আজ বৃহস্পতিবার, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত বাণিজ্য মেলা

এম.এ মোমেনঃ
বাণিজ্য মেলা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে ওঠেছে । জমে ওঠেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম এ আসর। সাপ্তাহিক ছুটির দ্বিতীয় শুক্রবার ক্রেতা-দশনার্থীদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন। সকাল থেকেই দেশী-বিদেশী ক্রেত-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সমাগমে চিরচেনা জৌলুসে জমে ওঠে এবারের মেলা। তবে মেলায় মাস্ক ব্যবহার করতে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপর কঠোর নজরদারি রয়েছে ।

সকলেই মাস্ক পড়ে মেলায় প্রবেশ করেছে । তবে তাদের কেউ কেউ প্রবেশের পর মাস্ক খুলে ফেলছে । আবার কেউবা থুতনিতে, কেউবা গলায় মাস্ক ঝুলিয়ে রাখে । এমন দর্শনার্থী মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে আসা মাইনুল হক বলেন, মাস্ক পড়লে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় । তাই মাস্ক খুলে ফেলেছি ।

মেলা প্রাঙ্গন ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করে। কেউ নিজস্ব পরিবহনে, কেউ বিআরটিসি বাসে কেউবা সিএনজি চালিত অটো রিকশায় মেলায় এসেছেন। তাদের অনেকেই পরিবার, আত্বীয়-স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে মেলায় এসেছেন। তবে এবারে মেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়।

অধিকাংশই ক্রেতা-দর্শনার্থী-ই অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করেছে। তাতে মেলার প্রবেশদ্বারে ঠেলাঠেলি কিংবা চাপের মুখে কাউকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। অন্যদিকে করোনার নতুন ভাইরাস ওমিক্রনের প্রভাব এড়াতে বাধ্যতামূলক মেলা প্রাঙ্গনে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা হয়েছে । সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশিকা পালনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে মেলার আয়োজক কমিটি।

মেলায় খাবার স্টলগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, এবাবের মেলায় ভোজন রসিক দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি। ফলে আইসক্রিম, কফি ও খাবারের দোকানগুলোতে সকাল-দুপুর ও রাত পর্যন্ত লাগাতার বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই দীর্ঘ সময় দাড়িঁয়ে অপেক্ষা করে খেতে হচ্ছে। তবে অন্যান্য বছরের মেলার তুলনায় এবারের মেলায় মানসম্মত খাবার ও দাম সীমিত হওয়ায় স্বাচ্ছন্দে উপভোগ করছেন ভোজন রসিকরা।

এছাড়াও মেলায় সর্বাধুনিক ডিজাইনের দেশী-বিদেশি শো-পিস, কাপড়, অলংকার, তৈজসপত্র, কুটির শিল্প, ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল ফোন ও কয়েদীদের উৎপাদিত পণ্যতে মজেছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু ফার্ণিচার, মোটরবাইক, ফ্রিজ ও টিভির স্টল গুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থী বেশি থাকলেও বিক্রি হচ্ছে কম। তবে স্টলের শোরুমের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছে দর্শনার্থীরা ।

নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া থেকে আসা চাকুরীজীবি রফিকুল আমিন বলেন, ছুটির দিন পেয়ে পরিবারবর্গ নিয়ে মেলায় এসেছি । বৃহত্তর খোলামেলা জায়গা নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে মেলার আয়োজন হওয়ায় প্রচুর লোকজনের সমাগম হয়েছে । মেলাটি উপভোগ করেছি, ভাল লেগেছে ।

আশুলিয়া থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রেহেনা আক্তার বলেন, সুযোগের অভাবে এতদিন মেলায় আসতে পারিনি । কিন্তু পত্রিকা-টেলিভিশনে মেলার সংবাদ দেখে মন মানছিলো না । তাই শুক্রবার মেয়ে-ছেলেকে নিয়ে চলে আসছি ।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে আসা গৃহবধূ সামিরা বেগম বলেন, মেলার আয়োজন ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা ভাল থাকায় সারাদিন নির্বিগ্নে মেলা উপভোগ করেছি ।

নরসিংদীর পলাশ থেকে আসা ব্যবসায়ী শাইনুল ইসলাম রাতুল বলেন, যানজটের কারণে দেড় ঘন্টা পর মেলায় প্রবেশ করেছি । মেলার আনন্দ ধূলায় আর যানজটে বিলীন হয়ে গেছে । তবে মেলার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা ও আয়োজন দেখে মুগ্ধ হয়েছি ।

ফাহিম এন্ড সোহানা কোকারিজের বিক্রয় প্রতিনিধি ফাহিম মিয়া বলেন, কোম্পানির প্রচারের স্বার্থে স্টল দেয়া হয়েছে । আমাদের স্টলে নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে তৈরি মানসম্পন্ন কোকারিজ পণ্য রয়েছে । কোম্পানির প্রচারের স্বার্থে স্বল্প দামে এ পণ্যগুলো বিশেষ ছাড়ে বিক্রয় করা হচ্ছে । আশানুরূপ বিক্রয় হয়েছে ।

আক্তার ফার্নিচারের দুলাল রায় বলেন, নান্দনিক ডিজাইনের ফার্নিচার দিয়ে স্টল সাজিয়েছি । মেলায় প্রচুর দর্শনার্থী আছে কিন্তু ক্রেতা কম । তবে অনেকেই পরে ক্রয় করবেন। তাই শো-রুমের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষা উপকরণ বিক্রয় স্টল পেনটিল এর বিক্রয় প্রতিনিধি শাহরিয়ার আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্টলে বিভিন্ন ধরনের কলম, পেন্সিল, জ্যামিতি বক্স ও রংতুলিসহ শিক্ষা উপকরণ রয়েছে । ক্রেতাদের কাছে প্রচুর চাহিদাও রয়েছে । আর বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর ।

মডার্ণ হারবাল পণ্যের বিক্রয় প্রতিনিধি নুসরাত জাহান বলেন, হারবাল পণ্য প্বার্শপ্রতিক্রিয়া মুক্ত হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে । আগামী দিনগুলোতে আরো ভাল বিক্রয় হবে বলেও জানান তিনি ।

ভারতের কাশ্মীর থেকে আসা কাশ্মীর ক্রাফ্টের বিক্রয় প্রতিনিধি জাকের আহমেদ বলেন, এবারের মেলায় চাহিদার চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে । বিশেষত কাশ্মীরি শাল, শাড়ি আর থ্রি-পিস সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ।

মেলার আয়োজক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই মেলা পরিচালনা করা হচ্ছে । দর্শনার্থীদের মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । মাস্কবিহীন মেলায় ঘুরাফেরা করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হবে ।