আজ বুধবার, ২০শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কালির বাজারে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কোটি টাকা আয়কর ফাঁকি

সংবাদচর্চা  রিপোর্ট:
জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা আয় করেন কোটি টাকা তবে সরকারি রাজস্ব বা আয়কর দেখায় লক্ষ টাকা। যে ব্যবসায়ী আয় করেন লক্ষ সে দেখান হাজার টাকা। আয়কর অফিসারদের তো কর দিচ্ছে দেখালেই খুশি। কারন সরকারকে দেখাতে হবে তো তারা কাজ করেন। সরকার প্রাপ্ত আয়-কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে একাধীক আয়কর আইনজীবী মন্তব্য করেন।

তবে ব্যবসা মন্দা, বেচা কেনা খারাপ,স্বর্ণ ক্রয় করে না ক্রেতারা। তাই আয় হয় না তেমন। বিভিন্ন উৎসব গুলোতে কিছু ব্যবসা হলেও আগের তুলনায় অনেক কম বলে দাবি করেন একাধিক জুয়েলারি ব্যবসায়ীরও দোকান মালিরা।

সরকার অধীক আয়কর থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলেন, “কোটি টাকা আয়-কর ফাঁকি দিচ্ছেন কালির বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের স্বর্ণ ব্যবসীরা প্রত্যেকে কর ফাঁকি দেন। আয়কর কর্মকর্তারা তদারকি করেন এসি রুমে বসে। আয়-কর অফিসারা মাঠে তদারকি করে না। মাঠে পরির্দশন করেন ইন্সপেক্টরা তারা কিছু পয়সা নিয়ে চলে যান। অপরদিকে সভা-সম্মেলন করে ব্যায় এর বোঝা বাড়াচ্ছেন সরকারের। আমরা প্রত্যাশা করবো নারায়ণণগঞ্জ কর-অঞ্চলে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের যেন শুভ বুদ্ধির উদয় হয়। এছাড়া ইউয়িনয় পরিষদের জন্য ২ হাজার আর সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা কর প্রদান করতে হয় বলে তিনি জানায়।

আয়করের নারায়ণগঞ্জ সার্কেল ৪ সূত্রে জানা যায়, কালির বাজার স্বর্ণ ব্যবসাীদের ৫০ থেকে ৬০ টি আয়কর ফাইল রয়েছে। বাকিদের আয়করের আওতায় নেই। যারা আয়কর প্রদান করছেন সেখানেও আছে নানা বিধ সন্দেহ। তবে দীর্ঘদিন যাবৎ ঐতিয্যের সাথে ব্যবসা করে আসছেন কালির বাজার স্বর্ণপট্টি এলাকার ৮৫ টি দোকান ও কয়েকশত ব্যবসায়ী ও কারিগড়। সরকারি বিধি অনুশারে, ব্যবসা বা পেশার আয়, নিরাপত্তা জামানতের উপর সুদ, অন্যান্য উৎস হতে আয় প্রদান করতে হবে।

কালির বাজার জুয়েলারি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ কমল দে দৈনিক সংবাদচর্চা কে জানায়,“অনলাইনের মাধ্যমে লাইসেন্স করার ব্যবস্থা থাকলেও জুয়েলারি দোকান মালিকরা বিভিন্ন সমস্যার কারনে লাইসেন্স করতে চায় না। আর এ কারনে সরকার শতভাগ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে তিনি জানান।

নারায়ণগঞ্জ সার্কেল ৪ এর প্রধান সহকারী জানায়,“আমরা তো মাঠে গিয়ে রিটান তৈর করি না। তারা একটি নিদ্দিষ্ট রিটান তৈরি করে আমাদের কাছে জমা দেন। এছাড়া আয়করের আওতায় প্রতি ব্যক্তি তার উপদেষ্টার সাথে পরার্মশও করেন রিটান ফাইলের বিষয়ে। যারা আয় বেশি করে কিন্তু রিটান কম দেখায় তাদের বিষয়ে তদন্ত করে কর্তৃপক্ষ। তবে তারা বিক্রির কোন মূল কাগজতো আমাদের দেখায় না।

কর অঞ্চল নারায়ণগঞ্জের পরিদর্শী রেঞ্জ-২ যুগ্ম কর কমিশনার শাহ মুহাম্মদ ইত্তেদা হাসান দৈনিক সংবাদচর্চা জানান,“কালির বাজারের স্বর্ণ বাজারের দোকান মালিক ব্যবসায়ীদের জন্য কর অঞ্চলের প্যাকেজ থাকতে পারে। আমার ধারণা ছোট দোকান গুলোকে প্যাকেজের আওতায় আনা হয়েছে। ঢাকায় যেমন স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা কর অঞ্চল রয়েছে তাই সেখানে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের উপর আলাদা করে হিসাব পাওয়া যায় কিন্তু আমাদের এখানে এই পদ্ধতি নেই তাই আপনাকে হিসাবের বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারছিনা।

তিনি আরো বলেন, আপনার আয়কর ফাইল আছে প্রতিবেদক চাকুরি করি তাই ফাইল নেই জানালে তিনি বলেন, তাহলে আপনি আয়করের বিষয়ে বুঝবেন কিভাবে। জানেন তো বাংলাদেশে এক বড়ি স্বর্ণ আমদানি করা হয় না। যা আসে অবৈধ ভাবে আসে তবে এ সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই মনে হয় আপনারও নেই। জুয়েলারির বিষয়টা আমাদের আলাদা করে দেখা হয় না। এছাড়া আলাদা করে হিসাবও করা হয় না। নারায়ণগঞ্জে জুয়েলারির জন্য আলাদা কোন কর অঞ্চল নেই।

উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এবিআর) সূত্রে জানা যায়, অর্থ আইন ২০১৫ এর আওতায় প্রত্যেক ব্যক্তি করদাতা (অনিবাসী বাংলাদেশী সহ), হিন্দু যৌথ পরিবার, অংশীদারী ফার্ম, ব্যক্তি সংঘ এবং আইনের দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তির আয়ের সীমা ২,৫০,০০০/= টাকার উপরে হলে আয়কর প্রদানের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। তবে (১) মহিলা এবং ৬৫ বৎসর বা তদুর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের আয়ের সীমা ৩,০০,০০০/= টাকা এর উপরে হলে তিনি আয়কর প্রদানের উপযুক্ত হবেন। (২) প্রতিবন্ধি করদাতাদের আয়ের সীমা ৩,৭৫,০০০/= টাকা এর উপরে হলে তিনি আয়কর প্রানের উপযুক্ত হবেন। (৩) গেজেট ভূক্ত যুদ্ধাহত মুক্তি যোদ্ধাদের আয়ের সীমা ৪,২৫,০০০/= টাকা

উপরে হলে তিনি আয়কর প্রদানের উপযুক্ত হবেন। যে সকল খাত গুলো থেকে আয়কর প্রধান করতে হবে। বেতনাদি, নিরাপত্তা জামানতের উপর সুদ, গৃহ সম্পত্তির আয়, কৃষি আয় , ব্যবসা বা পেশার আয়, ফার্মের আয়ের অংশ, স্বামী / স্ত্রী বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের আয়, মূলধনী মুনাফা ,অন্যান্য উৎস হতে আয়।