আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হকারের চকি থাকে শহরে

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
শহরের মূল সড়কে না বসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েকটি শাখা সড়কে বসার সুযোগ পেয়েছিলো হকাররা। এ কারনে শায়েস্ত খান সড়ক, নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের ফুটপাত ও সড়ক তাদের দখলে। তবে বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত ও সড়ক ছেড়ে যায়নি হকার নামক দখলদাররা। প্রতিদিন হকার তাড়াতে ডিউটির অনেকটা সময় ব্যস্ত থাকতে হয় পুলিশকে। এ নিয়ে প্রায়ই ঘটে অনাকাঙ্খিত ঘটনা আর তার দোষ পড়ে পুলিশের উপর। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, সব পুলিশ হকার উচ্ছেদ করে না বরং বন্ধুত্ব করে। সচেতন মহলের মতে, প্রতি রাতে হকার বাড়ি ফিরে গেলেও তার মালামাল আর চকি রয়ে যায় শহরে। একশ্রেনীর লোক হকারের চকি রেখে ভাড়া পায়। তারা মনে করেন, যারা চকি ভাড়া নেয় এবং চাঁদা নেয় তাদের আইনের আওতায় না আনা হয় না বলেই হকারদের সাথে কেউ পারে না।
সরেজমিন দেখা যায়, শহরের ২নং রেলগেট থেকে রাস্তার বাম পাশ দিয়ে চাষাঢ়া সান্তনা মার্কেট পর্যন্ত ২শ’ ৮১ জন হকার প্রায় ৪.৫ ফুট ফুটপাত দখল করেছে। ২নং রেলগেট থেকে ডান পাশ দিয়ে চাষাঢ়া সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত কমপক্ষে ৩শ’ ৫ হকার বসে। এছাড়াও ১নং রেলগেট থেকে নারায়ণগঞ্জ কলেজ হয়ে সিরাজউদ্দৌলা রোড পর্যন্ত ১শ’ ৬৫ জন হকার সড়ক দখল করে ব্যবসা করছে। শহরের আলোচিত মীর জুমলা সড়কে রয়েছে ১শ’ ৩৭ জন হকার। ফ্রেন্ডস মার্কেটের সামনে শায়েস্তা খান রোডে হয়ে ব্যাংকের মোড় পর্যন্ত ২শ’ ৫৩ জন হকার দিনে রাতে বসে। এসব জায়গায় মার্কেটের দোকানদাররা অনেকটা অংশ দখল করে রেখেছে।

২নং রেলগেট থেকে চাষাঢ়া মোড় পর্যন্ত (বাম পাশে)
বঙ্গবন্ধু সড়কের উকিলপাড়ায় লতিফ ট্রেডাস মার্কেটের সামনে ৬ ফুট জায়গায় দখল করেছে মার্কেটের দোকানীরা। পূবালী ব্যাংকের সামনে ফুলের দোকানদার প্রায় আড়াই ফুট, গ্রামীন মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে মিষ্টির দোকানের ঝুড়ি বসিয়ে দেড় ফুট, উকিলপাড়ার মোড়ে বিভো শো-রুম দেড় ফুট, তার একটু সামনে এস.এস ট্রেড লিংক ও ফুলের দোকানদার সাড়ে ৩ফুট, সুরেশ প্লাজার সামনে আর.পি রোকায়া পরিবহন দেড় ফুট ও স্পেশাল আর.পি রিয়াজ পরিবহন আড়াই ফুট, মিম জরিহাউজ দেড়ফুট, আলম খান লেনের রেডিও ভিশন দেড়ফুট, মের্সাস মতিন ফার্ণিচার ১ফুট, সাবেক ফারুক সুপার মার্কেটের কাটাবন এন্ড কোং ২ ফুট, নূর মসজিদের সামনে পাঞ্জাবী কাপড় বিক্রেতাসহ কয়েকজন হকার প্রায় ৩ফুট, বাধন কমিউনিটি সেন্টারের নিচে ইউসিবি ব্যাংকের বুথের সাথে হকাররা ২ ফুট ও পপুলারের পাশে একটি কনফেকশনারী দোকান রাস্তায় প্রায় ২ ফুট জায়গা দখল করে রেখেছে। এখানে অনেক অবৈধ পার্কিং করে রাখে নিয়মিত।

