নিজস্ব প্রতিবেদক
বিউটি পার্লারে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে নারীদের পাচার করতো একটি চক্র। ওই চক্রের পাঁচ নারীসহ ৬ জনকে আটক করেছে র্যাব। এসময় পাচারকারী সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তিন নারীকে। তাদের এক নারী মানব পাচারকারী কাছ থেকে পালিয়ে আসে। আরেকজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক।
শুক্রবার ৫ আগস্ট দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা এ তথ্য জানান। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। এ সময় পাচারকারীদের কাছ থেকে পাচারের কাজে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে।
আটকৃতরা হলেন, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের ঝুমা আক্তার (২৮) ও শারমিন আক্তার (২৯), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের রাবেয়া আক্তার (২৭) নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মিনারা ওরফে রিনা (৩৫), সিদ্ধিরগঞ্জের কমলি খাতুন (৩২) ও শাহজামাল (৪০)।
র্যাব-১১’র অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, কয়েকদিন আগে এক নারীকে বিউটি পার্লারে কাজের কথা বলে যশোর বেনাপোল বর্ডারে নিয়ে যায় চক্রটির সদস্যরা। এক পর্যায়ে তাকে পার্শবর্তী দেশ ভারতের কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে ওই নারী বুঝতে পারেন তাকে পার্শ¦বর্তী দেশে পাচার করা হচ্ছে। তিনি যেতে রাজি না হলে পাচারকারীরা তাকে ব্যাপক মারধর করেন। এক পর্যায়ে মানবপাচারকারী ওই চক্রের কাছ থেকে কৌশলে পালিয়ে এসেছেন সেই নারী। পরবর্তীতে তিনি বাসে করে যশোর থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকার ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীসহ দুইজনকে উদ্ধার করা হয়। তাদের রাতেই পাচারের পরিকল্পনা ছিল ওই চক্রটির। এসময় মানব পাচারকারী চক্রের পাঁচ নারী সহ ৬ জনকে আটক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ১১’র অধিনায়ক বলেন, প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকৃতরা জানিয়েছে, উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে সহজ-সরল অভাবী অভাবি নারীদেরসহ বিভিন্ন পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের উচ্চ বেতনে চাকুরির দেয়ার নামে একত্রিত করে রাখা হতো সিদ্ধিরগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকার একটি বাসায়। পরে সেখানে থেকে তাদের রাতের আধারে নিয়ে যাওয়া হয় যশোর বেনাপোলে। সেখান থেকে কেউ যেতে রাজী না হলে তাকে মারধর করতো চক্রের সদস্যরা। এরপর পাঠিয়ে দিতো ভারতে। এর আগেও আরও অনেক নারীকে পাচার করেছে চক্রটি তবে কতজনকে পাচার করা হয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার র্যাবের অভিযানে যাদের উদ্ধার করা হয়েছে সেই নারীদের সাথে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তারা জানান, চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় নারীদের সাথে পরিচিত হয়। পরে তাদের সাথে সর্ম্পক গড়ে তুলতে খোঁজখবর রাখে। এর পর্যায়ে সুযোগ বুঝে চাকুরি প্রলোভন দেখায়। এরপর ছবি তুলে। তাদেরকেও ৬০ হাজার টাকার বেতনের ভারতের বিউটি পার্লারে চাকুরির কথা বলে নিয়ে আসে চক্রের সদস্যরা। র্যাব তাদের উদ্ধার করার পর বুঝতে পারেন চক্রের সদস্যরা তাদের অবৈধ ভাবে ভারতে পাঠিয়ে সেখানে বিক্রি করে দিতো। এ চক্রের সদস্যদের শাস্তি দাবি করেন তারা। আটকৃতদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মানব পাচার আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি এ চক্রের অন্য সদস্যদের আটকের চেষ্টা চলছে জানিছে র্যাব কর্মবর্তা তানভীর মাহমুদ পাশা।