আজ মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘বিএনপির শত্রু এখন বিএনপি’

টি.আই আরিফ

‘বিএনপির শত্রু এখন বিএনপি’, ‘আপন ঘরে যার শত্রু তার শত্রুতা করার জন্য বাইরের কারো প্রয়োজন নেই’ প্রভৃতি কথা জাতীয় কিংবা উপজেলা নির্বাচন এলেই কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা বলে থাকেন। সরকারী দলে থাকলে কম বলেন এবং বিরোধী দলে থাকলে বলার ঘনত্ব বেড়ে যায়। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বলেছেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভয় পাই না। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমরা রাখি। আমাদের নেতাকর্মীরাও কাউকে ভয় পায় না। তারা ভয় পায় যখন দলের ভেতরে কেউ ষড়যন্ত্র করে। আমাদের সদস্য সচিব মামুন মাহমুদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এটা আমরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারব না। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এই দুঃসাহস কেউ না দেখায়।’

এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলনে হামলা করে দলটির একাংশের নেতাকর্মীরা। সেই ঘটনার পরে ফতুল্লা -সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি মোঃ গিয়াস উদ্দিন, কাউন্সিলর ইকবাল সহ একাধিক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের আবেদন করা হয়। যারা আবেদন করে তারাও বিএনপির নেতা। নাসিক নির্বাচনের পর এড. তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বহিষ্কারের পেছনে অধ্যাপক মামুন মাহমুদ কলকাঠি নাড়ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপির সাবেক এমপিরাও মামুন মাহমুদের উপর ক্ষুব্ধ। তারা কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন তার বিরুদ্ধে। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ,সদর-বন্দর এলাকায় বিএনপি নেতাদের মধ্যে চরম কোন্দল ও গ্রুপিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আতাঁত। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে বিএনপির হাইকমান্ডকে। কাজ তিনটির মধ্যে রয়েছে থানা সম্মেলন, জেলা ও মহানগর বিএনপির সম্মেলন , দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত। গিয়াস -মামুন দ্বন্দ্বে এমপি প্রার্থী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারী পদ নিয়ে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। বিএনপির একাংশ গিয়াস -মামুনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ নিয়ে জেলা বিএনপির মধ্যে খেলা শুরু হয়েছে। দলের ভেতরে এবং বাইরে নানা কথা হচ্ছে। হচ্ছে নানা বিশ্লেষণ। জেলা বিএনপির পদ প্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে লবিং শুরু করে দিয়েছেন। সুত্রের খবর আবেদন করলে বিএনপিতে ফিরতে পারবেন এড.তৈমূর আলম খন্দকার। তৈমূরের প্রতিপক্ষ তা চাচ্ছে না। আড়াইহাজারে নজরুল ইসলাম আজাদের প্রতিপক্ষ তার নিজ দল বিএনপির সাবেক এমপি আঙ্গুর, রূপগঞ্জে কাজী মনিরুজ্জামানের প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান দীপু ভুঁইয়া, সোনারগাঁয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নানের প্রতিপক্ষ তার নিজ দল বিএনপির সাবেক মন্ত্রী রেজাউল করিম। গেল নির্বাচনে তারা পরাজিত হয়েছেন।

অপরদিকে সদর-বন্দর,ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে গেল সংসদ নির্বাচনে অন্য দলের দুই নেতাকে প্রার্থী করেছিলো বিএনপি। তারা সফল হতে পারেনি। এবার বিএনপি কি সেই ভুল করবে সেই প্রশ্ন এখন তৃণমূলের। এছাড়া মামুন মাহমুদের উপর হামলার পর থেকে বিএনপির কিছু নেতা নিরব, কিছু নেতা পলাতক, গিয়াসপুত্রদের নামে মামলা, কাউন্সিলর আশার নামে মামলা। অনেকে ঘর হতে বের হচ্ছে না। কেউ কেউ বিদেশ চলে গেছে। কেউ কেউ আর নতুন করে বিতর্কে জড়াতে চাচ্ছে না। এমন অবস্থায় কারা থাকবে নেতৃত্বে? কাদেরকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাবে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত ১৪ মে চাষাঢ়ায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের কিন্তু এখন যে অবস্থা, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাই না। আমাদের সামনে আগানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আপনারা এখনও ঘরে বসে না থেকে সবাই আসেন রাজপথে নেমে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে ভাবে চাচ্ছেন আমরা সে ভাবে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে এই সরকারকে পতন ঘটনার জন্য কাজ করি। আমাদের নেতা কি বলেছেন দেশ যাবে কোন পথে , ফয়সালা হবে রাজপথে।
রাজনৈতিক সচেতন মহলের মতে ,নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাদের মধ্যে সহজে কোন্দল থামছে না। তাদের মধ্যে ব্যক্তি হিংসা বাড়ছে। তারা নিজেরাই এখন নিজেদের শত্রু। তারা আন্দোলন করে কিছু করতে পারছে না। দলীয় সমাবেশে এক পক্ষ গেলে আরেক পক্ষ যায় না।