আজ মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পূর্বাচল মেরিন সিটিতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

রূপগঞ্জ উপজেলায় আবাসন প্রকল্প ‘পূর্বাচল মেরিন সিটি’তে বালু ভরাট কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসক এবং জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালকের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওই কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

রোববার (২৮ আগস্ট) জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহিন এম রহমান, অ্যাডভোকেট তানজিম রাফিদ ও ব্যারিস্টার আশিকুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন।

ওই রুলে বলা হয়, রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের সাতটি মৌজায় মেরিন গ্রুপ অব কোম্পানি লিমিটেডের বালু ভরাট বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

আদেশের পর আইনজীবী মাহিন এম রহমান বলেন, ‘পূর্বাচল মেরিন সিটি’তে বালু ভরাট কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ভিসি), রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও), রূপগঞ্জের সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসি ল্যান্ড) ও রূপগঞ্জের অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসক, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে এ বিষয়ে তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

মাহিন রহমান আরও বলেন, রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের ৭টি মৌজায় ফসলি জমি, নালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাভূমি, বনভূমি, ভিটেমাটি রয়েছে। সেখানে প্রায় ৫৪ হাজার মানুষ বসবাস করে। সেখানে প্রশাসনের নাকের ডগায় আড়াই হাজার বিঘা জমিতে অবৈধভাবে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। এতে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

রূপগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম তমিজ উদ্দিন রাজু, মো. আবদুল কাইয়ুম দেওয়ান, মো. জাকির হোসেন, রায়হান শরীফ, মো. সমোর হোসেন, মো. বোরহানউদ্দিন ভুঁইয়াসহ ১২ জন আগস্টের প্রথম সপ্তাহে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন।

রিটে ভূমি সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, কৃষি সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি), রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার, সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসি ল্যান্ড), রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও মেরিন গ্রুপ অফ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমবি)’কে বিবাদী করা হয়।

ওই রিট বলা হয়, রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের ৭টি মৌজায় আড়াই হাজার বিঘা জমিতে ‘অবৈধভাবে’ মাটি ফেলে কৃষি জমি, পুকুর, জলাশয় ভরাট করে সেখানে গড়ে উঠেছে মেরিন গ্রুপ অব কোম্পানি লিমিটেডের মেরিন সিটি নামের আবাসন প্রকল্প। ওই এলাকায় প্রায় ৫৪ হাজার মানুষ বসবাস করে। এর ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের বড় আমদিয়া, কালনি, জিন্দা, উলপ, টেকদাসেরদিয়া, হিরনাল মৌজা এলাকায় এই আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। স্থানীয়দের কৃষি জমি, পুকুর, খাল-বিল, জলাশয় ও বাড়িঘর ‘অবৈধভাবে’ দখল করে সেখানে মাটি ফেলে ভরাট করা এবং স্থানীয় ভূমি মালিকদের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা না বলে জমিতে মাটি ফেলে ভরাট করে জবরদখল করা হচ্ছে বলে জাতীয় ও স্থানীয় কয়েকটি দৈনিকে এ বিষয়ে খবরও প্রকাশিত হয়। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় ১২ জন বাসিন্দা হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ মাটি ভরাটের ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।