বিশেষ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে একটি প্যানেলের প্রার্থীদের অভিযোগের অন্ত নেই। এসব অভিযোগ নিয়ে নির্বাচনের আগে জোরালো প্রতিবাদ হয়েছিলো আদালতপাড়ায়। ভোটের পর এ নিয়ে আর কোন কথা না উঠলেও নতুন এক অভিযোগ উঠেছে নয়া কমিটির নয়া নেতাদের বিরুদ্ধে। তারা আওয়ামী লীগ নেতা, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক একেএম সামসুজ্জোহার কবরে শ্রদ্ধা জানালেও অন্য প্রয়াত নেতাদের তা জানাননি।
আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত প্যানেলকে আওয়ামী লীগের সমর্থিত বলা হলেও বরাবরই দলের একটি অংশের সাথে তাদের সখ্য থাকে। শহরে দুই মেরুর মধ্যে উত্তর অংশের সাথেই তাদের ভাব বেশী। দক্ষিণ অংশ বরাবরই এড়িয়ে চলেন তারা। জীবিত নেতাদের পাশাপাশি প্রয়াত নেতাদের বেলায়ও একই নিয়মে চলছেন তারা। দলীয় সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নারায়ণগঞ্জ মহকুমা, জেলা ও শহর পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন এমন অনেক নেতাই মারা গেছেন। আবার অনেকে রয়েছেন যারা শীর্ষ পদে না থেকে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। প্রতিদিন নিয়ম করে দলীয় কার্যালয়ে আসতেন আওয়ামীলীগের প্রতি ভালোবাসার টানে। এর মধ্যে একেএম সামসুজ্জোহা, মোস্তফা সারওয়ার, আলী আহম্মদ চুনকা, মোবারক হোসেন, আনসার আলী, শেখ মিজানুর রহমান, ডা. শাহাদাত হোসেন, মফিজুল ইসলাম, আবুল হাসনাত, অধ্যাপিকা নাজমা রহমান, আফতাবউদ্দিন কমিশনার, এমএ কুদ্দুস, সম্বল মিয়া, নিজাম কমিশনার, কামাল আহমেদ, আসমত আলী সরদার। ২০০১ এর ১৬ জুন চাষাঢ়া আওয়ামী লীগের অফিসে বোমা হামলায় নিহত হয়েছে ছাত্রলীগ নেতা সাইদুর রহমান বাপ্পীসহ ২০ জন। শহরের ২ নম্বর গেটে আওয়ামীলীগ অফিসের দোতলায় হামলা নিহত হয়েছে যুবলীগের নেতা মনির। আওয়ামী লীগকে ভালোবেসে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন অনেক নেতা। তাদের সবার পরিবার খুব ভালো অবস্থায় এমনটাও বলা যাবে না। তবে পরিবারের সদস্যরা বরাবরই আক্ষেপ করে বলে, দল তাদের মনে রাখেনি। তাদের সে আক্ষেপের প্রতিধ্বনিই যেন আরেকবার উচ্চারিত হলো সমাজে বিজ্ঞ হিসেবে পরিচিত জেলা আইনজীবী সমিতির নেতাদের আচরণে।
এ বিষয়ে নারাণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, প্রয়াত আওয়ামী লীগের নেতা একেএম শামসুজ্জোহা ছিলেন আমাদের সবার নেতা। তার জন্য সবার দোয়া ও মাগফেরাত কামনা করা উচিত। পাশাপাশি আইনজীবি সমিতির যারা প্রয়াত হয়েছেন তাদের জন্যও নারায়ণগঞ্জ আইজীবি সমিতির নেতারা দোয়া করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আরজু রহমান ভুঁইয়ার মতে, তাদের প্যানেল গঠন থেকে শুরু করে নির্বাচিত হওয়ার পেছনে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের অবদান রয়েছে। তাই তারা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখিয়ে জোহা ভাইয়ের কবরে তারা শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
দলের অনেক নেতা ও সচেতন মহলের মতে, শহরে আওয়ামী লীগের উত্তর দক্ষিণ মেরু নিয়ে যে দ্বন্দ্ব তার রেশ ধরেই কেউ ওদিক কেউ আবার সেদিকটায় ম্যানেজ করে চলেন। দল এক হলেও যার যার নেতা ভিন্ন। যে যার কাছের লোক সে তার কথাই বলে। রাজনীতিতে দলের চেয়ে এখন ব্যক্তির পেছনেই ছুটতে শুরু করেছেন সবাই।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাসদাইর কবরস্থানে চুনকা ভাই আর জোহা ভাইয়ের কবর একসাথে। আমরা জিয়ারত করতে গেলে দুই নেতার কবরেই যাই। আইনজীবী সমিতির নয়া কমিটির নেতৃবৃন্দের শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ওনারাতো বিজ্ঞ আইনজীবী। তারা কেন এমন করবে।
নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতিতে নির্বাচন করে তারা নেতা হয় নাই। তারা একজন নেতাকে খুশি করার জন্য আইনজীবী সমিতি দখল করে রেখেছে। তাদের দ্বারা আইনজীবি সমিতির ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব নয়। সাখাওয়াত হোসেন আরও জানান, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি সুরুজ আলী, আহমদ আলী, আব্দুল হারিস,ওয়াজউদ্দিন আহম্মেদসহ যারা প্রয়াত হয়েছেন তাদের জন্যও আইনজীবি সমিতি কোন আয়োজন করে না। তারা যান একজন ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য।
এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহসিন মিয়ার মোবাইল ফোনে কল করা হয়। তিনি প্রশ্নের অর্ধেকটা শুনেই বলেন, আমি হাসপাতালে আছি। ব্যস্ত আছি বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন অন্যতম পেশাজীবী সংগঠনের এ নয়া সভাপতি।