সারাদেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হ্রাস করতে আবারও লকডাউন চাইলো স্বাস্থ্য অধিদফতর। তা না হলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সমন্বয় রেখে যেকোন জনসমাগম বন্ধ করাসহ ১২টি সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
মঙ্গলবার ১৬ই মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে জরুরি সভা হয়। ওই সভায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সংক্রমণ রোধ করার জন্য বৈঠকে ১২টি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এসব প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
সংক্রমণ রোধে প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো হলোঃ
১. সম্ভব হলে সম্পূর্ণ লকডাউনে যেতে হবে। না হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় রেখে যেকোনো জনসমাগম বন্ধ করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
২. কাঁচাবাজার, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, শপিংমল, মসজিদ, রাজনৈতিক সমাগম, ভোট অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, রমজান মাসের ইফতার মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান সীমিত করতে হবে।
৩. যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, সেগুলো বন্ধ রাখতে হবে। অন্যান্য কার্যক্রমও সীমিত করতে হবে।
৪. যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা (বিসিএস, এসএসসি, এইচএসসি, মাদ্রাসা, দাখিলসহ) নেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
৫. কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
৬. যারা রোগীদের সংস্পর্শে আসবে,তাদর কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. বিদেশ থেকে বা প্রবাসী যারা আসবেন, তাদের ১৪ দিনের কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে এই ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
৮. আগামী ঈদের ছুটি কমিয়ে আনা যেতে পারে।
৯. স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আইন আরও জোরালোভাবে কার্যকর করতে হবে।
১০. পোর্ট অব এন্ট্রিতে জনবল আরও বাড়াতে হবে এবং নজরদারির কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
১১. সব ধরনের সভা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে করার উদ্যোগ নিতে হবে।
১২. পর্যটন এলাকায় চলাচল সীমিত করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র এবং এনসিডিসি শাখার পরিচালক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন সাংবাদিকদের বলেছেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে এই সুপারিশগুলো মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এখানে যেহেতু পলিসির নানা সিদ্ধান্তের ব্যাপার রয়েছে, সরকার পরবর্তীতে যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতর বাস্তবায়ন করবে।
দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার বেশ কমে এলেও গত কয়েকদিন ধরে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর আগে গত শনিবার সারা দেশে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবাইকে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৮৬৫, মৃত্যু ১১ : দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ১ হাজার ৮৬৫ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা ৯২ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের তথ্য জানানো হয়েছিল গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর। ওইদিন ১ হাজার ৮৭৭ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তবে আগের দুই দিনের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু কমেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দুই দিনই ২৬ জন করে মারা যান। গত এক দিনে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২৪ হাজার ২৭৫টি। এতে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ হাজার ৫১০ জন। সবশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৫২ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৬০৮ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৯ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১১ জনের মধ্যে আটজন ছিলেন পুরুষ ও তিনজন নারী। সবার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে আটজন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব ও তিনজন পঞ্চাশোর্ধ্ব। এর মধ্যে আটজন ঢাকা এবং একজন করে চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় ও ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।