আদালত প্রতিবেদক:
দীর্ঘ ৪ মাসের বেশি সময়ের পর নারায়ণগঞ্জের আদালতে আবার স্বাভাবিক বিচারকাজ শুরু হয়েছে। বুধবার থেকে আদালতে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বিচারক, আইনজীবী ও আইনাঙ্গনের সাথে জড়িত ব্যাক্তিরা। তবে, মহামারী করোনা ভাইরাসে সর্তকর্তা ও সুরক্ষা নিয়েই আইনজীবীদের কাযক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেছে।
দেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। তার সঙ্গে মিল রেখে সর্বোচ্চ আদালতসহ দেশের সব আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। সরকারের সাধারণ ছুটির সঙ্গে আদালতের সাধারণ ছুটিও কয়েক দফা বাড়ানো হয়। এক মাসের বেশি সময় বিচারকাজ বন্ধ থাকার পর ‘ভার্চুয়াল আদালতে’ শুনানির জন্য গত ৯ মে সরকার ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার’ অধ্যাদেশ জারি করে। এরপর প্রায় তিন মাস ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে চলছিল আদালতের বিচারকাজ। তাও সব মামলার বিচার চলছিল না। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে আর সব অফিস খুলে দেওয়ার পর আইনজীবীরাও স্বাভাবিক আদালত চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
বেশকিছুদিন ভার্চুয়াল কোট পরিচালনা করলেও স্বাভাবিক কোর্ট চালুর জন্য করেছেন মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ। একযোগে সারাদেশে দীর্ঘদিন সভা-সমাবেশের ফলেই আদালতে স্বাভাবিক কার্যকমের আদেশ এসেছে উচ্চ আদালত থেকে এমনটাই দাবী সাধারণ আইনজীবীদের। তারা বলছেন দীর্ঘ আমাদের আন্দোলনের ফলেই আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেছেন, সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসের কারনে থমকে গিয়েছিলো। দীর্ঘদিন কোর্ট বন্ধ ছিলো, তারপর সীমিত আকারে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হলো। কিন্তু বিচারপ্রার্থী মানুষ ন্যায় বিচার থেকে অনেকটা দুরে ছিলো। আমরা আইনজীবীরা, এডভোকেট মমতাজ উদ্দিন মেহেদীর নেতৃত্বে নিয়মিত কোর্ট পরিচালনার দাবী জানিয়েছি। আমাদের দাবীর যুক্তিকতা দেখে নিয়মিত কোর্ট পরিচালনার আদেশ এসেছে। এর কারনে যেমন আইনজীবীরা উপকৃত হয়েছে, তেমনি বিচারপ্রার্থীরা ন্যায় বিচার পাবে। এতে আমরা খুশী।
তিনি সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে বিচারপ্রার্থীদের সহযোগীতা করতে হবে।
জেলা আইনজীবী সমিতি সাবেক সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, করোনা ভাইরাসের কারনে সাধারণ মানুষের মতো আমরা সংকিত। তারমাঝেও আমরা দৈনন্দিন কাযক্রম পরিচালনা করতে হয়। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ। এটি বন্ধ থাকলে অনেক বিচারপ্রার্র্থী ভোগান্তিতে থাকে। আমাদের আন্দোলনের ফলে স্বাভাবিক কোর্ট চালু হয়েছে এটি ভালো দিক। তবে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের সচেতন থাকবে, যেনো নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা সংক্রমিত না হই। সুরক্ষা এবং সচেতনতায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হাবিব আল মুজাহিদ পলু বলেছেন, দীর্ঘ ৪মাসের বেশি সময় নিয়মিত আদালত বন্ধ ছিলো। অনেক আইনজীবী কষ্টে দিন কাটিয়েছে। বিশেষ করে জুনিয়র যে আইনজীবীরা আছে তাদের খরচ চালানোর একমাত্র পথ হচ্ছে বিভিন্ন মামলা পরিচালনার মাধ্যমে কিন্তু স্বাভাবিক কোর্ট বন্ধ থাকায় তাদের অনেক সমস্যা হয়েছে। তেমনি বিচারপ্রার্থীরাও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বর্তমানে স্বাভাবিক কোর্ট চালু হওয়ায় আমরা আইনজীবীরা যেমন খুশি, তেমনি বিচারপ্রার্থীরা পেয়েছেন স্বস্থি। তিনি, সকল আইনজীবীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোর্ট পরিচালনা করা আহবান জানান।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাকির হোসাইন বলেছেন, ভার্চুয়াল কোর্টটা অনেক আইনজীবী বুঝতো না। অনেকদিন অবসর বা বেকার থাকার পর স্বাভাবিক কোর্ট চালু আইনজীবীরা স্বস্থি পেয়েছি। আমরা আইনজীবীরা খুশী। আর স্বাভাবিক কোর্টটা হলো আন্দোলনের ফসল। সারাদেশে আইনজীবীরা আন্দোলন না করলে সহজে নিয়মিত কোর্ট চালু হতো না।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট নূরুল হুদা বলেছেন, স্বাভাবিক কোর্ট চালু হওয়াতে আইনজীবীরা খুশী। তবে আইনজীবীদের করোনা ভাইরাস ঠেকাতে সচেতনতা ও সুরক্ষা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট আলী আহাম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকার কারনে আইনজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা নানা সমস্যা ছিলো। সারাদেশের সঙ্গে আমরাও নানা আন্দোলন করেছি, যার ফলশ্রুতিতে আন্দোলন সার্থক হয়েছে। এতে আইনজীবী সহ আইনাঙ্গনের সকলেই খুশী। তিনি, সকলকে করোনা ভাইরাসের বিষয়ে সচেতন থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানান।
সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা প্রার্দুভাব নিয়ন্ত্রনে আছে। আমরা আন্দোলন করেছিলাম নিয়মিত কোর্টের জন্য। নিয়মিত কোর্ট পরিচালনা শুরু হয়েছে। আইনজীবীরা স্বস্থি প্রকাশ করেছে।
জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা এডভোকেট খোরশেদ আলম বলেছেন, আন্দোলনের প্রতিফলন এটি। কোর্ট স্বাভাবিক পরিচালনা করায় সাধারণ আইনজীবীরা খুবই খুশী। যারা নিয়মিত কোর্ট পরিচালনার জন্য আন্দোলনের অংশগ্রহন করেছিলেন তাদের শ্রদ্ধাসাথে সাধারণ আইনজীবীরা স্মরণ রাখবে।