সংবাদচর্চা রিপোর্ট
সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক ইয়াদ পত্রিকার সাংবাদিক এস এম আলামিন (৩৮) ও তার সহধর্মীনি রত্না জাহান বিউটির (৩২) ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ উপজেলার কাচঁপুর সোনাপুর এলাকার আলাউদ্দিন মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া বাদী দৈনিক ইয়াদ পত্রিকার সাংবাদিক এস এম আলামিনের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, হারুন অর রশিদের পুত্র ১নং বিবাদী ইকবাল হোসেন (৩৫), ২নং ইমাম (৩২), ১নং বিবাদীর ভাতিজা ৩নং সজিব (২২), ৪নং হারুন অর রশিদ (৫৫), ৫নং জিয়া (৩৫), ৬নং তৌহিদুল (৪০) ও ৭নং চানঁ বাদশা (২৮) সহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সকল বিবাদী মামলার বাদী আলামিনের পাশ্ববর্তী এলাকায় বসবাস করে।
উপরোক্ত বিবাদীরা পরস্পর একদলভুক্ত, উশৃঙ্খল, দাঙ্গাবাজ, পরধনলোভী ও খারাপ প্রকৃতির লোক। তারা ওই এলাকায় বিভিন্ন অরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী প্রায় অতিষ্ট। উপরোক্ত মামলার বাদী অর্থ্যাৎ সাংবাদিক আলামিন ওই বিবাদীদের চাদাঁবাজী, মাদকসহ অন্যান্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে পত্রিকাতে রিপোর্ট করে। সেই সূত্রে দীর্ঘদিন যাবৎ তার সাথে তাদের বিরোধ চলছিলো। ওই বিরোধের জের ধরে বিবাদীগণ বিভিন্ন সময় বাদী পক্ষকে ভয়-ভীতি সহ বিভিন্ন হুমকী-ধামকী প্রদান করতো।
এরই ধারবাহিকতায় গত ৪ এপ্রিল আনুমানিক রাত ৯টার দিকে বাদী আলামিন ও তার স্ত্রী বিউটি স্বর্ণকারের দোকানে যাওয়ার পথে মতিন খান প্লট বিল্ডিংয়ের সামনে পৌছানো মাত্র উপরোক্ত বিবাদীগণসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২ থেকে ৩ জন বিবাদী তাদের পথরোধ করে দাড়ায়। এরপর তাদের সাথে কথা আছে বলে ওই জায়গা থেকে ৫০ গজ উত্তরে তিন তলা বিশিষ্ট একটি ভবনের ছাদে নিয়ে যায়। তারপর বিবাদীদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় চাদাঁবাজী, মাদক, ধর্ষণের মামলার রিপোর্ট পত্রিকায় প্রকাশ করার জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হাতে ধারালো চাকু, পিস্তল, লোহার রড, কাঠের ও বাশের লাঠি সোটা ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ বেআইনী জনতা দলবদ্ধ হয়ে সকল বিবাদী তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। সেই সাথে এলোপাথাড়ীভাবে কিল, ঘুসি ও লাথি সাথে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আলামিনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম করে। ১নং বিবাদীর হাতে থাকা পিস্তল তার মাথায় ঠেকায়। তারপর পিস্তলের বাট দিয়া তার মাথায় আঘাত করে গুরুতর জখম করে। ৩নং বিবাদী সজিবের হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথায় এবং দুই পায়ে উপর্যুপরী কুপিয়ে গুরতর জখম করে।
২নং বিবাদী ইমামের হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে তার ডান হাতে কুপিয়ে কাটা গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। অন্যান্য বিবাদীদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ী ভাবে পিটিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। ওই সময় বাদী আলামিনকে বাচাঁনোর জন্য তার স্ত্রী বাধাঁ দিলে বিবাদীগণ তার স্ত্রীকেও মারধর করে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম করে। সেই সাথে জামা-কাপড় টানা হেচঁরা করে শ্লীলতাহানি করে। ১নং বিবাদী তার স্ত্রীর গলায় থাকা ১০ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন, ৪ আনা ওজনের স্বর্ণের কানের দুল যার মূল্য ৪০ হাজার টাকা। বাদী আলামিনের মানিব্যাগে থাকা নগদ ১০হাজার টাকা, সাংবাদিক আইডি কার্ড সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয় বিবাদীরা। সেই সাথে বাদী আলামিন ও তার স্ত্রীর ব্যবহৃত দুইটি হাওয়াই মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় বিবাদীগণ। যার মূল্য (১৪০০০+১৪০০০) ২৮ হাজার টাকা। এমতঅবস্থায় তাদের ডাক-চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে উক্ত বিবাদীগণ সকলের সামনে প্রকাশ্যে হুমকী প্রদান করে বলে তাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করলে সেই সাথে তাদের অবৈধ কার্যকলাপে বাধা দিলে সময়সুযোগ মতো বাদী আলামিনকে রাস্তায় একা পেলে মেরে ফেলবে। এমনকি যেকোন ক্ষতিসাধন করবে বলেও তারা হুমকী প্রদান করে চলে যায়।
পরবর্তীতে উপস্থিত লোকজনের সহযোগীতায় আহত আলামিন নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে।
জানা যায়, ঘটনার পর মামলার কয়েকজন বিবাদী পালিয়ে থাকলেও বেশ কয়েকজন ওই এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। কিন্তু ঘটনার ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনোও পর্যন্ত সোনারগাঁ থানা পুলিশ বিবাদীদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারে নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ অনুযায়ী, বিবাদীদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর বিষয়ে মামলার আয়ু তথা তদন্ত কর্মকর্তা সোনারগাঁ থানার থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) তানভীর আহমেদের কাছে জানতে চেয়ে মুঠোফোন করা হলে তিনি দৈনিক সংবাদচর্চার প্রতিবেদককে বলেন, আমরা সর্বাতœক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আসামীদের ধরার ব্যাপারে। প্রায় প্রত্যেকদিনই আমরা ওই এলাকায় আমাদের সোর্স দিয়ে খোজ-খবর রাখছি। আসামীদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যদি এমন হতো তাহলে অবশ্যই আমরা জানতে পারতাম। যেহুতু একজন কলম সৈনিকের ওপর তথা সাংবাদিকের ওপর হামলা করা হয়েছে সেহুতু আমাদের অভিযান ও তদন্ত সবসময় অব্যহত আছে এবং আশা করছি অতি শীঘ্রই মামলার আসামীদের আমরা ধরতে পারবো।