সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
প্রথমবারই ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন উত্তপাড়ার সেনাপতি। ব্যাটে-বলে এক না হওয়ায় সে খেলায় আউট হন। এরপর অনেক পেলেও একটা আফসোস রয়ে গেছে ওসমান পরিবারের অনুসারীদের মাঝে। যা থেকে মাঝে মধ্যে ফাঁকা বুলি ছাড়ে অনেকে। কেউ বলেন, প্রয়োজনে ওই চেয়ারে আমি বসবো। কারও অনুসারী আবার নেতাকে উসকে দেয়ার চেষ্টা করেন। এবারও অনেক খেলা হচ্ছে। শুরুটা তিনি করেছিলেন তিন বন্ধুকে দিয়ে। তারা তিনজন আইভীর জনপ্রিয়তার কাছে পরাজিত হয়ে এখন চুপ । সবশেষে বিএনপির কয়েক নেতাকে মাঠে নামিয়েছেন। দল নির্বাচন না করলেও তারা এখন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী।
আবার গেল ১২ ডিসেম্বর রাজধানীতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কর্তৃক আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘কবে নামবেন, নারায়নগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে খেলে যাবো’ বলে কড়া হুশিয়ারি দিয়েছেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন তারিখ দেন (সময়), কবে নামবেন। আমরা জানি, কখন কি করতে হয়। আপনাদের কপাল ভালো, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা একটা কথা বার বার বলেন ‘ধৈর্য্য ধরো’, আমরা ধৈর্য্য ধরেই আছি।
এখন রাজনীতি সচেতন মহলের প্রশ্ন শামীম ওসমান বিএনপির সাথে খেলবেন নাকি বিএনপি নেতাদের দিয়ে নাসিকে খেলাবেন।
সেলিনা হায়াৎ আইভী এ পর্যন্ত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। প্রতিটি নির্বাচনেই প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। দু’টি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে আর একটিতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতাকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন আইভী। ২০০৩ এ নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে তেমন খেলা না হলেও পরের দু’টি সিটি নির্বাচনে নানা রঙের খেলা দেখেছে সচেতন মহল। তাদের মতে, আইভীকে ঠেকাতে যেমন এক পক্ষ নতুন নতুন খেলার অবতরণ করেছে আবার আইভীকে জেতাতেও আরেক পক্ষ ছিলো তৎপর। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি তৈমূর আলম খন্দকার কে প্রার্থী করলেও ভোটের কয়েক ঘন্টা আগে মধ্য রাতে তাকে সরিয়ে নেয় দলের হাই কমান্ড। সূত্র জানায়, এটাও ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত একটা খেলা। যে খেলায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি সহ স্থানীয় অনেকেই অংশ নেন। তারা শামীম ওসমানকে প্রভাবশালী এবং ১৯৯৬ তে তার এমপিকালে নারায়ণগঞ্জের অবস্থার কথা চিন্তা করে নয়া কৌশল অবলম্বন করে। বিএনপির হাই কমান্ডকে স্থানীয় বিএনপি নেতারা বুঝাতে সক্ষম হন, শামীম ওসমান মেয়র হলে আবারও ছিয়ানব্বইয়ের অবস্থা তৈরী হবে এখানে। যে কারনে তৈমূরকে সরিয়ে নেয় দল।
এবার আর এসব পুরনো খেলা খেলতে নারাজ আইভীর প্রতিপক্ষ। তারা দুই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে নতুন নতুন খেলা বের করছে। প্রথমে মাঠ পর্যায়ে দল এবং দলের বাইরে থেকে নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে আইভীকে ঘায়েল করতে চেয়েছিলেন। প্রথম সিটি নির্বাচনে যেমন বিএনপি নেতারা তাদের প্রার্থী তৈমূর আলমকে সরিয়ে দিয়েছিলেন এবার সেই খেলার নুতন ধারা তৈরী করেছেন উত্তরপাড়ার সেনাপতি। গতবারও তা খানিকটা চেষ্টা করেছিলো তারা। অভিযোগ উঠেছিলো বিএনপির প্রার্থীকে দুই কোটি টাকা দেয়ার। সেই অভিযোগ বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান অস্বীকার করলেও ওসমান পরিবারের পক্ষ থেকে কোন রা’ করা হয়নি। সূত্র জানায়, এবার বিএনপি প্রার্থীকে শেষ টার্গেট করবে ওসমান পরিবার। হেভিওয়েট কোন প্রার্থীকে তার অনুগতরা আড়ালে সমর্থন দিয়ে আইভীর ভোট নষ্ট করবে।
যদিও গত ১৩ ডিসেম্বর মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর জেলা বিএনপির আহবায়ক তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন উত্তরপাড়ার সেনাপতির সাথে আমার যোগাযোগ নেই। নির্বাচন হলো একটা কৌশল। সুত্রের খবর কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়েও সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে। তাদের অনুগত কিছু বিতর্কিত প্রার্থী এবারও মাঠে । সরাসরি তাদেরকে নাও করতে পারছেন না তারা। এ নিয়ে হচ্ছে নানা খেলা।