২ নং রেলগেট থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত (ডান পাশে)
বঙ্গবন্ধু সড়কে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মার্কেটের শেষে মীরজুমলা সড়কের শুরুতে অপ্পো মোবাইল শো-রুম ফুটপাতের প্রায় দেড়ফুট জায়গা দখল করেছে। এছাড়াও ক্লাব মার্কেট থেকে ব্যাংকের মোড় পর্যন্ত হকাররা ফুটপাত ছেড়ে তিন চাকার ভ্যান গাড়ীতে করে বঙ্গবন্ধু সড়ক দখল করে রাখে। এভাবে নামকরা রেস্টুরেন্ট আলম কেবিন ২ ফুট, বিসমিল্লাহ পুষ্পালয় ৩ ফুট, বিভো শো-রুম ২ ফুট, সুগন্ধা পুষ্পকেন্দ্র এন্ড জরি হাউজ আড়াই ফুট, সুগন্ধা কেক হাউজ সাড়ে ৩ ফুট, সুগন্ধা কাবাব হাউজ ৪ ফুট, আরএফএল বেস্ট বাই শো-রুম দেড় ফুট ও সুগন্ধা+ নামক হোটেল ফুটপাতের সাড়ে ৩ ফুট দখল করে রাখে।
একই অবস্থা চাষাঢ়ায় খাজা সুপার মার্কেট থেকে মিশনপাড়া পর্যন্ত। সুগন্ধা সুইটমিট দখল করেছে প্রায় ৩ ফুট। খাজা মার্কেটের কয়েকজন দোকান মালিক প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট, চাষাঢ়া সুগন্ধা+ রেস্তোরা কড়াই সহ আরো বিভিন্ন সরঞ্জমাদী রেখে প্রায় ৩ ফুট দখলে নিয়েছে। এখান থেকে হকার্স মার্কেট হয়ে মিশন পাড়ার বৈশাখী হোটেল পর্যন্ত প্রায় ৩ থেকে ৪ ফুট দখল করে রেখেছে হকাররা। এখানে হকার মার্কেট থাকার পরও ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে রাখে হকাররা। সকাল থেকে শুরু রাত পর্যন্ত চলে তাদের বেচাকেনা। তবে বিকেলের পর থেকে দখলের পাল্লা ভারী হয়। কেউ কেউ ছোট বাক্সের মতো ট্রলি গাড়ীতে হকারী করে। আবার কেউ কেউ ছোট চকিতে। উত্তর চাষাঢ়া প্রবেশ করতে সুগন্ধা বেকারী মোড়ে ফলের দোকান-চায়ের দোকান দিয়ে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে রেখেছে অনেকে। শহীদ জিয়া হলের সামনে ফলের দোকানদারদের হাট বসে প্রতিদিন। সামনের রাস্তাও দখল করে নেয় বিভিন্ন দোকানদাররা।
চকি ও মালামাল রাখার স্থান
চাষাঢ়া থেকে বামপাশে সমবায় মার্কেট থেকে জামান টাওয়ার পর্যন্ত বসা হকাররা লুৎফা টাওয়ারের পিছনের গলিতে শেষ মাথায় খালি জায়গায় ট্রলি রাখে আর গোডাউন ভাড়া করে সেখানে চকি ও মালামাল রাখে। সায়াম প্লাজা থেকে মেডিনোভা হাসপাতাল পর্যন্ত হকাররা তাদের ট্রলি, চকি ও পন্য উত্তরা ব্যাংকের ভবনের নিচে খালি জায়গায় রাখে। কেউ কেউ গোডাউন ভাড়া করে এসব রাখে। সাধু-পৌলের গির্জা থেকে দিপা সুইট মিট পর্যন্ত হকাররা তাদের হকারি ট্রলি ও চকি রাখে সিটি লাইফ হাসপাতালের গলিতে। অনেকে ঢাকা ব্যাংকের গলি দিয়ে পিছনে খালি জায়গায় রাখে । সাধু পৌলের গীর্জার গলিতে একটি ভবনের নিচের তলা ভাড়া করেও মালামাল রাখে হকার নামক দখলদাররা। আমান ভবন (মোহমেডানের গলি পাশে) থেকে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব পর্যন্ত এলাকার হকাররা এবং শয়েস্তা খান রোডের হকারসহ বেশীর ভাগ ভ্যান গাড়ীতে করে হকারি করে। তাদের ভ্যান গাড়ী রাখে দ্বিগুবাবুর বাজার আধুনিক পৌর মার্কেটের দোতলায়।
চাষাঢ়ার শহীদ মিনারের সামনের হকাররা তাদের মালামাল বস্তাবন্দি করে বাড়ীতে নিয়ে যায়। কিছু কিছু হকার আছে যাদের ট্রলি রাখারও নিদ্রিষ্ট স্থান আছে। মার্ক টাওয়ার থেকে গলাচিপার মোড় পর্যন্ত যে হকাররা বসে তাদের ট্রলি রাখার স্থান হলো চাষাঢ়া ভাষা সৈনিক রোডের পিছনে বালুর মাঠ রেললাইনের সাথে একটি গোডাউন। এর জন্য মাসে ১০০০ টাকা ভাড়া দিতে হয় ট্রলি প্রতি। আলম খান লেন থেকে ২ নং রেলগেট পর্যন্ত হকাররা তাদের মালামাল কেউ কেউ বাড়ীতে নিয়ে যায় কেউ আবার নিকটস্থল মার্কেটে দারওয়ানের কাছে রেখে যায়।
সচেতন মহল বলেছেন, ফুটপাত উচ্ছেদের পর নিয়মিত ফলোআপ না থাকায় এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের মতে, একদিকে হকার উচ্ছেদ করা হয় অপরদিকে ফের দখলে মাতে তারা। হকারদের পেছনে চাঁদাবাজ ও কতিপয় পুলিশ সদস্য রয়েছে। তারা হকারদের সব ধরনের ছায়া দিয়ে রাখে। সচেতন মহল মনে করেন, হকার উচ্ছেদ করতে হলে আাগে তাদের মালামাল ও চকি-ট্রলি, ভ্যান গাড়ির দিকে নজর দিতে হবে। এসব যেখানে রাখা হয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া শুধু হকার নয় যেসব মার্কেটের দোকানদাররা ফুটপাত দখল করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল। এদিকে নগরবাসীর অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, হকার মুক্ত শহর রাখতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ চেষ্টা করেও পারছে না। তারা অভিযান চালায় আবার দখল হয়ে যায়। এ হকার নিয়ে ২০১৮ সালে শহরে সংঘর্ষ হলেও আজও হকার সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং লাভের আশায় নিত্য নতুন হকার জন্ম নিচ্ছে।