আজ রবিবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়

এম.এ মোমেন,

ঢাকা আন্তার্জাতিক বাণিজ্য মেলায় গতকাল ৮ জানুয়ারি শনিবারও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। যানজট নিরসনে নেওয়া হয় নতুন উদ্যোগ। মেলার প্রাঙ্গনে ধূলাবালিতে পানি ছিটানো হয়। অধিকাংশ দর্শনার্থীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না। মাস্ক ছাড়া মেলার গেইটে প্রবেশ কঠোর করা হয়। তাতে মেলার বাহির থেকে ওয়ানটাইমের মাস্ক কিনে অনেকেই মেলায় প্রবেশ করেন। তাদের কেউ কেউ মেলায় প্রবেশ করেই মাস্ক খুলে ফেলেন। মেলা কর্তৃপক্ষ গেইটে
হেন্ডস্যানিটাইজার রাখলেও দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই তা ব্যবহার করেননি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেলায় সামাজিক দুরত্ব মানার বালাই নেই। গা ঘেঁষে ঘেঁষে ধাক্কাধাক্কি করেই দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করছেন। সামাজিক দুরত্ব কেউ মানছেন না। স্টলগুলোতেও একই অবস্থা। ক্রেতা বিক্রেতাদের যেন মাখামাখি অবস্থা। সেখানেও সামাজিক দুরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানছে না। দর্শনার্থীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব। দর্শনার্থীরা বাধ্য হয়ে মাস্ক ক্রয় করে মেলায় প্রবেশ করছেন। প্রবেশ করেই মাস্ক কেউ পকেটে ভরছেন। কেউবা ময়লার ঝুড়িতে ফেলছেন। আবার কেউবা লোকালয়েই ফেলে দিচ্ছেন। মেলার পরিচ্ছন্নকর্মীরা সেসকল মাস্ক কুড়িয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলছেন।

গত ৭ জানুয়ারি শুক্রবার বাণিজ্য মেলায় ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। দর্শনার্থীদের কার আগে কে আসবেন এমন প্রতিযোগিতায় মেলার আশপাশের সড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। ভোগান্তিতে পড়ে দর্শনার্থীরা। দুর্ভোগের যেন কমতি ছিল না। আর দর্শনার্থীদের এ ভোগান্তি, দুর্ভোগ নিরসনে যানজট সৃষ্টির প্রদান কারণ মোটরসাইকেল, রিক্সা, অটোরিক্সা ও গাড়ি চালকদের অসচেতনতাকে দায়ী করা হয়। পরে মেলা কর্তৃপক্ষ নতুন উদ্যোগ নেয়। সেক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের আলাদা পার্কিং ব্যবস্থা, রিক্সা, অটোরিক্সা, ভ্যান মেলার আশপাশের সড়কে প্রবেশ নিষেধ করা হয়। এছাড়া যেখানে সেখানে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মিনিবাসসহ সকল পরিবহনের অবৈধভাবে পার্কিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যানজট নিরসনে নতুন করে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার মেলার আশপাশে কিংবা তিনশ’ ফিট সড়কেও তেমন যানজট ছিল না। মেলায় প্রবেশ টিকিটের ইজারাদারদের পক্ষে মেলার প্রাঙ্গনে ধূলাবালিতে দফায় দফায় পানি ছিটানো হয় বলে আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের পক্ষে রিটন প্রধান জানিয়েছেন।

মেসার্স হেলাল এন্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবারের তুলনায় শনিবারে দর্শনার্থী ও ক্রেতার সমাগম ছিল কম। অনেকেই হয়তো আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারই মেলায় আসবেন।
পারটেক্স ফার্ণিচারের প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ এজেএম ফয়সাল বলেন, আগের বাণিজ্য মেলায় মানুষের ঢল নেমে আসতো। গত শুক্র ও শনিবার ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগমন ছিল উল্লেখযোগ্য।

গোল্ডেল ইনফিনিটি ইলেকট্রিক লিমিটেডের সিনিয়র অফিসার মাহবুবুল আলম বলেন, শুক্র ও শনিবারের বিক্রিতে স্টল মালিকরা খুশি। গত কয়েকদিনের তুলনায় দু’দিন বিক্রিও হয়েছে প্রচুর।

কাশ্মীরি শাল ক্রেতা ডেমরার সাবিহা সুলতানা বলেন, নিয়মিত মার্কেটের চেয়ে কম দামেই তিনি বাণিজ্য মেলা থেকে শাল ক্রয় করেছেন। নতুন স্থানে আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় এসে প্রাকৃতিক ও গ্রামীণ পরিবেশে এসে তিনি অন্যরকম অনুভুতি অনুভব করেছেন বলে জানান।

রূপগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, মেলার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় ও আশপাশের এলাকায় যানজট নিরসনে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে তারা এ দায়িত্ব পালন করছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু বলেন, মেলার দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে যানজট নিরসন ছিল আমাদের চ্যালেঞ্জ। পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে যানজট নিরসন আমরা সফল হয়েছি। মাসব্যাপী এ ব্যবস্থা থাকবে।

বাণিজ্য মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মেলায় দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে হবে। কোন ক্রমেই এখানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা যাবে না। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সকলকে সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট চালু করে দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা হবে।