আজ শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শীতলক্ষ্যা নদীতে বাল্কহেড যায় চাঁদা পায়

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম করে বাল্কহেড থেকে কনজারভেটের মাধ্যমে চাঁদা উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে।
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে চলাচল করে অসংখ্য বালুবাহী বাল্কহেড। বিভিন্ন সময় বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। তবে বিভিন্ন মাধ্যমকে চাঁদা প্রদানের মাধ্যমে চলাচল করছে বালুবাহী বাল্কহেড।

সরেজমিনে (১৯ জুন) বুধবার দুপুরে শীতলক্ষ্যা বুড়িগঙ্গা মহনার কাছা-কাছি এলাকায় দেখা যায়, ট্রলার নিয়ে বালুবাহী বাল্ক হেডের পিছনে ছুটছে একদল। সাংবাদিকরা পিছু নিলে তাতক্ষণিক ভাবে পালিয়ে যায় ঐ চাঁদাবাজের দল।
অনুসন্ধান দলের একটু সামনেই দেখা মিলে যায় নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ এর একটি দল এই পথের চলন্ত প্রতিটি বালুবাহী বাল্ক হেড থেকে টাকা উত্তোলন করতে। দীর্ঘ সময় লক্ষ করার পরও একই চিত্র দেখা যায়। সামনে গিয়ে জানা যায় বিআইডব্লিউটিএ’র ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারি অভিযান করছেন। এ সময় আরো দেখা যায়, চলন্ত বালুবাহী বাল্ক হেডের গতি রোধ করে টাকা উত্তোলন করছে। তবে টাকা প্রদানকারী বাল্ক হেডের সুকানী, সারেং বালু শ্রমিকদের দাবি, টাকা নিচ্ছে কিন্তু রশিদ দিচ্ছে না।
অপর দিকে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি কনজারভেটের মাধ্যমে টাকা আদায় করা হচ্ছে রশিদ প্রদান করা হচ্ছে।

বালুবাহী বাল্ক হেডের সুকানী বলেন, হঠাৎ করে বাল্কহেড থামাতে বলেন কয়েকজন । পরে জানান তারা বিআইডব্লিউটিএ এর লোক। কর্মকর্তারা কাগজ দেখতে চাইলে তাদের প্রদর্শন করলাম সকল কাগজ দেখে তারা ১ হাজার টাকা নিলেন কিন্তু রশিদ প্রদান করেনি।

অপর আরেক সারেং বলেন, সাত হাজার টাকা নিয়ে বালুবাহী বাল্ক ঘাট থেকে ছেড়ে দিয়েছিলাম এই পর্যন্ত আসতে প্রায় শেষ। ২ শত টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার পযর্ন্ত প্রদান করেছি কিন্তু রশিদ পাইনি।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুজ সিকদার বলেন, নৌপথের চাঁদাবাজি এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। শীতলক্ষ্যা দিয়ে বাল্কহেড যায় চাদাঁ পায়। এছাড়া তিনি আরো বলেন, বিআইডব্লিউটিএর অধীনে ট্রাফিক বিভাগের কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন তারা জাহাজের লাইসেন্স দেখাও বলে দাবি করেন তখন তাদের তাতক্ষণিক ভাবে দেখাতে না পারলে টাকা প্রদান করতে হয়।
আইনে আছে চলন্ত বালুবাহী বাল্কহেডের গতি রোধ করে টাকা আদায় করা যাবে না কিন্তু তারা করছেন। আমরা এই মহামারি ভোগান্তিতে আছি। তবে বিআইডব্লিউটিএ মাঝে মধ্যে অভিযান করে।

ঘটনাস্থলে থাকা বিআইডব্লিউটিএর অধীনে থাকা নৌ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সমর কৃষ্ণ সরকার বলেন,আমাদের লোক আছে আমরা বাল্ক হেড গুলোকে আটক করছি। সব ১ হাজার টাকা করে নিচ্ছি। মানি রিসিভ পরে দেয়া হবে। আমরা ফিটনেস দেখছিনা এখন শুধু মাত্র কনজারভেট করছি। তবে অন্য সময় আমরা ফিটনেসও দেখি।

অপর দিকে বিআইডব্লিউটিএর এমআইএসটির নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বাবু লাল জানান, মাধ্যমে কনজারভেটি আদায় ,বকেয়া আদায় ও যারা টোকেন না নিয়েছে সেই টোকেন আদায় ব্যাবধ ১ হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে। (পরে রশিদ পৌছে দিবো বাল্কহেডে আমাদের লোক আছে) পরে তিনি আবার জানান সাথে রিসিভ দিয়ে দিচ্ছি।
এছাড়া তিনি আরো জানান, যখন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলেন তখন আমরা পরিদর্শন করি। আমরা ৩ দিন ধরে কনজারভেট করছি ও জরিমানা ব্যাবধ টাকা নিচ্ছি।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটি-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মোঃ জাফর হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শীতলক্ষ্যা নদীতে ট্রাফিক বিভাগের কোন অভিযান চলছে তা আমার জানা নেই। তবে অর্থ বিভাগের কমিটির মাধ্যমে অনেক সময় এ সকল উদ্যোগ নেয়া হয়। এছাড়া তিনি আরো জানান, যেহেতু ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা ছিলেন তাই বিষয়টি তদন্ত করে যদি কোন অনিয়ম পাই তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত , শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রায় সময় সন্ধ্যার পরও বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল করায় দূর্ঘটনা ও প্রান হানির ঘটনা ঘটছে। বেশ কয়েকবার বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় যাত্রীবাহী নৌ যানে থাকা যাত্রীদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও বন্ধ হয়নি বাল্কহেডে অদক্ষ ও সনদ বিহীন চালক দিয়ে বাল্কহেড পরিচালনা করা।
জানা যায়, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই রাতে শীতলক্ষ্যা নদীর স্কুলঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে ২০ জনের প্রাণহানি ঘটনা ঘটে।
নৌ পথে শৃঙ্খলা ফিরে না আনলে যে কোন সময় বড় ধরণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।আর নারায়ণগঞ্জের নদীগুলোতে বর্তমান জলদস্যুরা বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে।