নিজস্ব প্রতিবেদক: সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো ফের শ্রমিক অসন্তোষ, গাড়ী ভাংচুর, রাস্তায় আগুন ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ। শনিবার ( ৯ জানুয়ারি) সকাল ৮’টা থেকে বকেয়া বেতন ও বন্ধ হওয়া ফ্যাক্টরী খুলে দেওয়ার দাবিতে প্রায় ৭’হাজার শ্রমিক আদমজী ইপিজেডের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-শিমরাইল সড়ক সকাল থেকে অবরোধ করে। এতে ব্যাস্ততম নারায়ণগঞ্জ-চিটাগাংরোড-আদমজী ইপিজেড সড়ক সকাল থেকেই যান বাহন ও সাধারণ মানুষদের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষদের। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এসময় দু’টি গাড়ি ভাংচুর ও রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরাতে পুলিশ জলাকামান দিয়ে পানি ছিটিয়ে ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, আদমজী ইপিজেডের কুনতং এ্যপারেলস লিমিটেড (ফ্যাশন সিটি)’র শ্রমিকদের চার মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। সেই বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা সকাল ৮’টা থেকে ইপিজেডের সামনের রাস্তায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলো। এসময় মালিকপক্ষের কর্মকর্তারা ২’জানুয়ারী তাদের পাওনা পরিশোধ করার আশ^াস দেয়। কিন্তু শ্রমিকরা ঐ কর্মকর্তাদের আশ^াসে আশ^স্ত না হয়ে উক্তস্থানে অবস্থান করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের উপর আনসার ও আদমজী ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীরা লাঠিচার্জ শুরু করলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-শিমরাইল সড়ক অবরোধ করে। এসময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে আনসার ও আদমজী ইপিজেডের নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। পরবর্তীতে তারা নারায়ণগঞ্জ- আদমজী- শিমরাইল সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় আগুন জ¦ালিয়ে ও দু’টি পরিবহন (নং-ঢাকা মেট্টো-গ-৩৯-০১৪৮, ঢাকা মেট্টো-ট-১৫-২৩৩২) ভাংচুর করে। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের উপর জলকামান ও ১৬’রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিতে বাধ্য হয়। এমসয় শ্রমিকরা পুলিশদেরকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ চলাকালে সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয় আদমজী ইপিজেডের আনসার ও নিরাপত্তা প্রহরীরা। এসময় আয়শা আক্তার নামে এক নারী সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ভেঙ্গে ফেলে ইপিজেডের নিরাপত্তা প্রহরীরা। পুলিশের জলকামান ও টিয়ার সেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। তবে থেমে থেমে দুপুর ২’টা পর্যন্ত পুলিশের সাথে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলে। সংঘর্ষে পারভেজ (২৩), জহির (২০), জরিনা (৩৫), মনোয়ারা (২৪), মনির (২৮), নাঈম (২৪), হাসান (২৫), মনি (২৮) সহ প্রায় ২৫’জন শ্রমিক আহত হয়েছে বলে জানায় শ্রমিকরা। তাদেরকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে। শ্রমিকরা জানায়, আদমজী ইপিজেডের কুনতং এপারেলস লিমিটেড (ফ্যাশন সিটি) গত বছরের ১০’আগষ্ট হঠাৎ দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করে ফ্যাক্টরী বন্ধ করে দেয়। সেই বন্ধ পরবর্তীতে ক্রমশঃ বৃদ্ধি করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে বন্ধ হওয়ার পরেও শ্রমিকদের ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে বেতন পরিশোধ করে আসছিলো মালিক পক্ষ। তার ধারাবাহিকতায় আমাদের বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ আগামী ২০’জানুয়ারি বেতন দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
রাস্তা অবরোধের খবর পেয়ে ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ এর সিনিয়র এ এসপি আইনুল হক, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান পিপিএম’র নের্তৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করেও ব্যর্থ হয়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ এর সিনিয়র এএসপি আইনুল হক জানায়, আমরা আগামী ২০’ তারিখে মালিকপক্ষ থেকে শ্রমিকরদের বকেয়া বেতন আদায় করে দেয়ার আশ্বাস দিলে তারা এতে রাজি না হয়ে ফের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তায় আগুন জ¦ালালে ও গাড়ি ভাংচুর করলে পুলিশ তাদের উপর জলকামান ও ১৬’রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। এতে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি। শ্রমিক অসন্তোষসহ সার্বিক বিষয় সংবাদকর্মীরা আদমজী ইপিজেড এর জিএম মোঃ আহসান কবিরের সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন। তার অফিসে সাংবাদিকদের প্রবেশ করেতে দেয়নি ইপিজেডের নিরাপত্তা প্রহরীরা। এছাড়া সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করতে আসা সাংবাদিকদের বাধা দেয় নিরাপত্তাকর্মীরা।