আজ শুক্রবার, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রিয়াঙ্কায় কাপছে মোদি সরকার

আগেই রাহুল গান্ধী ঘোষণা দিয়েছেন কংগ্রেসের সভাপতি পদে তিনি নেই। এবার রাহুলের পরিবর্তে মাঠে নেমে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বোন প্রিয়াঙ্কা গাঁধী বঢরা। উত্তরপ্রদেশে প্রিয়ঙ্কার ঝাঁঝ দেখে কাল থেকেই দলে রব উঠছে, তাঁকেই করা হোক সভাপতি। গতকাল  নিজেই সে সম্ভাবনায় জল ঢাললেন প্রিয়ঙ্কা। জানালেন, ‘‘রাহুলই আমাকে বলেছেন সোনভদ্রের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। তিনিই আমার নেতা।’’

লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের দু’দিনের মাথায় কংগ্রেস কর্মসমিতির বৈঠকেই রাহুল সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগের কথা জানিয়েছিলেন। সেই বৈঠকেই দলের নেতাদের রাহুল সাফ জানান, ‘‘আপনারা পরের সভাপতি খুঁজে নিন। বোনকেও টানবেন না এ ব্যাপারে।’’ প্রিয়ঙ্কাও ক্ষোভ উগরে বলেন, ‘‘রাহুল যখন লড়ছিলেন, তখন কেউ তাঁর পাশে দাঁড়াননি।’’ গত মাসে চার পাতার খোলা চিঠিতে রাহুলও ঠিক এই কথাই জানান। বলেন, কখনও তিনি ‘একা’ই লড়ে চলেছেন।

প্রিয়ঙ্কার মন্তব্যে দলে ফের গুঞ্জন শুরু হয়েছে, আসলে কী বার্তা দিতে চাইছেন তিনি? যে রাহুল দলের কোনও কাজে থাকছেন না, তিনিই প্রিয়ঙ্কাকে সোনভদ্রে যেতে বলছেন! আবার প্রিয়ঙ্কা তাঁকেই ‘নেতা’ বলছেন! কংগ্রেসের এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘বার্তা স্পষ্ট। আপাত দৃষ্টিতে প্রিয়ঙ্কার সোনভদ্রের সফর ২০২২ সালের ভোটের জন্য উত্তরপ্রদেশে দলের ভিত শক্ত করার প্রথম ধাপ হিসেবে মনে হতে পারে। কিন্তু এই লড়াইটি শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে নয়, কংগ্রেসের একটি অংশের বিরুদ্ধেও। বিশেষ করে দলের প্রবীণদের বিরুদ্ধে।’’ কী ভাবে? নেতাটির কথায়, আহমেদ পটেলদের ‘নেতৃত্বে’ দলের প্রবীণদের একটি গোষ্ঠী দলের রাশ নিজের হাতে তুলে নিতে চাইছে। অথচ রাহুল চান, লোকসভার ভরাডুবির পর প্রবীণেরা সরে গিয়ে নবীনদের হাতেই ছেড়ে দিন দল। সেটি হচ্ছে না বলেই বেঁকে বসে আছেন রাহুল। প্রিয়ঙ্কার বার্তাতেও আজ সেটিই ফুটে উঠেছে।

প্রিয়ঙ্কাকে পুরোপুরি সমর্থন করে রাহুলও আজ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘সোনভদ্রের নরসংহারে পীড়িত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমতি প্রিয়ঙ্কা গাঁন্ধী বঢরা। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকারের স্বৈরাচারী প্রবৃত্তি তাঁকে চুনার দুর্গের অতিথিশালায় বন্দি করে, আলো-জল ছাড়া রাতভর আটকে রেখে গণতন্ত্র দমনের চেষ্টা করেছে। কংগ্রেস এতে ভয় পেয়ে দলিত ও আদিবাসীদের হয়ে লড়াই করা বন্ধ করবে না।’’ উল্লেখ্য, প্রিয়ঙ্কাকে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করেছিলেন রাহুলই। তাঁর হাতে গোটা রাজ্যের ভার তুলে দেওয়ার জল্পনা অনেক দিন ধরেই চলছে। আজ বোনকে ‘সাধারণ সম্পাদক’ হিসেবে উল্লেখ করে সেই জল্পনাও জোরদার করলেন রাহুল।

তবে প্রিয়াঙ্কা নিজের উপর আস্থা রেখেছেন। যত নির্যাতন করা হোক না কেন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে। আর প্রিয়াঙ্কা মাঠে নামাতে বিজেপির সরকার ভয়ে কেপে উঠেছে। প্রিয়াংকা গান্ধী উত্তর প্রদেশে পুলিশের হাতে ১দিন আটক থাকার পর গতকাল শনিবার দিল্লী ফিরেছেন। পুলিশ বলছে, প্রিয়াংকা গান্ধীকে তারা হেফাজতে নেয়নি। সোনভাদ্র জেলায় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে নিহত ১০ আদিবাসীর পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে করতে গেলে পুলিশ তাকে বাধা দেয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ গতকাল তাদের সাথে প্রিয়াংকাকে দেখা করতে দিয়েছে। আটক অবস্থায় একটি টুইটে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘বারানসির এডিজি, পুলিশ কমিশনার এবং মির্জাপুরের ডিআইজি আমার কাছে এক ঘণ্টা ধরে বসে রয়েছেন। আমাকে বলেছেন আক্রান্তদের পরিবারের সঙ্গে দেখা না করেই আমাকে ফিরে যেতে হবে। আমাকে কেন আটকে দেয়া হয়েছে, তার কোনো কারণ তারা দেখাতে পারেননি। কোনো কাগজপত্রও হাতে পাইনি। এমনকি আমার আইনজীবী জানিয়েছেন, এভাবে আমায় আটক করা সম্পূর্ণ বেআইনি।