আজ রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাবার কারাগারে ছেলের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফতুল্লায় আগের স্ত্রীর দুই ছেলেকে মানসিক রোগী আখ্যা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঘরের ভেতর বন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে বাবা ও সৎ মায়ের বিরুদ্ধে। গতকাল সুমন নামের এক ছেলে মারা যাওয়ার পর ঘটনা জানাজানি হয়। পুলিশ এসে নিহতের লাশ নিয়ে গেছে আর অন্য সন্তানকে আর বন্দি না করার পরামর্শ দিয়েছে সেই বাবাকে। বাবার দেখানো কাগজপত্রের বরাত দিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া এসআইও বলছে, সন্তান দু’টি মানসকি রোগী। এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছে, মানসিক রোগী হলেই কি বন্দি করা যায়। এদিকে জীবিত উদ্ধার হওয়া সন্তাদের দাবি, তাদের মায়ের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্যই দুই ভাইকে পাগল বলা হচ্ছে।
কুতুবপুর ইউনিয়নের দক্ষিন রসুলপুর এলাকায় হাবিবুল্লাহর ক্যাশিয়ার এ পর্যন্ত বিয়ে করেছেন চারটি। তিনি কবি নজরুল কলেজের ক্যাশিয়ার ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। তালাবদ্ধ থাকা দুই ভাই হেমায়েত হোসেন সুমন ও সাফায়েত হোসেন রাজু তার ছেলে। তাদের মা মারা গেলে তাদের খালাকে বিয়ে করে হাবিবুল্লাহ। ক’দিন পর সে স্ত্রীও মারা যায়। এরপর সে আরও দু’টি বিয়ে করে। অভিযোগ উঠেছে, ৪র্থ স্ত্রী ও সে নিজে দুই সন্তানকে বন্দি করে রেখেছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, দুইভাইকে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধি রেখে মানসিক নির্যাতন করে করা হয়। তারা দুই ভাই মানষিক রোগী না। তারা সাধারন জীবন যাপন করতো। দীর্ঘ দিন আটকে রাখার কারনে গতকাল রাতে এক ছেলের মারা যায়। এ সময় আরেক ছেলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘরে তালাবদ্ধ থাকা আরেক ছেলেকেও উদ্ধার করে পুলিশ।
উদ্ধারকৃত ছোট ছেলে রাজু বলেন, নোয়াখালী জেলার রামনগরের কেএমসি হাই স্কুলে ৮ম শ্রেনীতে পড়ার সময় তার মা মোহসেনা বেগম ইন্তেকাল করেন। এরপর তাকে ফতুল্লায় নিয়ে আসে বাবা হাবিবুল্লাহ। কিছুদিন পর ছোট খালা কহিনুর বেগমকে বিয়ে করেন। তবে মারা যান কয়েক মাসের মধ্যে। পরে আরেক জনকে বিয়ে করলেও তা বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে হনুফা বেগম কে বিয়ে করেন বাবা হাবিবুল্লাহ। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে তার বড় ভাই সুমন ও তাকে নির্যাতন করা শুরু হয়। এর পর তাদেরকে আলাদা ভাবে দুইটি রুমে ১ বছর ধরে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। রাজু আরও বলেন, তাদের কখনো খাবার দেয়া হতো। কখনো লাঠি দিয়ে মারধর করতো বাবা ও সৎ মা। তারা আমাদের দুই ভাইকে পাগল সাজানোর জন্য আটকে রাখে। রাজু বলেন, জমি আত্মসাৎ করার জন্য তাদের দুই ভাইকে পাগল আখ্যা দিয়ে আটকে রাখে বাবা ও সৎ মা। সেই জমির অর্ধেক মালিক তাদের মা মরহুম মোহসেনা বেগম।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হাবিবুল্লাহ জানান, তার দুই ছেলে মানষিক রোগী। বড় ছেলে অসুস্থ হয়েই মারা গেছে। তিনি ছেলেদের ঘরে বন্দি রেখে চিকিৎসা করতেন বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরির্দশক ফজলুল হক জানান, নিহতের শরীরের পিছনে পচন ধরেছে। তবে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আরেক ভাইকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছে, যদি চিকিৎসাই হতো তবে ছেলেটির পেছনে পচন ধরলো কেন।