আজ শনিবার, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পাট রপ্তানিতে শুল্ক না বসানোর দাবী

সংবাদচর্চা অনলাইনঃ

পাটের রপ্তানির উপর শুল্ক না বসানোর দাবীতে এবং পাটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত রুখে দেয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২৯ আগষ্ট) সকালে নগরীর চাষাড়ায় বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশেনের নিজস্ব কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশন (বিজেএ)’র ভাইস চেয়ারম্যান আরজু ভুইয়া বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে পাট নিয়ে একটি চক্রান্ত চলছে। স্বাধীণতার পর থেকে যে চক্রান্ত চলছে তা আজও চলমান। কোনো মতেই পাট রপ্তানিতে শুল্ক বসানো যাবে না, যদি বসানো হয় তাহলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। আমাদের ব্যাংক লোন আছে, পাট ও ব্যাংক ঋণের দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। একটি গোষ্ঠি আজ ষড়যন্ত্র করে সোনালী আশের দাম কমানোর চক্রান্ত করছে। নিশ্চয়ই এখানে কোনো একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য। শীঘ্রই সুচিন্তিত মতামত ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ চক্রান্ত রোধ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা যারা এখানে আছি (বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশন) সবাই পারিবারিক সুত্রে পাটের ব্যবসা করে আসছি। প্রত্যেকের বাবারা এ ব্যবসা করেছে। আমরাই নারায়ণগঞ্জের পাট ব্যবসাটাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি। নারায়ণগঞ্জের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, কৃষকদের স্বার্থে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পাটমন্ত্রীর প্রশংসা করে আরজু ভুইয়া বলেন, দীর্ঘদিন পর বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে আমরা একজন পাটমন্ত্রী পেয়েছি। গাজী গোলাম দস্তগীর বীর প্রতীক সাহেব আজকে আমাদের পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। মন্ত্রী মহোদয় গতবার যে ভুয়সী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছি এবং পাটমন্ত্রীকে অভিনন্দনও জানিয়েছি।

পাট মন্ত্রী, পাট সচিব এবং ডিডি তারা সম্মিলিতভাবে পাটের পড়ন্ত বাজারকে যেভাবে উর্ধ্বগতি করে কৃষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। ওনারও দায়িত্ব আমাদের নারায়ণগঞ্জের প্রাচ্যের ডান্ডির ঐতিহ্য ধরে রাখার। তিনি আরও বলেন, পাটের মূল্য যখন নিম্নগামী ছিলো, তখন এই জুট মিলস এসোসিয়েশন তথা বিজেএমসি ও বিজেএস পাটের মুল্য বৃদ্ধি করতে পারে নি, তারা কৃষকদের কোনো সাপোর্ট দিতে পারে নি। আমরাই তথা এ বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশন (বিজেএ) কৃষকদের সাপোর্ট দিয়েছি। একসময় আমরা ২৪ থেকে ৩০ লক্ষ বেল পাট পণ্য রপ্তানী করতাম। ধারাবাহিকভাবে আমরা আজকে ১০ লক্ষ বেলে নেমে এসেছি। পাট যতদিন বেঁেচ থাকবে ততদিন এ ১০ লক্ষ বেল পাট রপ্তানি হবেই। বিশ্বের কোথাও উৎপাদিত হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র পাট উৎপাদন কারী দেশ। তাই বাংলাদেশকে অবশ্যই বিশ্ব বাণিজ্যের নিয়ম অনুসারে, বিশ্ব বাণিজ্যের চাহিদা মিটানোর জন্য পাট রপ্তানি করতেই হবে।

