আজ মঙ্গলবার, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা!

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার লিফলেটেরে বিষয়ে আগামীকাল জানানো হবে : আরএমও

লিফলেটরে বিষয়ে আমি কিছু জানিনা আপনারা অফিসে এসে কথা বলেন : সিভিল সার্জন

হাসপাতালের ঔষধ চুরি হচ্ছে এবং সেই সকল ঔষধ খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে : সাঃ সম্পাদক নাগরিক কমিটি

হাসপাতালের এ আচারণে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই : সাঃ সম্পাদক সুজন

হলুদ পত্রিকা বলা মানে সকল পত্রিকাকে হলুদ বলা যারা পোষ্টার লাগিয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি: সম্পাদক লাইভ নাঃ গঞ্জ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ। সাংবাদিকরা ওই হাসপাতালে না প্রবেশ করলে তারা খুব সহজেই তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে পারবে। অনুসন্ধানের মাধ্যমে পরপর ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের বিভিন্ন অপকর্ম নারায়ণগঞ্জের বহুল প্রচারিত দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকায় তুলে ধরায় কোন দিক খুজে না পেয়ে অবশেষে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে একটি পোষ্টার ইমার্জেন্সি কক্ষে সাটিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই পোষ্টারের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকরা ধিক্কার জানিয়েছে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের কৃর্তপক্ষের প্রতি। বলাচলে সাংবাদিক সমাজের তোপের মুখে ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ।

শুক্রবার (১০ মে) সরেজমিনে গিয়ে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে দেখা যায় ওই পোষ্টার। পোষ্টারে হাসপাতাল কৃর্তপক্ষের নির্দেশক্রমে বলাছিলো হলুদ পত্রিকা “সংবাদচর্চা” এর হলুদ সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ।

জেলার প্রবীণ সাংবাদিকদের প্রশ্ন, কিভাবে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকদের হাসপাতালে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়? কোন প্রমাণ ছাড়া পত্রিকার সাংবাদিকদের কিভাবে তারা হলুদ সাংবাদিক বলে? তাদের মতে, এটা তাদের জন্য লজ্জা। কারণ সাংবাদিকরা বিভিন্ন স্থান, ক্ষেত্র, বিষয় ইত্যাদিকে ঘিরে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংবাদ সংগ্রহসহ বিভিন্ন ধরণের তথ্য সংগ্রহপূর্বক সংবাদ কিংবা প্রতিবেদন রচনা করে সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরণ করে থাকেন। পেশাজীবি হিসেবে একজন সাংবাদিকের কাজই হচ্ছে সাংবাদিকতায় সহায়তা করা। সমাজের যে সকল জায়গাগুলোতে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, যে সকল জায়গা গুলোতে অপরাধ ও অনিয়ম হচ্ছে সেগুলোই সাংবাদিকরা তাদের লিখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেন। সেই ধারাবাহিকতায় ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ঘটে এমন বিভিন্ন অপকর্ম তুলে ধরায় সাংবাদিকদের তারা হাসপাতালে ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। একটা স্বাধীন দেশে এটা হতে পড়ে না। যে খানে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা দেয়া হয় সেখানে অবাধে চলে দুর্নীতি অপকর্ম। তাদের এই কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে বোঝা যায় হাসাপাতালের ভিতরে আরও বিভিন্ন অপকর্ম তারা করে থাকেন। যার কারণে সাংবাদিকদের তারা ঢুকতে নিষেধ করেছেন।

নারায়ণগঞ্জের প্রবীন সাংবাদিক ও লাইভ নারায়ণগঞ্জ ডক কমের প্রকাশক ও সম্পাদক কামাল হোসেন নারায়ণগঞ্জ-১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃক সাংবাদিকদের অপপ্রচারের বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন একটি গণমাধ্যমকে হলুদ পত্রিকা বলা মানে জেলার সকল পত্রিকাগুলোকে হলুদ পত্রিকা বলা। যারা এ সকল পোষ্টার লাগিয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। এছাড়া সিভিল সার্জন ও আর এম ও কি করে নির্দেশনা দেন এবং একটি পত্রিকার বিরুদ্ধে এ রকম দুঃসাহস দেখাতে। আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানাবো সিভিল সার্জন ও আর এম ও এর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। এছাড়াও সকল সাংবাদিকদের এ ধরনের নেক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মসূচী গ্রহণ করা উচিত।

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে প্রচার করা লিফলেটের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, লিফলেটরে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। হলুস সাংবাদিক বিষয়ে সমাজে একটি ধারণা রয়েছে তবে হলুদ পত্রিকা বলতে কি বুঝায় তা জানতে চাইলে তিনি বলেন যে পত্রিকায় হলুদ সাংবাদিক কাজ করে সেই পত্রিকাও হলুদ পত্রিকা হিসেবে চিহ্নিত হয়। দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকায় যে সকল সাংবাদিক কাজ করছেন তাঁদের মধ্যে হলুদ সাংবাদিক কে সেটাকি সনাক্ত করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এরিয়ে তার অফিসে এসে সরাসরি কথা বলতে বলেন।

নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা তত্তাবধায়ক (আরএমও) আসাদুজ্জামানের কাছে হলুদ পত্রিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা হলুদ সাংবাদিক তাঁদের হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার লিফলেটেরে বিষয়ে আগামীকাল জানানো হবে।

