আজ রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইউনিয়ন এলাকায় মশা যন্ত্রনা

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ

২০১৯ সালের ২৮ জুলাই ফতুল্লার বক্তাবলীর ছমিরনগর এলাকায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শান্ত নামের এক যুবক মারা যান। শান্ত কোরিয়ার যাওয়ার জন্য ইপিএস লটারী পেয়েছিলেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে টনক নড়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের। এরপর রাতারাতি অনেক ইউনিয়নে মশা মারার ফগার মেশিনসহ ওষধ কেনা হয়। ওই বছর বিভিন্নএলাকায় যৎ সামান্য মশার ওষধ দেয়া হলেও চলতি বছর এখন পর্যন্ত কোন খবর নেই বলে জানা গেছে। এতে ফের ডেঙ্গু আতংকে দিন কাটাচ্ছেন ইউনিয়ন এলাকার বাসিন্দারা।

চেয়ারম্যানদের অভিযোগ, সরকারিভাবে কোন বরাদ্দ না থাকায় তারা মশক নিধনে কাজ করতে পারেন না। তবে সচেতন মহলের মতে, কোন কোন ইউনিয়নের আয় অনেক। তারা ইচ্ছা করলে নিজেদের টাকায়ই অনেক সেবা দিতে পারে।

সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় মশা মারতে বরাদ্দ থাকলেও ইউনিয়নের বেলায় তা নেই। আর এ জন্য ইউনিয়নভুক্ত এলাকাগুলোতে মশক নিধনে কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। সূত্র মতে, জেলায় সিটি করপোরেশন রয়েছে একটি। পৌরসভা রয়েছে ৪টি। এছাড়া বাদ বাকী সব ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়ন এলাকায় মানুষের বাস কম নয়। প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতি বছর বাজেট হয়। সেই বাজেটে নানা উন্নয়ন কাজের জন্য বরাদ্দ থাকে। তা থেকে বছর জুড়ে খরচ হয়। ইউনিয়নগুলোর নিজস্ব আয় যেমন রয়েছে তেমনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, এলজিএসপিসহ নানা প্রকল্পের মাধ্যমেও অর্থ পায়। এরপরও মশক নিধনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যুগ যুগ ধরে অবহেলিত হয়ে আসছে ইউনিয়ন এলাকায়। মশক নিধনে কোন প্রকার বরাদ্দ দেয়া হয় না আর চেয়ারম্যানরাও নিজস্ব আয় থেকে এ বিষয়ে কোন প্রকল্প পরিচালনা করে না। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ইউনিয়ন এলাকায় মশক নিধনে সরকার থেকে কোন বরাদ্দ দেয়া হয় না। তবে ইউয়িন পরিষদ চেয়ারম্যান চাইলে উপজেলা থেকে এ বিষয়ে বরাদ্দ নিতে পারে।

কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম সাইফ উল্লাহ বাদল বলেন, মশক নিধনে আমরা নিজ উদ্যোগে আলোকিত কাশিপুর নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে মশার ওষুধ স্প্রে করছি। সরকারী কোনো বাজেট নেই। উপজেলা পরিষদের কাছে মশক নিধনের বিষয়ে সহযোগীতা চাইলে, কোনো বাজেট নেই বলে জানান তারা। এ বিষয়টি আপনারা পত্রিকায় লিখেন, লিখলে জনগনের উপকার হবে।
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু বলেন, মশক নিধনে সরকারী কোনো বাজেট নেই। তবে আমরা নিজ উদ্যোগে স্প্রে করাচ্ছি।

আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি বলেন, উপজেলা থেকে আমাদেরকে একবার মশার ওষুধ দেয়া হয়েছিলো, যা প্রায় শেষের পথে। আমরা আগামীকাল আবার মশার ওষুধের জন্য আবেদন করবো। যদি তারা দেয় তাহলে আমাদের ফগার মেশিন আছে, তা দিয়ে স্প্রে করা হবে।

বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম শওকত আলী বলেন, আমরা ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে যথাযথ ব্যবস্থা ও জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করেছি। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে গতবছর আমাদের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মেশিন দেয়া হয়েছে এবং ওষুধ দেয়া হয়েছিল। এবার তারা ওষুধ দিলেও আমরা ছিটাবো না দিলেও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ওষুধ ছিটানো হবে।

এনায়েতনগর ইউপি সচিব মো. দিদার হোসাইন বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব প্রতিটি ওয়ার্ডের মেম্বারদের নির্দেশ দিয়েছেন ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে জনসচেতনতা বাড়াতে। তাছাড়া দুটি ফগার মেশিন কেনা হয়েছে। ফগার মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ স্প্রে করা হয়েছে, বৃষ্টি কমলে আবার স্প্রে করা হবে। তবে এনায়েতনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দিদার হোসাইনের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ বছর এ ইউনিয়নের কোথাও মশক নিধনের কার্যক্রম দেখা যায়নি।

বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, উপজেলা থেকে আমরা কোনো ফান্ড পাইনা। তাছাড়া কোনো নির্দেশনাও আমাদের দেয়া হয় নাই। যদি কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় তাহলে কি করবেন জানতে চাইলে বলেন, এখনো আমার ইউনিয়নে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কোনো তথ্য নেই। ঈদের পর উপজেলা থেকে সহায়তা করা হোক বা না হোক আমরা ব্যবস্থা নিবো।

ধামগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ বলেন, ভাই এখন ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছি তো, অন্য কোনো প্রস্তুতি নেই নাই। ঈদের পরে নিবো। এসময়ের মধ্যে কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে কি করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এলাকা পরিচ্ছন্ন, এমন কিছু হবে না।