সরকারকে এ কথা চিন্তা করতেই হবে, যে আমরাই একমাত্র পাট উৎপাদন কারী দেশ এবং বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের সদস্যরাই এ জুট রপ্তানি করে থাকে। একটি গোষ্ঠি চায় পাট রপ্তানি বন্ধ হোক, পাটের দাম কমে যাক, কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হোক আর এ গোষ্ঠির সদস্যরা লাভবান হোক। তাই এ গোষ্ঠিটির চক্রান্তকে প্রতিহত করার জন্যই আজ আমাদের এ সভা ও সংবাদ সম্মেলন উল্লেখ করেন তিনি। আরজু ভুইয়া বলেন, আজ ২৫ টি জুট মিল বন্ধ হওয়াতে ১২ লক্ষ বেল পাট ক্রয় করবে না তারা। তাহলে এ পাট কে ক্রয় করবে। বিজেএস ও বিজেএমসি বলে তারা নাকি ৬০ লাখ বেল ক্রয় করে, এটা সম্পূর্ণ ভুল। ওনারা ক্রয় করে ৫০ লক্ষ বেল এবং আমরা ক্রয় করি ১০ লক্ষ বেল। যতবার রপ্তানি বন্ধ হয়েছে ততবারই কেরি ওভার হয়েছে। ৮৪ সালে ষড়যন্ত্র করে বন্ধ করেছে, বিএনপির আমালে বন্ধ করেছে এবং আওয়ামীলীগের আমলেও বন্ধ করেছে।

এ একটি গোষ্ঠিই বারবার পাট রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। যখনই রপ্তানি বন্ধ হয় তখনই তাদের পাটের দাম দেশের বাইরে এবং দেশে কমে যায়। তাহলে রপ্তানি বন্ধ করে লাভ টা কি? কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কৃষক পরের বছর আর পাট উৎপাদন করে না। তাদের এখানে একটা চাল, তারা ব্যাংক থেকে, সরকারের থেকে জবরদস্তি মূলকভাবে ভর্তুকি আদায় করে। যেমন করোনাকালীণ সময়ে বিজেএমসি সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে সুবিধা আদায় করেছে, ঠিক একইভাবে তারা বর্তমানে আবার সরকারকে ভুল বুঝিয়ে চাপ প্রয়োগ করছে। সরকারকে বুঝতে হবে বিজেএমসি যে পাট ক্রয় করতো, সে পাট তারা ক্রয় করছে না, তাহলে এ পাট কোথায়? তিনি বলেন, সবকিছু নিরুপন করে এখন সঠিক সিদ্ধান্ত হবে সরকারকে।

কোনোভাবেই পাটের রপ্তানি শুল্ক আদায় করা সমুচীন হবে না। আমাদের অনুরোধ সরকারের কাছে, বিজেএমসি ও বিজেএস এর যে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ড তার বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ পর্যন্ত বিজেএমসি স্পিনার্স মিলের তালিকা আছে ১২০টা চলে মাত্র ৭০-৮০ টি। বিজেএমএ এর মিল আছে ২৪টি অথচ তাদের ১২টি মিলও চলে না। আজ পাটের মূল্য হঠাৎ বৃদ্ধি হওয়ার কারণ হলো স্পিনার এসোসিয়েশনের ১০টি সদস্য এ পাটের মুল্য বৃদ্ধি করেছে। তারা এক বছরের পাট ক্রয় করেছে দুই মাসে। তারা আজ বাজারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টির পায়তারা করছে। সরকারের উন্নয়নকে ব্যাহত করার জন্য তাদের এই উদ্যোগ। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের বর্তমান কমিটির সদস্য মো. নুরুল হোসেন, কমিটির সদস্য মো. লিয়াকত হোসেন, সদস্য রাজিব প্রসাদ সাহা, রেদোয়ান ভুইয়া, মো. রিসার হোসাইন, মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, দিলীপ কুমাির দেব, অনুপ কুমার হোর, মো. আবুল খায়ের, স্বপন কুমার রায়, মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. কামাল উদ্দিন বাচ্চু, মো. জজ মিয়া, গনেশ চন্দ্র সাহা, মো. লোকমান মোল্লা।