আজ মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সিদ্বিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলন পন্ড

স্টাফ রিপোর্টার

হামলা ও ভাংচুরে পন্ড হয়ে গেছে সিদ্বিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলন। কয়েক দফার এ হামলায় জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, থানা বিএনপির আহ্বায়ক, যুগ্ম-আহ্বায়কসহ ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ১৫ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ওই কমিউনিটি সেন্টারের প্রধান ফটক, চেয়ার টেবিল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন এবং কাউন্সিলর ইকবালের সমর্থিতরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই সময় সম্মেলনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারধর ও লাঠিপেটা করা হয়। এছাড়াও কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলন শুক্রবার সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, বিশেষ অতিথি ছিলেন বেনজির আহমেদ টিটুসহ কেন্দ্রীয়ও জেলা বিএনপি নেতারা। সকাল থেকে জড়ো হতে শুরু করে থানার ১০টি ওযার্ডের নেতাকর্মীরা । এ সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেভেন মার্ডার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এবং মামলার চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পাওয়া ইকবালের নেতৃত্বে কিছু লোক এসে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় তারা কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলে যায়।

সম্মেলনে আসা নেতা-কর্মীরা জানায়, দীর্ঘদিন যাবত সিদ্ধিগঞ্জ থানা বিএনপির কোন কমিটি নেই। কয়েকদিন পর পর পরিবর্তন হওয়া এবং একাধিক আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই বিচ্ছিন্নভাবে চলছিলো সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কার্যক্রম। ফলে বর্তমান জেলা বিএনপি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির উদ্যোগ নেয়। যার সম্মেলন হওয়ার কথা ছিলো আজ। সাড়ে ৯ টায় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সমর্থক থানা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজের নেতৃত্বে একটি মিছিল সভাস্থলে প্রবেশ করার পরপরই তাদের উপর চড়াও হয় গিয়াসউদ্দিন বলয়ের নেতা-কর্মীরা।

এসময় নাসিক কাউন্সিলর ও সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের একান্ত সহযোগী ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে একটিু গ্রুপ একাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। তাদের হামলায় জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, থানা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল হাই রাজু, সদস্য সচিব শাহ আলম, যুগ্ম-আহ্বায়ক রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজসহ ১০ নেতাকর্মী আহত হয়।

কাউন্সিলর ইকবাল এক সময় বিএনপির সমর্থিত হিসেবে কাউন্সিলর হলেও গত নির্বাচনে মেয়র আইভির হয়ে কাজ করেন বলে থানা বিএনপির সদদ্য সচিব শাহ আলম অভিযোগ করেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, সম্মেলনকে বাধাগ্রস্থ করতে কাউন্সিলর ইকবালের নেতৃত্বে তার লোকজন এ হামলা চালিয়ে ৮-৯ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে। এ সময় তারা কমিউনিটি সেন্টারে ব্যাপক ভাঙচুর করে। কমপক্ষে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। শাহ আলম অভিযোগ করেন, ইকবাল আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছে। তিনি সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের লোক।

সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের কর্মী-সমর্থকরা জানায়, সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন ও তার অনুগত কোন নেতাকর্মীদের জানানো হয়নি। এমনকি তাদেরকে কোন কমিটিতে রাখা হবে না বলে তারা অবগত হয়েছেন। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের জানানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠে। তারা আজ সকাল থেকেই সম্মেলনস্থলে অবস্থান নেন এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের তারা বিষয়গুলো অবহিত করবেন বলে জানান।

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি জানান, একটি মহলের অতর্কিত হামলার কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিই বর্তমানে শান্ত রয়েছে।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ জানান, ওরা গত নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে, আওয়ামী লীগ ঘেষা। পরিকল্পিতভাবে সম্মেলনকে পন্ড করতে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী কায়দায় লাঠি-সোটা ও রড দিয়ে বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মীদের উপর হামলা করা হয়েছে।

নাসিক ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। তবে থানা বিএনপির সদস্য সচিব যদি আমার নামে এসব অভিযোগ করে থাকেন তবে আর কি করা। এখানে নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত দলীয় পদ পদবি থেকে। কোন কর্মসূচি থাকলেও নেতাকর্মীদের জানানো হয় না। আজ থানা বিএনপির সম্মেলনের ব্যাপারেও নেতাকর্মীদের কাউকে জানানো হয়নি। এতে নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।

সিদ্বিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা সঠিক নয়। বিএনপির দুই গ্রুপে চেয়ার দখলকে কেন্দ্র করে হাতহাতির ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।