আজ মঙ্গলবার, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

‘মৃত্যুশয্যায়ও ওয়াসার পানি পান করবে না!

 আমাদের কিছু করার নেই- ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী

সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত
পানির জারের (ফিল্টার) জন্য অপেক্ষা করতে করতে একটা সময় অধৈর্য্য হয়ে পরেন মমিনুল ইসলাম। শেষতক পানি না পেয়ে তার বাড়ির পাশে থাকা অফিস কর্মকর্তাদের সাথে শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক। এরপর এক পর্যায়ে হাতাহাতি। ঘটনাটা নগরীর চাষাড়াস্থ মাধবিলতা প্লাজার সিটি ডায়গনস্টিক সেন্টারের পাশে থাকা পানি জারের অফিসে। কি হয়েছে জানতে ছুটে যায় দৈনিক সংবাদচর্চার প্রতিবেদক।

সরেজমিনে গিয়ে মমিনুল ইসলামের কাছ থেকে জানা যায়, টেবিলে ভাত নিয়ে ২০ মিনিটের উপরে বসে আছে তার পরিবার। অথচ অনেক্ষণ যাবৎ পানি জারের কর্মকর্তাদের বলা হলেও তারা এখনো পানি দেয়নি। যার কারণে পরিবারের কেউ খাবার খেতে পারছে না। ওয়াসার লাইন আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, ওই পানি কি পান করা যায় নাকি! একটা মানুষ যখন মৃত্যুা শয্যায় থেকে পানি চাইবে ওই মূহুর্তেও তাকে ওয়াসার পানি খাওয়ানো উচিৎ নয়। তাহলে সে ওই পানি খেয়েই মারা যাবে। ময়লা, দূর্গন্ধ ওয়াসার পানির মধ্যে। খাওয়া তো দূরে থাক ওই পানি দিয়ে গোসল করলেও ৬ ঘন্টার আগে শরীর থেকে দূর্গন্ধ যায়না। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে কখনোই ওই পানি পান করা সম্ভব নয়। আর তাই প্রতিদিন ৩৫ টাকা দরে একটি পানির জার অর্ডার করি। সেই পানি ঠান্ডা করে আমরা পান করি।

ওয়াসা সর্ম্পকে এমন গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি পরিষ্কার করতে ছুটে যাওয়া হয় নগরীর খানপুর জোড়া ট্যাংকি কম্পাউন্ড ঢাকা ওয়াসা নারায়ণগঞ্জ মড্স’র নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে। মমিনুল ইসলামের সম্পূর্ণ অভিযোগটি তুলে ধরা হয় নির্বাহী প্রকৌশলী মীর আবুল হাশেমের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ তো নারায়ণগঞ্জ নাহ্! এটাও ঢাকা ওয়াসা।

এ বিষয়গুলো সব সেন্ট্রালি (কেন্দ্র থেকে) হয়। হেড অফিস থেকে হয়, কর্মকর্তা আছে সেখান থেকে হয়। আমাদের এখান থেকে কিছুই করার নাই! আমরা কোন রিপোর্ট দিতেও পারি না কোনও রিপোর্টের জবাবও দিতে পারি না। সাংবাদিকরা এমডি’র কাছে যায় উনি না থাকলে ডিএমডি আছে ওনাদের কাছ থেকে তথ্য নেয়। আমরা কথা বলতে গেলে তো এরকম ৩০-৩৫ জন এক্সিকিউটিভ আছে নারায়ণগঞ্জে। ৩০ জনে কথা বললে ৩০ রকম হয়ে যাবে। নতুন ব্যবস্থার কিছুই নেই। যেভাবে ওয়াসা চলছে সেভাবেই চলবে। আমরা নিয়মিত আমাদের কাজকর্ম করছি। যেইটা দেখছে সবাই পত্রিকায় সেইটা তো হয়ছেই। এটা নিয়ে মন্ত্রীও রিপোর্ট করছে। মন্ত্রী রিপোর্ট করার পরে তো আর সাংবাদিকদের বক্তব্য নাই, সবাই ঠান্ডা হয়ে গেছে। এলজিইডি’র মন্ত্রী বলছে না। এরপরে কি আর কোন কথা থাকে নাকি!

আরও তথ্য প্রয়োজন হতে পারে এমন কথা বলে একটি ভিজিটিং কার্ড চাওয়া হয় তার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, কার্ড নাই!

নগরীর বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষের সাথে কথা হয় ওয়াসার পানির বিষয়ে। তাদের মতে, খুবই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা বসবাস করছি। যেখানে সব সেক্টরে উন্নতি হচ্ছে অথচ বিশুদ্ধ পানি পাইনা আমরা। এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার। নারায়নগঞ্জে ওয়াসা অফিসে শুধু শুধু বেতন দিয়ে কর্মকর্তাদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। কয়েকদিন পরপরই তো পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। ওয়াসার অফিসের সামনে মানববন্ধন হচ্ছে। এরপর আর কিভাবে? যেখানে ওয়াসার কর্মকর্তারাই জারের পানি পান করেন সেখানে আর বলার কি থাকে।

সচেতন মহলের মতে, পানির ওপর নাম জীবন। সেক্ষেত্রে দেশের উন্নয়ণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ওই পানি নামক জীবনটি পৌছে দেয়া সরকারের দায়িত্ব। একবিংশ শতাব্দিতে এসে পানির জন্য কষ্ট এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। আর তাই খুব শীঘ্রই ওয়াসার সকল লাইন সংস্কারের বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল সুপেয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং গভীর নলকূপের উপর অযৌক্তিক করারোপের প্রতিবাদসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা ওয়াসা হটানোর দাবীতে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠন ও ওয়াসা হটাও সংগ্রাম কমিটি। ওইদিন তারা নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করেন।