পত্রিকা ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল ও খানপুর হাসপাতালে প্রতিনিয়ত ঔষধ চুরি হচ্ছে এবং সেই সকল ঔষুধগুলো খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে অহরহর। নারায়ণগঞ্জ-১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার নেই সাংবাদিক কিংবা কোন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর। যেকোনো সাংবাদিক কিংবা পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্টরা কোন সংবাদ প্রকাশ করতে পারে। সে সংবাদের বিষয়ে যদি কর্তৃপক্ষের কোন অভিযোগ থাকে তাহলে তারা সেটার বিরুদ্ধে আইনগত কিংবা প্রতিবাদ পাঠাতে পারেন।

নারায়ণগঞ্জ সুজন সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, হাসপাতালের এ সকল আচরণে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অপকর্ম প্রকাশ পেয়েছে সেই প্রতিবেদন করলে সাংবাদিকদের হাসপাতলে ঢুকতে দেওয়া হবেনা এটা কোন আইনে আছে তা আমার জানা নেই। নারায়ণগঞ্জ সুজন প্রত্যাশা করে ঔষুধ চুরির বাহিরে আরো যে সকল দুর্নীতির ঘটনা রয়েছে তা পত্রিকায় প্রকাশ করা হবে।

অপর দিকে গণমাধ্যম নাগরিকদের বহুমুখীন যোগাযোগের পাটাতনটি তৈরি করে দেয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মানে যেহেতু খোলা সমাজ, তাই মানুষকে এখানে বহু স্তরের বহু পর্যায়ে বহু ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। গণমাধ্যম মানুষের জন্য তথ্যের বৃহৃত্তর প্রবেশগম্যতা তৈরি হয়। সরকারকে চোখে চোখে রাখার মধ্য দিয়ে ‘গণতন্ত্রের প্রহরী’র ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যম পাবলিক ডিবেট উসকে, পলিসি এজেন্ডা নির্ধারণ করে, নাগরিক মতামতের ফোরাম তৈরি করেÑ যেখানে জনগণ রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে তাদের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। দুর্নীতির ওপর সার্চলাইট ফেলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাজে স্বচ্ছতা নির্মাণ করে। অমর্ত্য সেন যেমন বলেছেনÑ রাষ্ট্রের গণমাধ্যম স্বাধীন হলে ঠেকিয়ে দেওয়া যায় দুর্ভিক্ষও। গণমাধ্যম প্রতিনিয়ত জনপরিসর বাড়িয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের মাঝে সেতু গড়ে। প্রতিদিনের রাজনৈতিক ইস্যু/বিতর্ক তুলে ধরে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি মনিটর করে। বহু স্বার্থ বহু কণ্ঠস্বর তুলে ধরে। সরকারের কাজের রেকর্ড, তাদের মিশন-ভিশন, নেতাদের পারঙ্গমতা তুলে ধরে।

শাসন প্রক্রিয়ায় জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণকে সম্ভব করে তোলে। জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ভুলে গেলেও গণমাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা নিজেদের ব্যক্তি জীবনকে দূরে ঠেলে দূর্যোগ, সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ, সুখ ও শান্তিতে সমান তালে কাজ করে যায়। যে সকল গণমাধ্যমকর্মীরা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ, পরিবার-পরিজনের বিষয় বস্তুকে পরিহার করে দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে সে গণমাধ্যম কর্মীদেরই পদে পদে হেনাস্তার শিকার হতে হয়।

গত ৫ মে নারায়ণগঞ্জের স্বাস্থ্য খাতের কলঙ্ক বেরিয়ে এসেছে দৈনিক সংবাদচর্চার বিশেষ অনুসন্ধান প্রতিবেদনে। নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা খানপুর হাসপাতাল থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের স্থির চিত্রগুলো যেন নিজে নিজেই কথা বলে। কি হচ্ছে না এ সকল সরকারি হাসপাতালগুলোতে। বর্তমান প্রেক্ষপট অনুযায়ী বিশ্লেষন করলে নারায়ণগঞ্জের এ সকল সরকারি হাসপাতালগুলো যেন প্রকৃতপক্ষে হাসপাতাল নয়, এগুলো একেকটি সোনার ডিম পাড়া হাঁস নয়তো সোনার হরিণ। হাসপাতালগুলোর ভঙ্গুর দশা দেখে মনে হয় দেখার যেন কেউ নেই!

বহুল প্রচারিত দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকায় নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স দ্বারা সরকারি ঔষুধ চুরি সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের প্রেক্ষিতে গতকাল ৮ মে (বুধবর) নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া দুই জন নারী সাংবাদিককে ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের নার্স সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। অবরুদ্ধ যারা ছিলেন তারা হলেন, দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকার সাংবাদিক মনি ইসলাম এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক সবার কণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক মনিকা আক্তার।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা সরকারি প্রতিষ্ঠানে এক স্থানে বেশি দিন চাকরি করে তারা জনগণের সেবক না হয়ে হয় দানব। ভিক্টোরিয়া ও খানপুর হাসপাতালে একাধিক ডাক্তার নার্স সহ কর্মকর্তা আছে যারা দীর্ঘ দিন এখানে চাকরি করছে। কোন বদলি হয় না। যে সকল বিতর্কীত নার্স এবং ডাক্তার এখানে চাকরি করছে তাদের বদলি চায় নগরবাসি।