মাজহারুল ইসলাম ঃ সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ রউফ এর বিরুদ্ধে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হয়ে সোনারগাঁয়ের প্রাচীন ইতিহাসের অন্যতম স্থান বৈদ্যের বাজারকে ধ্বংস করতে জোরপূর্বক বালু ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। সোনারগাঁয়ে আল মোস্তফা গ্রুপের বিরুদ্ধে জমি দখল ও মারিখালী নদী ভরাট বন্ধের প্রতিবাদে মানব বন্ধন করেছে ভূক্তভোগী কৃষক ও বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় হেরিটেজ পলিমার এন্ড ভেজিটেবলস লিমিটেড নামক একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কৃষিজমি ও পাশ্ববর্তী মারিখালী নদীসহ সরকারী দুটি হালট দখল করে শক্তিশালী কয়েকটি ড্রেজারে দিয়ে জোরপূর্বক বালু ভরাট করছে। কোম্পানীর মালিক মোঃ মোস্তফা কামাল ওরফে আল মোস্তফা, স্থানীয় চেয়ারম্যান ডাঃ রউফ, মেম্বার ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাস বাহিনী দিয়ে বালু ভরাট করে সোনারগাঁয়ের কয়েকশত বছরের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। বৈদ্যেরবাজার ঘাট এলাকায় ৭টি দাগে প্রায় ১ একর ১০ শতাংশ কৃষি জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা বিচারপ্রক্রিয়া চলমান থাকা সত্ত্বেও বালু ভরাটের কারনে এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংঙ্কা করছে এলাকাবাসী। এ নিয়ে স্থানীয় ভোক্তভূগী হাজী আজিজুল্লাহ সহ অন্যান্যরা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে কোন সুরাহা না পাওয়ায় গতকাল সকালে সোনারগাঁ প্রেস ক্লাবের সামনে ভূক্তভোগী কয়েক হাজার ক্ষতিগ্রস্থ সহ রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সুশিল সমাজের লোকজন মানববন্ধন করেছেন। প্রতিদিন কুমিল্লা, আড়াই হাজার ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ার হাজার হাজার লোক বৈদ্যের বাজার ঘাট দিয়ে নৌকাযোগে চলাচল করে।
লেখক সাহিত্যিক এড. জয়নুল আবেদীন জানান, ‘১৯৮৩ সালের পূর্বে সোনারগাঁ থানার নাম ছিল বৈদ্যের বাজার। তারও আগে বৈদ্যের বাজার থানা পাকিস্তান বাজার নামে পরিচিত ছিলো। যা মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ঐতিহাসিক এ ঘাটটি দখল হয়ে গেলে কয়েকটি উপজেলার মানুষকে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হবে।’ সোনারগাঁয়ের সমৃদ্ধ ইতিহাসের অন্যতম স্থান বৈদ্যের বাজারকে ধ্বংস করতে মাঠে নেমেছে ভূমিদস্যু কোম্পানী। অজ্ঞাত কারনে প্রশাসনের নীরবতায় অসহায় সাধারন মানুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈদ্যের বাজার একজন জানান, এ বালু ভরাটে পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ছে এলাকার ক্ষমতাশালী মহল।
ডা. আব্দুর রউফের লাঠিয়াল বাহিনী. বালু সন্ত্রাসী হোসেন মেম্বার, মঞ্জুর মল্লিক হিরো, অহিদুল্লাহ মেম্বার, জাহাঙ্গীর, হামিদুলসহ ৩০-৩৫জনের একটি সিন্ডিকেট ওই জমির পাশ্ববর্তী দোকানপাট ১৫দিনের মধ্যে উচ্ছেদ না করলে ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দেয়। শুধু আজিজুল্লাহর বিরোধকৃত সম্পতিই নয় এলাকার নিরীহ প্রবাসী সাখাওয়াত হোসেন, মজিবুর রহমান, শাহজালালসহ প্রায় ১০-১২জনের জমি ক্রয় না করেই কৃষি জমি ও পাশ্ববর্তী মারিখালী নদী দখল করে এ বালু ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ঘটনায় ভূক্তভোগী আজিজুল্লাহ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর, সোনারগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সোনারগাঁ ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা এসে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে লাল নিশানা টাঙ্গিয়ে দেয়। কিন্তু সীমানা অতিক্রম করে বালু ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ওই সিন্ডিকেট। ফলে মারিখালি নদীটি ভরাট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উক্ত মানববন্ধনে বালু ভরাট বন্ধ এবং অবৈধ দখল মুক্ত করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য রাখেন, রুবায়েত হায়াত শান্ত, মাসুদ রানা মানিক, ফারুক আহাম্মেদ, গাজী আতাউর, সুলতান আহাম্মেদ মোল্লা বাদশা, মানবাধিকার সংগঠনের নেত্রী জাহানারা প্রমূখ।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনূর ইসলাম বলেন, অবৈধ দখলরোধে সহকারী কমিশানার (ভূমি) সরকারী হালট ও নদী বাচাঁতে ইতিমধ্যে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়েছে এবং নদী অবমুক্ত করার জন্য নোটিশ জারী করা হয়েছে।###