আজ মঙ্গলবার, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কঠোর লকডাউনে রূপগঞ্জ ইউনিয়ন

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়নে কঠোরভাবে লকডাউন চলছে। আজ (১২ জুন) শুক্রবার লকডাউনের প্রথম দিন মানুষ নিজেরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) দিবাগত রাত ১২ টা থেকে আগামী ২১ দিন রূপগঞ্জ ইউনিয়নে লকডাউন থাকবে।
দেখা গেছে, রেড জোন ঘোষিত এলাকায় কয়েকটি স্তরের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ রয়েছে স্বেচ্ছাসেবকও। পাশাপাশি সবকিছু তদারকিতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের টিম। রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদুল হাসান জানান, ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলো পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অবরুদ্ধ থাকবে। প্রশাসনের বিশেষ অনুমতিপত্র কিংবা কাজের যথার্থতা প্রমাণ ছাড়া কোনো যানবাহন, পরিবহন বা মানুষ চলাচল করার সুযোগ নেই। করোনার মহামারী থেকে বাঁচতে রূপগঞ্জ ইউনিয়নে রেড জোন এলাকার সব মানুষকে এই নিয়ম মানতে হবে।সরেজমিনে দেখা যায়, রূপগঞ্জ ইউনিয়নের ইছাপুরা, ভক্তবাড়ি, জাঙ্গীর, রূপগঞ্জ গ্রাম, মুশুরী, টানমুশুরী, বাগবেড়, দক্ষিনবাগ, ছনি, টেকনোয়াদ্দা, গুতিয়াবো, মধুখালী, পিতলগঞ্জ, শিমুলিয়া, ব্রাহ্মণখালী, হারারবাড়ি, পশিসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা পড়ে রয়েছে। বন্ধ রয়েছে প্রধান সড়কের দুই পাশসহ অলিগলির সব প্রতিষ্ঠান। পুরো দমে বন্ধ রয়েছে দোকানপাটসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন ভুঁইয়া জানান, রূপগঞ্জ ইউনিয়নের ‘রেড জোন’ ঘোষিত ৯টি ওয়ার্ডের চিত্র পাল্টে গেছে। প্রথম দিকে কিছু লোক লকডাউন ভেঙে রাস্তায় নানা অজুহাতে চলাচল করলেও বর্তমানে সবাই বাঁচার তাগিদে লকডাউন মেনে চলছে। কেউ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে লকডাউন। বাঁচার জন্য এ লকডাউনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে রূপগঞ্জ ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকার রাস্তাঘাট সম্পূর্ণ ফাঁকা রাখা হচ্ছে। লোকজনও অনেকটা সচেতন হয়েছেন।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনেই রূপগঞ্জ ইউনিয়নে লকডাউন চলছে। মানুষ আগেরবার চোর-পুলিশ খেললেও এখন নিজেরাই লকডাউন পালন করছেন। এরপরও যারা বাইরে আসছেন তাদের বুঝিয়ে ঘরে ফেরানো হচ্ছে।
ইউএনও মমতাজ বেগম আরও জানান, এই ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ৪৫ হাজার। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৭৪ জন। আক্রান্ত ৭৪ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩৫ জন এবং মারা গেছেন একজন। রোগী বেশি হওয়ায় রূপগঞ্জ ইউনিয়নকে রেড জোন অর্থাৎ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগেও রূপগঞ্জ লকডাউনে ছিল। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এগিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। ওই ইউনিয়নের অধিবাসীদের খাদ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কাজ করছে। এছাড়াও, ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বারদের সঙ্গে সমন্বয় করে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সর্বাত্মক লকডাউন নিশ্চিতকরণে সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভ্রাম্যমান আদালতের মনিটরিং চলছে। তিনি আরও বলেন, রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের জন্য টেলিমেডিসিন, নমুনা সংগ্রহে আলাদা দল গঠন, হোম ডেলিভারি সার্ভিস, স্বাস্থ্যকর্মী, মৃতের সৎকার ব্যবস্থাপনা রয়েছে। এর বাইরে সম্পূর্ণ সেবা নিশ্চিতের জন্য উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ দল কাজ করছে। নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে কঠোর ভূমিকায় রয়েছে প্রশাসন।
প্রসঙ্গ, করোনা সংক্রমণের ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়নকে লকডাউনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) দুপুরে উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত জরুরী সভায় এ ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) দিবাগত রাত ১২ টা থেকে আগামী ২১ দিন রূপগঞ্জ ইউনিয়নে লকডাউন থাকবে।