অর্জন হচ্ছে। এছাড়া প্রাণ আরএফএল-এ ৭৫জন, ওয়ালটনে ৫০ জন, প্রোভিডেন্টে ৩২ জন, গাজী গ্রুপে ২৭ জন, বিরাণী হাউজে ৪৫ জন তরুণ-তরুণী খন্ডকালীন চাকরি করছেন।
নূর কসমেটিকসের বিক্রয় প্রতিনিধি সুলতানা আক্তার বলেন, তরুণ তরুণী ও নারীদের পছন্দের তালিকায় কসমেটিকসই সেরা। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত স্টলে প্রচুর ভিড় থাকে। বিক্রিও হচ্ছে অনেক। ব্যবসাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা ১৬/১৭ জন নারী বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি।
আরআর জুয়েলারী এন্ড টয়েসের বিক্রয় প্রতিনিধি সবিতা রাণী দাস বলেন, মহিলাদের পছন্দের পণ্যের দোকানে তরুণীরা বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে থাকলে কেনা বেচা ভালো হয়। আমরা ১২/১৩ জন বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে এখানে নিয়োজিত রয়েছি।
মেলাকে ঘিরে আশপাশের ইজিবাইক, রিক্সাচালক, অটোচালক, হেলপারসহ ইলেক্ট্রিশিয়ান, ডেকোরেটরের মালিক সবারই আয় বেড়েছে। মেলার জন্য সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চলছে দেদারসে। বছরের অন্য সময় অভাব অনটনে চললেও মেলার সময় তাদের আয় বাড়ছে। সংসারের অভাব অনটন গুছাতে মেলার সময় তারা দিন রাত কাজ করছেন। মেলার বাইরে ফুটপাতের শতাধিক দোকানে পাঁচ শতাধিক মানুষ কাজ করছেন।
ইরাণী মেলামাইনের ব্যবস্থাপক তপণ চৌধুরী বলেন, খন্ডকালীন চাকরিতে যোগদানকারী তরুণ-তরুণীরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করেন। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য তাদের বিকল্প নেই। তাই বাণিজ্য মেলায় খন্ডকালীন চাকরির জন্য তরুণ-তরুণীর প্রয়োজনীয়তা বেশি।
মেলাকে ঘিরে গুতিয়াবো, বাঘবেড়, পিতলগঞ্জ, মধুখালী, শিমুলিয়া, ফুলবাড়িয়া, হাটাবো, কুলিয়াদি, হিরনাল, মাঝিপাড়া, পলখান, গোয়ালপাড়াসহ আশপাশের দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাড়ি ভাড়ায় মালিকরা আয় করছেন। ৫ হাজার টাকা মূল্যের বাসা ভাড়া এখন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৪০ টাকা নিয়েও তারা আয় করছেন। এব্যাপারে বাড়ির মালিকরা বলছেন, বাণিজ্য মেলা চলবে একমাস। বাসা খালি করে পুনঃরায় ভাড়া দিতে সময় লাগবে আরো একমাস। সব মিলিয়ে ৩/৪ মাসের ভাড়া হিসেবে টাকা আদায় করা হয়। ক্ষতি পোষাতেই বাসা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
শিমুলিয়া এলাকার ইজিবাইক চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, মেলার সময় গাড়ি চালিয়ে তিনি প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা আয় করেন। বরুনা এলাকার সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালক রিপন মিয়া বলেন, মেলার সময় গাড়ি চালিয়ে তিনি প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার টাকা আয় করেন।