বিশেষ প্রেস বিজ্ঞপ্তি
প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে জঙ্গি সংগঠনে অর্ন্তভূক্তির দায়ে এক সুন্দরী নারী সহ আনসার আল ইসলামের ২ সক্রিয় সদস্য‘কে গ্রেফতার করেছে র্যাব ॥ ১ নারী ভিকটিম উদ্ধার করা হয়েছে ।
সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানতে পারে যে, জঙ্গি সংগঠনগুলো কৌশলগত কারণে নারী সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। এ লক্ষে জঙ্গি সংগঠনগুলো বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নারী সদস্য সংগ্রহে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্ণিত পেক্ষাপটে র্যাব তার গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রেখে চলেছে। র্যাব জানতে পারে চট্টগ্রামের মেট্ট্রোপলিটন এলাকা হতে সাফিয়া আক্তার তানজী (২২) নামে এক তরুণী গত ২৬ জুন ২০১৯ তারিখে বেলা ১০.০০ ঘটিকার সময় কোন এক অজানা উদ্দেশ্যে নিরুদ্দেশ হয়েছে। উক্ত ঘটনায় র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায়, র্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল গত ৯ জুলাই বরিশাল শহরের একটি মাদ্রাসায় অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিম সাফিয়া আক্তার তানজী‘কে উদ্ধার সহ আনসার আল ইসলামের সক্রিয় নারী সদস্য জান্নাতুল নাঈমা (২২), জেলাঃ চট্রগ্রাম‘কে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৯ জুলাই ২০১৯ তারিখ ১০.০০ ঘটিকায় রাজধানীর ডেমরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের সহযোগী আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য মোঃ আফজাল হোসেন (২৩), জেলা-শেরপুর‘কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের নিকট হতে উগ্রবাদী বই ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিম তানজি’কে কথিত প্রেমিকের নিকট বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চট্রগ্রাম থেকে বরিশাল নিয়ে আসা ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে।
ভিকটিম সাফিয়া আক্তার তানজী সূত্রে জানা যায়, সে চট্রগ্রামের একটি কলেজে বিবিএ অধ্যয়নরত ছিলো। গত দু’বছর যাবৎ সে পিতা-মাতার সাথে চট্রগ্রাম শহরে বসবাস করছে। সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ফেসবুকে নাঈমাসহ বেশ কয়েকজন মেয়ের সাথে পরিচয় ঘটে। সেখানে একটি গ্রুপে নাঈমা ও অন্য নারী সদস্যদের ফেসবুক বন্ধু বরিশাল নিবাসী সহিফুল @ সাইফ এর সাথে পরিচয় হয়। নাঈমা ও অন্যান্য মহিলাদের প্ররোচনায় সাইফ এর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী হয়। অতঃপর ভিকটিম তানজি তার ফেসবুক বন্ধু নাঈমা ও সহযোগী অন্যান্য নারী-পুরুষ সহযোগীদের প্ররোচণায় সাইফ‘কে বিবাহ করার জন্য গত ২৬ জুন ২০১৯ তারিখে নাঈমার সঙ্গে বরিশালের উদ্দেশ্যে গৃহ ত্যাগ করে। বরিশালে পৌঁছানোর পর কথিত প্রেমিক সহিফুল @ সাইফ তানজিকে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। উক্ত মাদ্রাসায় অবস্থানকালীন সময়ে বিয়ের প্ররোচণায় তাকে জঙ্গিবাদে প্রলুব্ধ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত জান্নাতুল নাঈমা‘কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে চট্রগ্রামের একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। সে ২০১৬ সাল থেকে নিয়মিতভাবে ফেসবুক ব্যবহার করে আসছে। ফেসবুকের একটি গ্রুপে বিভিন্ন নারী সদস্যদের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে আনসার আল ইসলাম নামীয় জঙ্গি সংগঠনের অর্ন্তভূক্ত হয়। সে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মহিলা সদস্য বৃদ্ধিতে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালিত করছে। ইতিপূর্বেও সে বেশ কয়েকজন মহিলাকে জঙ্গিবাদে অর্ন্তভূক্ত করেছে।
নাঈমাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার সহযোগী অন্যান্য সদস্যদের প্ররোচনায় সাইফ‘কে বিবাহ করার জন্য কুরআন হিফজ করার শর্ত তানজির উপর জুড়ে দেয়া হয়। পূর্ব পরিকল্পনা ও সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নাঈমা কর্তৃক তানজিকে নিয়ে বরিশাল এসে সেখানকার একটি মাদ্রাসায় তাকে কুরআন হিফজ করার জন্য ভর্তি করবে। মাদ্রাসার ভর্তি, থাকা খাওয়া, ভরণ পোষণের দায়িত্ব সাইফ বহন করবে। সে হিসেবে গত ২৬ জুন ২০১৯ তারিখে তানজিকে নিয়ে সে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা করে। বরিশালে পৌঁছানোর পর সহিফুল @ সাইফ ও নাঈমা কৌশলে তানজিকে নাঈমার আপন বোন পরিচয়ে একই পিতার কন্যা দেখিয়ে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। উদ্দেশ্য হলো উক্ত মাদ্রাসায় অবস্থানকালীন নাঈমার তত্ত্বাবধানে তানজিকে জঙ্গিবাদে প্রলুব্ধ করা ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা।
গ্রেফতারকৃত মোঃ আফজাল হোসেন‘কে জিজ্ঞসাবাদে জানা যায়, সে দীর্ঘদিন ধরে আনসার আল ইসলাম এর সাথে জড়িত। সে বর্তমানে রাজধানী ঢাকার নিকটস্থ একটি এলাকার স্থানীয় সংগঠক। জিজ্ঞাসাবাদে সে সংগঠনের নির্দেশনা অনুসারে মহিলা সদস্যদের দলে অন্তর্ভূক্তি সহ নারী সদস্যদের দ্বারা নাশকতা পরিকল্পনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা উক্তরূপ কার্য দ্বারা ধর্ম ভিরু সহজ সরল ও শান্তিপ্রিয় নারীদেরকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নাশকতা সৃষ্টি ও উগ্রবাদিতায় উদ্বুদ্ধ করে নাশকতা হামলা চালানোর জন্য প্ররোচিত করে আসছিল।
এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।