বিশেষ প্রতিবেদক
১০ম সংসদ নির্বাচনের পর একটা চরম হতাশায় ছিলো বিএনপি। তা কাটাতে একাদশে যায় তারা। তবে নির্বাচন শেষে আগের চেয়েও বেশী হতাশা পেয়ে বসে। বিশেষ করে দেশ বরেণ্য অনেক তারকা রাজনীতিক নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট করলেও ফল জিরো। সর্বশেষ ঢাকা সিটি নির্বাচন ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের অভিজ্ঞতাও বিএনপির জন্য সুখকর নয়। বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাসীনদের কৌশলে মার খাচ্ছে বিএনপি। তবে নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতারা বলছেন, সময় মতো জেগে উঠবে জনতা।
স্থানীয় বিএনপিতে কোন্দল থাকলেও সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঐক্যমত রয়েছে। দলীয় অধিকারের বেলায়ও তা দেখা যায়। জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে বিএনপির সব মত ও পথের নেতারা একত্রিত হয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একটি অংশের নানা রকম কৌশলে আইনজীবী সমিতি নির্বাচন থেকে শেষ পর্যন্ত গুটিয়ে নিতে হয়েছে বিএনপিপন্থি আইনজীবী প্যানেলকে। আবার ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভিন্ন রকম কৌশলে মার খেয়েছে দলটি। এ অবস্থায় এ দল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। রাজনীতির আলোচনার টেবিলে বিএনপির ভবিষ্যতই এখন মূল প্রতিপাদ্য। কেউ বলছেন, বিএনপি কৌশলী হতে পারছে না। আওয়ামী লীগের রাজনীতির কাছে তারা বার বার ধরাশায়ী হচ্ছে। বুঝতে পারলেও এ নিয়ে কঠোর আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ করতে পারছে না। মাঠেও তেমন দেখা যায় না দলের নেতাদের। বিএনপির বিপক্ষে এমনসব কথার পাশাপাশি অনেকে বলছেন, এত প্রতিকুল অবস্থায়ও এ দল যে টিকে আছে তাই বড় কথা। অসংখ্য মামলা মাথায় নিয়েও সাহস হারাননি বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা একদিকে যেমন আদালতে দিনের পর দিন হাজিরা দিচ্ছেন অপরদিকে দলীয় কর্মকান্ডেও নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন।
একাধিক বিএনপি নেতা আলাপকালে জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে সব কিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়েছেন। প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বত্র তাদের হস্তক্ষেপ রয়েছে। বলা চলে, সবাই এখন আওয়ামী লীগের হয়ে গেছেন। মামলা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভয় দেখানোর পুরনো চেষ্টা চলছে এখনও। নির্বাচনে গেলেও বিএনপিকে কোনঠাসা করে রাখা হয় আর না গেলে বদনাম ছড়ানো হয়। এ নেতারা বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ায় অনেকে সমালোচনা করেছিলেন। এই প্রেক্ষিতে একাদশ সংসদ নির্বাচনে যায় বিএনপি। তারপর কি হয়েছে তাতো সবারই জানা।
এদিকে ২৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ১দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় বিএনপিপন্থি প্যানেল। ৯ জানুয়ারি এজিএম থেকেই তারা নির্বাচন কমিশন নিয়ে আপত্তি তুলে আসছিলো। পরে নির্বাচনে অংশ নিতে তারা মনোনয়নও নিয়ে প্রচারণার পাশাপাশি আন্দোলনও চালিয়ে যায়। তবে ২ দিন আগে হঠাৎ করে ভোট কেন্দ্রের ভ্যেনু বদল করা হয়। আইনজীবী সমিতির নতুন ভবনের নীচতলায় ভোটাভুটি হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে জজকোর্টের দোতলায় নেয়া হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ স্বরুপ নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ায় বিএনপিপন্থি প্যানেল ও অন্য আরও দুই প্রার্থী। বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতারা ওই সময়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, সরকারী দল সব কিছু দখলে নিতে চায়।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, দেশে এখন অঘোষিত একদলীয় শাসন চলছে। পুলিশ প্রশাসন, লোক প্রশাসন, গণমাধ্যম সব কিছুতেই সরকারের কঠোর প্রভাবে রাজনীতি আর নেই। যেখানে রাজনীতি নেই সেখানে একটা রাজনৈতিক দল জনসমর্থন কাজে লাগাতে পারে না। এ নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে উল্লেখ করে এ নেতা বলেন, হঠাৎ জনতার বিষ্ফোরণ ঘটবে। তিনি দাবি করেন, আমাদের মধ্যে কোন হতাশা নেই।
২০০১ এ চারদলীয় জোট গঠন করে ক্ষমতায় যায় বিএনপি। পরে বিশ দলীয় জোটে রূপ নেয় তা। এর বাইরেও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ড. কামালের গণ ফোরাম, আসম রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য সহ আরও কয়েকটি দল মিলে ঐক্যফ্রন্ট গঠন হয়। শুরুতে ঐক্যফ্রন্ট আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে টিকতে পারেননি তারা। নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে দুইটি আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা ধানের শীষ নিয়ে ভোট যুদ্ধে নামলেও ফল জিরো। নির্বাচনের দিন ঠিকমতো কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টও দিতে পারেননি এ প্রার্থীরা। নারায়ণগঞ্জ-৫ এ এসএম আকরাম প্রচারণা চালালেও নারায়ণগঞ্জ-৪ এ মনির হোসেন কাসেমীকে তেমন দেখা যায়নি। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তাকে সেখানে দেখতে গিয়েছিলেন তৎকালিন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। এ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের ধারণা, সরকারের কোন মেসেজ দিতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন এসপি হারুন।
এ বিষয়ে আলাপকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, জনগণের ঐক্যবদ্ধের কাছে যে কোন কৌশল এক সময়ে অর্থহীন হয়ে যায়। আমরা জনগণকে বুঝাতে সক্ষম হচ্ছি, এ সরকার বারবার জনগণের অধিকার কেঁড়ে নিচ্ছে। জোটভুক্ত দলগুলো কাজ করছে জানিয়ে দৃঢ়চিত্তে মামুন মাহমুদ বলেন, জনতা একদিন ঠিকই জাগবে।