আজ শনিবার, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বন্দরে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি

নিজেস্ব প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার পরিবহন খাতে দিনের পর দিন চালকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদাবাজি করলেও ছাত্রলীগ নেতা মানুর ওপর হামলার ঘটনায় এখন চাঁদাবাজরা অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে আবার কেউ কেউ নিশ্চুপ রয়েছে। এতে করে সম্প্রতি কয়েকদিন যাবত পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি অনেকট বন্ধ হয়ে গেছে।

সম্প্রতি বন্দর খেয়া ঘাট সংলগ্ন বেবীস্ট্যান্ডে বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়কারী চাঁদাবাজরা পলাতক ও নিশ্চুপ আছে বলে বন্ধ হয়েছে চাঁদাবাজী।

অটোবাইক চালকরা অভিযোগ করে বলেছেন, ‘অটোবাইক মালিক সমিতির সভাপতি মো. আরিফ ও তার লোকজনেরা সংগঠনের নামে প্রত্যেক অটোবাইক থেকে জোরপূর্বক প্রতিদিন ১০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। একইভাবে অটোবাইক ড্রাইভার সমিতির সভাপতি বাবুল মিয়া ও তার লোকজনেরা অটো চালকদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে চাঁদা তুলে আসছিল। অটোবাইক চালকরা দুর্ঘটনায় আহত হলে তাদের সাহায্যের নাম করে দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই সংগঠন দুটো এভাবেই চাঁদাবাজি করে আসছিল। তবে গরীব চালকদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত টাকা আরিফ ও বাবুলের লোকেরা হাতিয়ে নিয়ে তার অর্ধেক ভাগ দেয় বেবীস্ট্যান্ডের সভাপতি ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদকে।

এখানেই শেষ নয়; অটো মালিক সমিতির পরিচয়ে হাবিবুর রহমান ওরফে হাবু এবং অটো ড্রাইভার সমিতির পরিচয়ে দেলোয়ার ওরফে দেলু প্রশাসনকে ম্যানেজ করার নামে প্রত্যেক অটো গাড়ি থেকে মাসিক দেড়শ টাকা চাঁদা উঠিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। তবে তিনশ অটোবাইক থেকে দেড়শ টাকা করে মোট ৪৫ হাজার টাকা উঠিয়ে বন্দর ফাঁড়িতে ২ হাজার এবং থানায় ৬ হাজার টাকা ভাগ দিয়ে বাকি টাকা এই দুই নেতার পটেকে যায় বলে অভিযোগ করেছেন অটোবাইক চালকেরা।

কিছুদিন পূর্বে খান মাসুদের সন্ত্রাস বাহিনী ছাত্রলীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মানুকে কুপিয়ে জখম করে। এই মামলার রেশ ধরে বন্দর খেয়াঘাটে ও বিভিন্ন স্থানে পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া হয়। এর সাথে মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকে। যেকারণে খান মাসুদের সন্ত্রাস বাহিনী গা ঢাকা দিয়েছে। হামলাকারীরা খান মাসুদের লোক হওয়ায় খান মাসুদ নিজেও গা ঢাকা দিয়েছে। তবে পুলিশের অভিযান ও নিরাপত্তার কারণে চাঁদাবাজরা চাঁদাবাজি করতে পারছেনা। যেকারণে চালকরা অনেকটা নিশ্চিন্তে আছে। তবে পুলিশের নিরাপত্তা সত্ত্বেও সুযোগ পেলেই সভাপতি আরিফের ভাই মামুন স্ট্যান্ডে যে কয়টা অটো পায় তা থেকে চাঁদা উঠিয়ে নিয়ে যায়।

এদিকে রিকশা নিয়ন্ত্রণে রাখা লাইন ম্যানকেও দেখা যাচ্ছেনা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রত্যের গাড়ি থেকে দৈনিক ৫ টাকা করে উঠিয়ে রিকশার লাইনম্যানকে দেয় অটো মালিক সমিতির লোকেরা। কিন্তু বর্তমানে সেসব লোকেরা তাদের সংগঠনের জন্য চাঁদা উঠাতে পারছেনা বলে লাইন ম্যানের টাকাও উঠাতে পারছেনা।

চালকেরা আরো জানান, ‘দুর্ঘটনায় আহত চালকদের চিকিৎসায় সাহায্য করতে আমাদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করা হলেও আহত চালকদের সাহায্যের সময় এই টাকা পেতে পেতে চালকদের জুতার তলি খয় হয়ে গেলেও অনেকেই পায়না। যদিও ক্ষমতাবান লোকদের সাথে জড়িত চালকেরা সাহায্যের টাকা কোনভাবে পেয়ে যায়। তবে এই সাহায্যের টাকা কিন্তু সম্পূর্ণটা দেয়া হয়না। এক চতুর্থাংশ দেয় অটোবাইক মালিক সমিতি, এক চতুর্থাংশ দেয় অটোবাইক ড্রাইভার সমিতি। আর বাকি দুই অংশের একটি দেয় অটোবাইকের মালিক আর বাকি এক অংশ চালককে বহন করতে হয়।

চাঁদাবাজির এসব অনিয়মের কারণে চালকরা অনেক আগে থেকে অভিযোগ করে আসলেও কোন মহলই তা আমলে নেয়নি বলে চালকরা জানায়। এদিকে চালক শ্রমিকদের দমাতে সংগঠনের সভাপতি আরিফ ও বাবুল ক্ষমতাসীন দলেও নেতা ও সন্ত্রাসীদের টাকা দিয়ে চালকদের মুখ বন্ধ করে রাখছে। এক কথায় বন্দরের উপর মহল থেকে নিচ পর্যন্ত তাদের কথায় এখন উঠে বসে।