- যারা হকারদের পক্ষ নেবেন তারা হকারদের বসার জায়গা করে দেবেন: এসপি
- জনগনের বিপক্ষে গিয়ে হকারদের পক্ষে নই
পুর্নবাসনের অনুরোধ – হেলাল
সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
উচ্ছেদ হকাররা পুর্নবাসন না পেয়ে হকার দরদী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে খুঁজছেন । পূর্বে বারংবার উচ্ছেদের শিকার হয়ে শামীম ওসমানের দ্বারস্থ হলে খালি হাতে না ফিরলেও এবার আর শামীম ওসমানকে খোঁজে পাচ্ছেন না তারা। শামীম ওসমান অনুগতদের ধারে ধারে ঘুড়েও কোন সাড়া না পেয়ে হতাশার সাগরে পড়েছেন সাধারণ হকাররা।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত বছরের পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের আগে কঠোর ভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে উচ্ছেদ পরিচালনা করা হয়। সেই সময় হকাররা উপায়ন্তর না পেয়ে নগরীর রাইফলে ক্লাবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের দ্বারস্থ হন। শামীম ওসমান সিটি কর্পোরেশনে অনুরোধ জানান যেনো গরীবের পেটে লাথি না দিয়ে মানবিক দিক বিবেচনা করে রমজান মাসটি ফুটপাতে ব্যবসা পরিচালনা করতে দেওয়া হয়। অনুরোধের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন জোড়ালো কোন উচ্ছেদ পরিচালনা করেনি নি। ঐ সময় এবং সুযোগ লাগিয়ে হকারদের নেতা হয় যান রহিম মুন্সি। হর্কাসলীগের সভাপতি পরিচয় দিতে থাকেন বিভিন্ন জায়গায়। শামীম ওসমানের মিছিল মিটিংয়ে হকারদের একটি বড় অংশকে উপস্থিত করেন নিজের তগারকিতে। জানা যায়, ফুটপাত থেকে হকারদের টাকা উত্তোলন করে বিভিন্ন মহলে পাঠানোর পক্রিয়াটি উনি নিজেই পরিচালনা করে থাকেন।
কিন্তু পরবর্তীতে গত বছরের ১৬ জানুয়ারী ফুটপাতে হকার বসাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী পন্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংর্ঘষ হওয়ার পর পরই এ নেতা কিছু আত্মগোপনে গেলেও আবারও নিজের কর্মকান্ডের সোচ্চার হয়েছেন গত কিছুদিন আগে। শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভী মধ্যেকার ব্যাপক সংর্ঘষের ফলে বেশকিছুদিন হকার শূণ্য ফুটপাত থাকলে সেটা স্থায়ী হয়নি বেশিদিন। সর্বশেষ হকাররা নিজেদের শক্ত অবস্থান করার জন্য আবারও ফুটপাত দখলে নেন গত রমজান মাসে। ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখেই মানবিক দিক বিবেচনা করে হকারদের উচ্ছেদ করেনি জেলা পুলিশ। কিন্তু ঈদ শেষ হবার পর আবারও ফুটপাত দখলে নিতে চাইলে পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী কঠোর উচ্ছেদ চালায় জেলা পুলিশ। যার নেতৃত্ব দেন সয়ং পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ। এমতাবস্থায় হকারদের পক্ষে আবারও মাঠে নামবেন কিনা হকার দরদী শামীম ওসমান সেই প্রশ্নই ভোক্তভুগীদের কাছে।
অনেক হকাররাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পূর্বে সিটি কর্পোরেশন যখন উচ্ছেদ পরিচালনা করেছেন তখন শামীম ওসমানের শক্ত অবস্থানের কারনেই হকাররা আবারও ফুটপাতে ব্যবসা পরিচালনা করে পরিবার নিয়ে চলতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের কোন প্রকার পূর্নবাসন না করেই পুলিশ যেভাবে উচ্ছেদ করেছে এতে আমাদের পথে বসা ছাড়া কোন উপায় নেই। যখন ব্যবসা পরিচালনা করেছি অনেকেই নেতা সেজে আমাদের কাছ থেকে নামে-বেনামে টাকা পয়সা নিয়েছে। কিন্তু সেই সব নেতাদের এখন খুজেই পাওয়া যাচ্ছে না।
শামীম ওসমানের খুব কাছের ঘনিষ্ঠ লোকদের এখানে গেলেও তাদের কাছ থেকেও কোন প্রকার আশানুরুপ উত্তর পাচ্ছি না। আদৌও শামীম ওসমান হকারদের পক্ষে আবারও কাজ করবেন কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন তাদের মাঝে।
তবে উচ্ছেদের দিন পুলিশ সুপার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, আমরা মনে করি আমরা হকারদের বিরুদ্ধে না। তারা একটি জায়গায়, রাস্তা ও ফুটপাত ব্লক না করে বসবেন। কেউ যদি হকারদের পক্ষ নিয়ে কথা বলে থাকেন তাদের কাছে আমাদের প্রস্তাব থাকবে অন্য কোথাও হকারদের বসে দেয়ার ব্যবস্থ করার জন্য। নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের সেবা দেয়ার মানসিকতা নিয়েই কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে, যদি হকাররা আবার বসে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম ওসমান অনুসারী জাকিরুল আলম হেলাল জানান, জনগনের বিপক্ষে গিয়ে হকারদের পক্ষ্যে নিতে পারি না। তবে যেহুতু হকারদের পবিবার পরিজন রয়েছে, সেহুতু তাদের রোজগারের জন্য পূর্নবাসন রয়েছে। না হলে মাদক বা অন্যান্য অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন আগে পূর্নবাসন পরে উচ্ছেদ।
তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, আমরা হকারদের পক্ষে হঠাৎ করেই মাঠে নামি নাই। দেখা যেতো সিটি কর্পোরেশনের লোকজন হুট করে এসেই হকারদের মালামাল নিয়ে যেতো এবং টাকার বিনিময়ে সেগুলা ফিরত দিতো। এটা যেনো সিটি কর্পোরেশনের ব্যবসায় পরিনত হয়েছিল। আর সিটি কর্পোরেশনের উপরের মহলের কর্তা বা কর্তি আমাদের অভিযোগ দিয়ে বলতে হকারদের টাকা নেতাদের পকেটে যায় কিন্তু এখনো কোন প্রকার প্রমান দিতে পারে নি।
তিনি নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমার মনে হয় নারায়ণগঞ্জের সাংসদ সদস্য, মেয়র, প্রশাসনের উচিত তাদের জন্য পূর্নবাসন করা। আমার শিক্ষা গুরু শামীম ওসমান দেশের বাহিরে আছেন, তিনি আসলে হকারদের পূর্নবাসনের করার করণীয় ব্যবস্থা গ্রহন অনুরোধ জানাবো।
শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ নিজামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি পূর্বের ন্যায় ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের, সভাপতি শামীম ওসমানপন্থ’ী জুয়েল হোসেন জানান, নারায়ণগঞ্জের এসপি সাহেব যেই উদ্যোগটি নিয়েছেন, তাকে আমি সাধুবাদ জানাই। অবশ্যই তার উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। কিন্তু আমার মনে হয়, হকারদের পরিবার রয়েছে, তাদের একটি পূর্নবাসন করে উচ্ছেদ করা উচিত।
পুর্নবাসন কি প্রশাসন নাকি জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব এমন প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, উভয়ের দায়িত্ব রয়েছে।
এ বিষয়ে হকার নেতা রহিম মুন্সি সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে ফোন কেটে দেয়, পরবর্তিতে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেন নি।