আজ শনিবার, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আদৌ কি বিএনপি রাজপথে অবস্থান করতে পারবে

# আমার কোন মন্তব্যে নেই- সাখাওয়াত
# যুবদলের কমিটি ঘোষণার পর নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ কম পেয়েছি- টিটু
# ছাত্রদল ছাড়া বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম কখনোই সফল হয়নি- রনি

সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত
কেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার পরপরই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে টানা দুইদিন নারায়ণগঞ্জের রাজপথ কাপিয়েছে যুবদলের নেতাকর্মীরা। এবার ঘোষণা করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তবে কেন্দ্র ঘোষিত এই কমিটি নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। যার কারণ নব্য ঘোষিত নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ২০৫ সদস্যের ওই কমিটির অনেক নেতাকর্মীদের সাথে সরকার দলীয় লোকেদের সাথে আতাত রয়েছে। এছাড়াও বেশীরভাগ নেতাকর্মী শুধুমাত্র ফটোশেসনের রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ। সবমিলিয়ে কেন্দ্র ঘোষিত ওই কমিটিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্রমসই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এদিকে আসছে না নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তবে খুব দ্রুত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি পূর্ণগঠন করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলসহ সকল স্তরের নেতাকর্মীদের সমস্যার যেনো কোন অন্ত নেই। আর তাই আদৌ কী তারা নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে অবস্থান করতে পারবে? এমনটাই মনে করেন জেলার রাজনৈতিক বোদ্ধামহল।

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সকল স্তর তথা অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রধান দূর্বলতার মধ্যে ক্ষমতা ও অর্থের প্রলোভনে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আতাত, হামলা-মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো, তাছাড়া শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের কখনোই মাঠে নামতে দেখা যায় না। সচেতন মহলের প্রশ্ন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষ নেতারা যদি মাঠে না নামে তাহলে কী তাদের অধিকার আদায় করা সম্ভব? বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুসারে কেন্দ্র থেকে যখন যাদের নির্দেশনা দেয়া হয় সেই হিসেবেই তারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেন। তাহলে সকল কার্য যদি কেন্দ্র থেকেই পরিচালিত হয় তাহলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দায়-দায়িত্ব কী। দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে যদি কেন্দ্রের ঘোষণা ছাড়াই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে নামে তাহলে কী কেন্দ্র থেকে তাদের মাঠে নামার জন্য না করা হবে। তাহলে কেনো তারা কেন্দ্রের ঘোষনার আশায় বসে থাকে। নেত্রীর মুক্তির দাবীতে যদি নারায়ণগঞ্জ অচল করে দেয়া হয় তাহলে কেন্দ্র থেকে কী নিষেদ করা হবে। তাহলে কেনো তারা আন্দোলন সংগ্রামের ব্যাপারে কেন্দ্রের অযুহাত দেয়। মূলত দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকার ফলে বিএনপির বেশীরভাগ নেতাকর্মীরাই সরকার দলীয় লোকেদের সাথে আতাতে জড়িয়ে পরছে। যার কারণে তাদের রাজপথে তো দূরে থাক নেত্রীর মুক্তির দাবীতে মুখ খুলতে দেখা যায় না।

শুধুমাত্র নব্য গঠিত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু ও মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের নেতৃত্বে বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মী নিয়ে রাজপথে টানা দুইদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। পুলিশি বাধা অতিক্রম করে তারা নেত্রী মুক্তির দাবীতে রাজপথে শ্লোগান দিয়েছে, মিছিল করেছে। এবার দেখার পালা গতকাল কেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির দায়িত্ব যাদের ওপর দেয়া হয়েছে তথা যাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদবী দিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা কী করে। যুবদলের মতো তারও যদি রাজপথ দখলে নেয়ার চেষ্টা করে তাহলে অবশ্যই জেলার রাজনীতিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করেন জেলার সাধারণ মানুষ।

জেলা বিএনপি, জেলা ও মহানগর যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি কবে নাগাদ ঘোষণা করা হতে পারে এমন প্রশ্ন জানতে চাইলে সহ-সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। সাখাওয়াতের এমন বক্তব্যের পর দৈনিক সংবাদচর্চার প্রতিবেদক প্রশ্ন করেন আপনি তো মহানগর বিএনপির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন আর সে কারনেই আপনার কাছে জানতে চাওয়া। পরবর্তীতে তিনি প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করেন সহ-সভাপতি কী কোন গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট?

মহানগর বিএনপির কমিটি তো পূর্ণগঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাখাওয়াত আরও বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্যে নেই।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেলের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তার নাম্বার বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের কমিটি ঘোষণা করার পর নেতাকর্মীরা টানা দুইদিন নেত্রীর মুক্তির দাবীতে রাজপথে আন্দোলন করেছে। তবে জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি নিয়ে অনেক নেতাকর্মী অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, আমি চেয়েছিলাম একটি স্বচ্ছ কমিটি করার জন্য। আমি আল্লাহর রহমতে জেলা যুবদলের এবারের কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করার পরে আমি নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ বা বিরোধীতা খুবই কম দেখতে পেয়েছি। যারা ভালো পদের চিন্তা করেছে কিন্তু যেতে পারে নাই তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে কিন্তু তাদের সাথে আমি আলোচনা করে মিমাংশা করেছি।
তিনি আরও বলেন, আজকে এক যুগেরও বেশী সময় ধরে দল ক্ষমতায় নেই। এত হামলা-মামলা, নির্যাতিত হওয়ার পরেও আমরা রাজপথ থেকে সড়ে দাড়াই নাই। সেই সাথে দলের হাল ছাড়ি নাই বরং দলকে আরও সুসংগঠিত করার জন্য সর্বাতœক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গত ২৪ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জে কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। কিন্তু খুব কম সময়ের মধ্যে তথা ৪ মাসের মাথায় আমি এই কমিটি করেছি। কেন্দ্র থেকে আমাকে অনেক ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি আওয়ামী লীগের দালাল কমিটি হিসেবে আখ্যা দিয়ে শহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, ওরা কীভাবে নারায়ণগঞ্জে প্রোগাম করে সেটাও একটি দেখার বিষয়। আমরা চেষ্টা করবো তাদেরকে প্রতিহত করতে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদল বিএনপির ভ্যানগার্ড খ্যাত। ছাত্রদল ছাড়া বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম কখনোই সফল হয়নি হচ্ছেও না এবং ভবিষ্যতেও হবে না। আমরা সবসময়ই রাজপথে ছিলাম আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। কেন্দ্র থেকে যখন যেভাবে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আমরা সেই মোতাবেক দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতার যখন আমাদের ডাক দেয় আমরা সাড়া দেই। কেন্দ্রীয় নেতাদের দেওয়া কর্মসূচী ছাড়াও নেত্রীর মুক্তির দাবীতে আমরা সবসময়ই দাবী জানাই।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন করে রাজপথে শুধু নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবদলের আন্দোলন বিএনপির অধিকায় আদায় কিংবা নেত্রীর মুক্তির জন্য যথেষ্ট না। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সব নেতাকর্মীরা যতি একত্রে দাবী আদায়ের লক্ষ্যে মাঠে নামে তাহলেই কেবল অধিকার আদায় করা সম্ভব হতে পারে। এমনটাই মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক বোদ্ধামহল।