আজ রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১ সাজুর বিরুদ্ধে ১ ডজন মামলা

সদর উপজেলার চাঁনমারী বস্তির নারী মাদক বিক্রেতা সাজু বেগমকে মাদকদ্রব্য হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করেছে নারায়ণগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিপ্তরের একটি দল। মঙ্গলবার সকার ১০টার দিকে চাঁনমারী বস্তির সদ্য নির্মিত নাসিম ওসমান মসজিদের সামনে থেকে সাজু বেগম ও তার এক সহযোগী সাব্বির রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের দখল থেকে অর্ধলক্ষ টাকা মূল্যের ১’শ পুরিয়া হেরোইন জব্দ কওে প্রশাসনের লোকজন।

নারায়ণগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিপ্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. ফজলুল হক খানের নেতৃত্বে চাঁনমারী এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। অভিযানে আরো ছিলেন সংস্থাটির সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান, সিপাই মো. বোরহান উদ্দিন, আমিনা খাতুন, রেজাউল করিম, আমিরুল ইসলাম ও মো. শাকিল হোসেন।

এই ঘটনায় পরিদর্শক মো. ফজলুল হক খান বাদী হয়ে আটক সাজু বেগম ও তার সহযোগী সাব্বির রহমানের বিরুদ্ধে মাদক আইনে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তার সাজু বেগম জামালপুরের সরিষাবাড়ী কামরাবাদ গ্রামের আ. মান্নান ও জরিনা বেগমের মেয়ে। সে বহুদিন থেকেই একাধিক স্বামীকি নিয়ে চাঁনমারী বস্তি এলাকায় বসবাস করে আসছে। তার বর্তমান স্বামীর নাম হাফিজুর রহমান এবং সাব্বির রহমান মুন্সিগঞ্জের লৌহজং পাঁচগাও গ্রামের বড় মিয়া বাড়ীর মো. খোকনের ছেলে।
প্রশাসন ও স্থানীয়রা বলছেন, সাজু বেগম ও তার সহযোগীরা একটি সংঘবদ্ধ পেশার মাদক সরবরাহকারী এবং বিক্রেতা। তারা দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অবৈধ মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করে থাকে।

জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা সংবাদচর্চাকে জানিয়েছেন, আলোচিত নারী মাদক বিক্রেতা সাজু বেগম এবারই প্রথম নয়, ২০১২ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত ১৫ থেকে ১৬ বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাজু বেগমকে বিভিন্ন পরিমানের মাদক হেরোইন, ইয়াবা ট্যাবলেট, গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু প্রতিবারই সে জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়। শুধু সাজু বেগমই নয়, নারী মাদক বিক্রেতা মোসা. রুমি, হাসি বেগম, সাজেদা বেগম ও মৌসুমীও একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বের হয়ে তারা সেই মাদক ব্যবসায় ফিরে আসে।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সাজু বেগমের বিরুদ্ধে ১২টিরও অধিক মাদক মামলা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায়। ২০১২ সালে প্রথম আলোচনায় আসে সাজু বেগম। সে বছর ফতুল্লা পুলিশের এক দল চাঁনমারী এলাকায় বিরোধী অভিযান পরিচালনা করলে সাজুসহ তার স্বামী বিপ্লব, রুবেলসহ আরো বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের উপর অতর্কিত হামলা করে পুলিশ সদস্যদের গুরুতর আহত করে। ওই ঘটনায় ফতুল্লা পুলিশের সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) মো. আলী আজম বাদী হয়ে সে বছর ৮ মে থানায় একটি মামলা করেছিলেন। এর পরের বছর ২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এই নারী মাদক বিক্রেতার বিরুদ্ধে গাঁজা বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়, ২০১৭ সালের ১১ মে সাড়ে ৫ কেজি গাঁজা, একই বছর ৬ আগষ্ট গাঁজা বিক্রির অপরাধে, ২০১৮ সালের ২১ জুন চাঁনমারী থেকে ২’শ ৫০ গ্রাম গাঁজা, একই বছর জুলাইয়ের তিন তারিখ ৫’শ গ্রাম গাঁজা, ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারী ২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ২’শ ৫০ গ্রাম গাঁজা, ওই বছর মার্চের ৫ তারিখ ১’শ ৫০ পুরিয়া হেরোইন ও ২’শ ৫০ গ্রাম গাঁজা, ৬ জানুয়ারী ২০২০ সালে এক কেজি গাঁজা ও মাদক বিক্রির ২৬ হাজার ২’শ ৪০ টাকা, ২০২১ সাল ২১ এপ্রিল ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ২’শ ৫০ পুরিয়া হেরোইন, একই বছর সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ ৬’শ গ্রাম গাঁজা নিয়ে, এ বছরের এপ্রিলের ৫ তারিখ ১’শ পুরিয়া হেরোইন ও মাদক বিক্রির ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৫’শ ৩০ টাকাসহ আলোচিত নারী মাদক বিক্রেতা সাজু বেগমকে চাঁনমারী ও পাশর্^বর্তী এলাকাগুলো থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। স্থানীয় ও প্রশাসনের লোকজন বলছে, সাজু বেগমের বিরুদ্ধে যেমন একাধিক মামলা রয়েছে, ঠিক একইরূপভাবে তিনি একাধিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তারা স্বামীরাও অবৈধ এই মাদক বিক্রির পেশায় জড়িত। বিখ্যাত এই নারী মাদক বিক্রেতার স্বামীদের মধ্যে রয়েছে, বিল্লাল হোসেন, চাঁনমারী বস্তি এলাকার কাসুর ছেলে বিপ্লব এবং তার বর্তমান স্বামী হাফিজুর রহমান।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চঁনমারী বস্তির চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী লেবু মিয়ার স্ত্রী রুমী, খোরশেদের স্ত্রী হাসি বেগম, হাফিজুরের স্ত্রী সাজু বেগম, আলাউদ্দিনের স্ত্রী মোসা. সাজেদা বেগম, জেলেখা বেগম, সজীবের স্ত্রী নাজমা বেগম, শাহজাহানের মেয়ে মৌসুমি বেগম, সুমন মিয়ার স্ত্রী মোসা. লাকী বেগম, লাকী বেগমর বোন মোসা. ময়না বেগম, খোকা মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম, কাজলের স্ত্রী নাজমা বেগম, হালিমের মেয়ে ও সাজুর স্ত্রী পারভীন, কামালের স্ত্রী মোসা. সেফালী আক্তার, ময়না, ইতি ও বৃষ্টিরা দীর্ঘদিন থেকেই একে অপরের সাথে সমন্বয় করে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মাদকের রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের মধ্যে অত্যন্ত চতুর ও পুলিশ ফাঁকি দেওয়ার নিত্য নতুন কৌশল উদ্ভাবক হাসি বেগম, মোসা. রুমী, সাজু বেগম, মৌসুমি ও সাজেদা বেগম।