নিজেস্ব প্রতিবেদক: গেল দুই দশক ধরেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের অভ্যন্তরে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ডিএনডি অধিবাসীদের। বৃষ্টি হলেই কৃত্রিম বন্যায় নাভিশ্বাস হতো অধিবাসীদের। তবে চলতি অক্টোবর মাসেই সেনাবাহিনীর তত্বাবধায়নে ডিএনডি এলাকার পানি নিষ্কাশনে ৫৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। আর ডিএনডি’র জলাবদ্ধতা ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের এমপি ছিলেন বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন। তারপরে এমপি ছিলেন আওয়ামীলীগের সারাহ বেগম কবরী। তারা দু’জনেই ডিএনডি ইস্যু নিয়ে কোন তৎপরতা দেখাতে পারেননি। তেমনি বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে অত্র আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শাহআলমও কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি। আগামী নির্বাচনের আগে যেমন ডিএনডি’র জলাবদ্ধতা ইস্যু নিয়ে বিএনপি যেমন অপবাদ দিতে পারবেন না তেমনি মনোনয়ন পাওয়া বিএনপি’র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ডিএনডি’র জলাবদ্ধতা ইস্যু কাজে আসবেনা। বরং ডিএনডি’র এই প্রকল্প আওয়ামীলীগের অত্র আসনের আগামী নির্বাচনী হাতিয়ার হিসেবেই কাজে লাগবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক মহল।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা, রাজধানীর ডেমরা ও আশপাশের ৫৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়া ডিএনডি এলাকার মানুষ গত দুই দশক ধরেই বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও কৃত্রিম বন্যায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট ডিএনডি এলাকার পানি নিষ্কাশনে ৫৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্পে অনুমোদন দেন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ডিএনডি এলাকার, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এদিকে গত ১৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জে সুধী সমাবেশের আয়োজন করেন এমপি শামীম ওসমান। এছাড়া ১৯ অক্টোবর ফতুল্লায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের মতে ডিএনডির জলাবদ্ধতার সমস্যা গেল দুই দশক ধরেই। বিশেষ করে আশির দশকের পর থেকে লোকজন ডিএনডি বাঁধের ভেতর জমি কিনে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর, ইটের ভাটা, ছোট-বড় শিল্প-কারখানা নির্মাণ করে। কিন্ত জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের রক্ষনাবেক্ষন না থাকায় খাল দখল ও ভরাট করে দোকানপাট, ঘরবাড়ি, কলকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান করায় গেল দুই দশক ধরেই নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনা অল্প বৃস্টিতেই হাটু পানিতে তলিয়ে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। ৫৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যে ডিএনডি বাধ তার মধ্যে ফতুল্লা এলাকাটিই প্রায় ৬০ শতাংশ। আর সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটিও ডিএনডি বাধের ভেতরে। এটা আবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার আওতাধীন। এছাড়া ডেমরা, মাতুয়াইল, দনিয়া, শনিরআখড়া ও যাত্রাবাড়ির কিছু এলাকাও ডিএনডি বাধের আওতাধীন।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের এমপি ছিলেন শামীম ওসমান। মূলত নব্বইর দশকের মাঝামাঝিতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড নির্মিত হওয়ার পর থেকেই ডিএনডি এলাকার ভিতরে লিংক রোডের দুই পাশে জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করে। লিংক রোডের চাঁদমারীতে জেলা জজ আদালত, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, এলজিইডি কার্যালয়সহ বেশ কিছু সরকারী দফতর গড়ে ওঠার পর জনসমাগম বাড়তে থাকে। এছাড়া ডিএনডি এলাকার ভেতরে অপরিকল্পিতভাবেই গড়ে উঠেছে কয়েক শতাধিক কলকারখানা।
২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিএনপির টিকেটে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়া গিয়াসউদ্দিন। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অত্র আসনে আওয়ামীলীগের টিকেটে এমপি নির্বাচিত হন সারাহ বেগম কবরী। তবে তারা দু’জনেই তাদের নির্বাচনী এলাকায় পরিকল্পিত নগরায়নে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। বৃষ্টিতে ডিএনডির জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারন করলেও তারা কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেননি। বিগত চারদলীয় আমলে একবার ডিএনডির উন্নয়নে প্রকল্প ঘোষণার কথা শোনা গেলেও সেটা আলোর মুখ দেখেনি। একইভাবে কবরী এমপি থাকাকালীন সময়েও ডিএনডি’র উন্নয়নে ২৩৮ কোটি টাকার প্রকল্পের কথা শোনা গেলেও সেটাও কাগজে কলমে এগোয়নি।
তবে আগের দুই এমপি ব্যর্থ হলেও এমপি শামীম ওসমান দৌড়ঝাপের কারণে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট ডিএনডি এলাকার পানি নিষ্কাশনে ৫৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্পে অনুমোদন দেন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ডিএনডি এলাকার, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। যা চলতি অক্টোবরে কাজ শুরু হচ্ছে।
এদিকে ডিএনডি’র জলাবদ্ধতা ইস্যুতে বিএনপি পিছিয়ে থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এগিয়ে রয়েছে বলে অভিমত অভিজ্ঞ রাজনৈতিক মহলের। কারণ নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের বর্তমান এমপি শামীম ওসমান ডিএনডি’র প্রকল্প অনুমোদন আনার পাশাপাশি আরো বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শুরুর মাধ্যমে আগামাী নির্বাচনী বৈতরনী পার করার পরিকল্পনা করছেন। অন্যদিকে অত্র আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন অত্র আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি শিল্পপতি শাহআলম। তবে তারা দু’জনেই ডিএনডি ইস্যু নিয়ে কোন তৎপরতা দেখাতে পারেননি। গিয়াসউদ্দিন এমপি থাকাকালে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি আবার শাহআলমও কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি। তাই আগামী নির্বাচনে ডিএনডি আওয়ামীলীগের নির্বাচনী হাতিয়ার হলেও বিএনপি এর থেকে কোন সুবিধা নিতে পারবেনা।