আজ মঙ্গলবার, ১৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বৈধতা পেতে যাচ্ছে ইজিবাইক!

নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ: সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও সয়লাব হয়ে গেছে ইজিবাইক নামে পরিচিত ব্যাটারী চালিত থ্রি-হুইলারে। অথচ এ যানবাহনটির আইনগত কোনো বৈধতা নেই। তার পরও একদিকে যখন বিদ্যুৎ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নানা তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার, অন্যদিকে তখন অধিকাংশ ইজিবাইকেই চার্জ দেওয়া হয় চোরাই বিদ্যুৎ থেকে। সর্বশেষ সংবাদ, ইজিবাইকে যেন বৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়, সে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর নির্দেশে বিভিন্ন দপ্তরে এ সংক্রান্ত চিঠি চালাচালিও শুরু হয়েছে। প্রকারান্তরে এর মাধ্যমে যানবাহন হিসেবে বৈধতা পেতে যাচ্ছে এ ইজিবাইক।

সারা দেশে লাখ লাখ ইজিবাইক বছরের পর বছর অবৈধভাবে চার্জ দিয়ে চালানো হচ্ছে। নেই বিআরটিসির অনুমোদনও। এসব অটোরিক্সার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহারের আলাদা দর নির্ধারণের পাশাপাশি পৃথক চার্জিং স্টেশনও নির্মাণ করতে চায় সরকার। এ ক্ষেত্রে ইজিবাইকে চার্জ দেওয়া বিদ্যুতের পৃথক মূল্যও নির্ধারণ করে দেবে সরকার।

বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানীগুলো বলছে, ইজিবাইকে চোরাই বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কার্যকর কোনো উপায় নেই।
সূত্র জানায়, বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণে সর্বশেষ যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেখানে ইজিবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে পৃথক সø্যাব তৈরির অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনেরও ইতিবাচক সাড়া মিলেছে।

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্প্রতি এক বৈঠকে থ্রি-হুইলারে যথাযথ বিদ্যুৎ ব্যবহার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এর পর বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পিডিবির কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে পিডিবি চেয়ারম্যানকে উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ দীর্ঘ দিন থেকে দাবি করে আসছে, সারা দেশের অন্তত পাঁচ লাখ ইজিবাইকের দৈনিক চার্জ দিতে কমপক্ষে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। এসব যানের অধিকাংশই বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ চুরি করে চার্জ দেওয়া হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, তারা বিভিন্ন সময়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। প্রত্যুত্তরে সড়ক পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রণালয় বলছে, এসব যানবাহনের কোনো বৈধতা নেই। যদিও অবৈধ এ যানবাহন চলাচল বন্ধে মন্ত্রণালয়গুলো থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু আমরা ইজিবাইকের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, তাই এগুলো বৈধভাবে চার্জ করার পন্থা করে দেওয়ার পক্ষে। আমরা চাইছি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) মাধ্যমে চার্জিং স্টেশন করতে। এটা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতেও হতে পারে। এ বিষয়ে শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বেশিরভাগ যানবাহনই ব্যাটারীতে চলবে। এতে ব্যয়ও কম। সব গাড়ি ব্যাটারীতে চালানো গেলে বছরে অন্তত দুই বিলিয়ন ডলারের তেল সাশ্রয় হবে।

এর আগে সৌরবিদ্যুতের চার্জিং-স্টেশন করা হয়েছে যেখানে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে ব্যাটারী চার্জ করা যায়। অবশ্য এতে তেমন সাড়া মিলছে না।

এ প্রসঙ্গে অটোরিক্সা ও ইজিবাইক মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের নেতারা বলছেন, সরকারের হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে অন্তত ৫ লাখ ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও ইজিবাইক রাস্তায় চলাচল করছে। মালিক, চালক ও যন্ত্রাশং সরবরাহকারী মিলে প্রায় ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারীভাবে একটি নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসলে একদিকে বিশাল জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতে এবং বিআরটিএর মাধ্যমে বিশাল অংকের একটি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে। এতে দেশ ও জাতি উভয়েই লাভবান হবে।