আজ বৃহস্পতিবার, ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নারীদের পছন্দের শীর্ষে প্রসাধন সামগ্রী

এম.এ মোমেন:

বাণিজ্য মেলায় নারীদের পছন্দের শীর্ষে প্রসাধন সামগ্রী। যেমন পছন্দ তেমন বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। দেশিয় প্রসাধনের চেয়ে বিদেশী প্রসাধনের চাহিদা ও দাম বেশি। ক্রেতারাও ভালো মানের প্রসাধনী ক্রয় করতে ঝুঁকছেন। প্রসাধন সামগ্রীর স্টলগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় জমে। তবে বিকেল থেকে জমজমাট হয়ে উঠে এসকল স্টল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাণিজ্য মেলার স্টলগুলোতে বিদেশী লিপস্টিক, নেলপলিশ, অলিভয়েল, পারফিউম, সো ও বডি ওয়াশ, হেয়ার স্টাইলার, ফেসওয়াশ, শ্যাম্পু, হেয়ার ড্রায়ার, লোশন, লিপলাইনার, ফেসিয়াল ক্লিনিং মিল্ক, পিউরিফাই ক্লিনিং জেল, ক্রিম এন্ড লোশন, কন্ডিশনার, আই মেকআপ, ক্রিম, ফাউন্ডেশন, হেয়ার রিমুভার, পাউডার, ফেসিয়াল স্ট্রিমার স্প্রে, আয়না, চিরুনী, অরিজিন, ফেস মেকআপ, কনসিলার, ফেস পাউডার, হেয়ার কালার, হেয়ার জেল, মেহেদী, প্রাইমার, মাসাজার, স্ক্র্যাভার, হেয়ার অয়েল, মেকআপ ব্রাশ, এক্সেসরিজ, ফেসিয়াল মাস্ক, কিট, ফোমিং ক্লিনজার, স্কিন হোয়াইটেনার, ফেসিয়াল স্পা, ক্লিনজিং প্যাড, আইশ্যাডো, মাসকারা, কাজল, আইলাইনার, আই-মেকআপ বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। তবে আইশ্যাডো, আইলাইনার, মাস্কারা, কাজল, লিপস্টিকের চাহিদা বেশি। চোখের নিচের ফোলা ভাব এবং কালোদাগ উঠাতে আইব্যাগ বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।

একদিকে প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহার বাড়ছে। অন্যদিকে নিম্ন মানের প্রসাধন সামগ্রীতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকিও আছে। সেকারণে ভালো মানের ও বিদেশী প্রসাধনের উপর নারীরা নির্ভর করছে। দেশের প্রসাধন সামগ্রীতে ভেজাল হয়ে থাকে। খাঁটি ও আসল প্রসাধনী হিসেবেই বিক্রেতারা প্রচার করে থাকেন। ক্রেতারাও ওয়েবসাইট ভিজিট করে অর্ডার দেন। কিন্তু নাম সর্বস্ব প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের পণ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাই দিনদিন বিদেশী প্রসাধন সামগ্রীর প্রতি নারীরা ঝুঁকছেন।

প্রসাধন সামগ্রীর সাজসজ্জা নারীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। সৌন্দর্যবর্ধনে নারীরাও প্রতিনিয়ত প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করছেন। পোশাকের সঙ্গে রঙ মিলিয়ে নারীরা প্রশাধন সামগ্রীর রঙ ব্যবহার করে থাকেন। কেউ কেউ ব্রু প্লাক ও দাঁত চিকন করেও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেন। এছাড়া কোন কোন পুরুষও হেয়ার জেলসহ সাজসজ্জার প্রসাধন ব্যবহার করে থাকেন। এসকল স্টলে সেই সকল সামগ্রীসহ জুতা ও পরচুলা বিক্রি হচ্ছে। প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করে নিজেকে সর্বদা সুরভিত করে রাখায় নারীত্বের এক আনন্দ রয়েছে। কেউ কেউ হাত-পা ও নখ সর্বদা রাঙিয়ে রাখার জন্য মেহেদী ক্রয় করছেন।

সেলিম আজম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ অনুজ বলেন, নিম্ন মানের ও কম দামের প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করে কেউ কেউ এলার্জি ও ক্যান্সার ঝুঁকিতে পড়ছেন। সেকারণে ভালো মানের ও বিদেশি প্রসাধনের উপর নারীরা ঝুঁকছেন। মেলায় তা বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।

ডিএইচসি জাপান স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস শান্তা বলেন, নারীদের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য প্রসাধন সামগ্রী ত্বককেও সুন্দর উজ্জ্বল করে তোলে। তাই মেলার স্টলে ও অনলাইনে ক্রেতাদের প্রসাধন সামগ্রীর অর্ডার নিয়ে চাহিদা মতো পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।

জামদানি উদ্যোক্তা ও প্রসাধন সামগ্রীর ক্রেতা আছমাউল হোসনা দিপা বলেন, দাম একটু বেশি হলেও নির্ভিঘ্নে তা ব্যবহার করা যায়। সেকারণে আমি বিদেশি পণ্য স্টল থেকে ক্রয় করেছি। দেশিয় প্রসাধন সামগ্রীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়তো আছেই।

নারায়ণগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে আসা গৃহবধূ লতা আক্তার বলেন, শাড়ি ও জামার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনীয় প্রসাধন সামগ্রী ক্রয় করেছি। মান সম্মত ও বিদেশি প্রসাধন সামগ্রীর উপর বাঙালী নারীরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তবে দেশীয় প্রসাধন সামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।
মর্ডান হারবাল গ্রুপের নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ক্যামিকেল ব্যবহৃত প্রসাধনের চেয়ে হারবালের তৈরি প্রসাধন সামগ্রীর চাহিদাও রয়েছে বেশি। সেকারণে হারবালের প্রসাধন সামগ্রী বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।

রঙ্গন হারবালের বিক্রয় প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম বলেন, হারবালের প্রসাধন সামগ্রীতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই দিনদিন হারবালের সামগ্রী ক্রেতাদের মধ্যে সাড়া ফেলছে। মেলায় এর চাহিদাও রয়েছে।

মেমোরি হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার ফারুকুল ইসলাম বলেন, রঙিন প্রসাধন সামগ্রীতে লেট, আর্সেনিক, মিকেল, মার্কারি ইত্যাদি ভারি ধাতু ব্যবহার হয়ে থাকে। তাতে ব্যবহারকারীদের শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যাথা, বমি, মাথা ব্যথা, ডায়রিয়া, ক্যান্সার, হাড়ক্ষয়, স্নায়ু, লিভার ও কিডনীরোগের কারণ হতে পারে।