আজ শনিবার, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পরাজয়

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
ব্যবসায়ী সংগঠন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের দেয়া চব্বিশ ঘন্টার আল্টিমেটাম কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে সংগঠনটি। গতকাল বুধবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে শহরের চাঁনমারীতে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কার্যালয়ে এক প্রতিবাদ সভায় এ কথা জানান সংগঠনটির সভাপতি ১৯৭১ সনের পাক হানাদার বাহিনীর নারায়ণগঞ্জ শান্তিকমিটির পরিচালক গোলাম রাব্বানী খান এর ছেলে খালেদ হায়দার খান কাজল।

পুলিশ প্রশাসনকে ক্ষমা চাইতে ও নারায়ণগঞ্জ শহরকে অচল কেরা দেয়ার ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম থেকে সরে আসলেও স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান খালেদ হায়দার খান কাজল নতুন করে একটি হুঙ্কার প্রদান করেন। আগামী রবিবার (৭ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার কাছে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি প্রদান করবেন বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, প্রশাসনের মাধ্যমে এর কোন সমাধান না হলে যেকোন কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে বলে হুসিয়ারি প্রদান করেন তিনি।

এ দিকে স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান ব্যবসায়ী সংগঠন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলের অতি রঞ্জিত বক্তব্য নিয়ে নগর জুড়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক দল তথা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রধানকারী আওয়ামী লীগের ক্ষমতায়নের সময় একটি স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সদস্য সরকারের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই ভাবে হুঙ্কার দিবে সেটা অবশ্যই কারো কাম্য নয়। তবে অবিশ^াস হলেও এটা এখন হচ্ছে এবং হয়তো আগামীতেও হবে। বিশ্লেষকরা আরো মনে করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান তার ব্যক্তি প্রয়োজনে এ সকল স্বাধীনতা বিরোধীদের মূল ধারার রাজনীতিতের প্রবেশ করাচ্ছেন। তবে প্রকৃত সত্য এই যে, ১৯৭১ সালে যেভাবে দখলদার পাক হানাদাররা ও তাদের দোশররা এ দেশের মুক্তিকামীদের হাতে পরাজিত বরণ করেছিল ঠিক সেই ভাবেই আবারও পরাজয়ের স্বাদ বরণ করলো স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা।

গত সোমবার (১ এপ্রিল) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবাস চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে ফতুল্লার পাগলা এলাকায় অবস্থিত ভাসমান রেস্টুরেন্টে ও বার মেরিএন্ডারসনে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও ফতুল্লা থানা পুলিশ মাদক বিরোধী যৌথ অভিযান চালিয়ে ৮১ কার্টন বিদেশি বিয়ার, ৪ কার্টন বিদেশি মদ ও মাদক সেবনরত অবস্থায় ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামীরা জানায়, মেরিএন্ডারসন রেস্টুরেন্ট ও বারের মালিক সঞ্জয় রায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের শ্যালক ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সভাপতি তানভীর রহমান টিটুর সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ পূর্বক ফতুল্লার পাগলায় অবস্থিত বুড়িগঙ্গায় ভাসমান রেস্তোরাঁ ‘মেরিএন্ডারসন’ জাহাজে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।

অবৈধ মাদক ব্যবসায় ও মাদক ব্যবসায়ীকে সহযোগীতা করার পেছেনে একজন সংসদ সদস্যের শ্যালকের নাম প্রকাশ্যে চলে আসার পর অতিরঞ্জিত, স্বাধীনতা বিরোধী পরিবার সহ কথিত ও নামকাওয়াস্তে ব্যবসায়ীদের নিয়ে হুঙ্কার দিচ্ছে যা সাধারণ ভাবে গ্রহণ করতে পারে নি নারায়ণগঞ্জবাসী। এমনটাই মনে করছেন নগরীর সচেতন মহল। তাঁদের মতে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। মাদক বিরোধী অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তার শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটুর নাম প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে তিনি শামীম ওসমানই নিরবতা পালন করছেন সেই খানে এ সকল অতি উৎসাহি ব্যক্তিরা কিসের নেশায় আর কি পাবার আসায় গলাবাজি করছে সেটা কারো বুঝে আসছে না। নগরবাসীর মতে নারায়ণগঞ্জের সিংহপুরুষ খ্যাত শামীম ওসমান এখন আর আগের মতো নেই। তিনি শামীম ওসমান খুবই ভালো করেই অনুভব করছেন যে, তাঁর সাথে যে সকল ব্যক্তিরা সম্পৃক্ত রয়েছেন তাঁরাই তাঁকে এবং তার পরিবারকে বিতর্কিত করছেন। যার ন্যায় তিনি শামীম ওসমান গত ২ মার্চ এর জনসভায় বারংবার বলেছিলেন, আমার সাথে রয়েছে যারা তাঁদের মধ্যে যারা মাদক, ভূমি দস্যুতা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে তাঁদের বিচার আগে করবেন। তিনি শামীম ওসমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আগের চেয়ে অনেক পরিনত হয়েছে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের একনজন প্রবীন নেতা বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের যে অবদান রেখেছে তা এদশের মানুষ কিংবা বাংলাদেশের ইতিহাস তা কখনো ভুলবে না। ইতি পূর্বে এবং বিগত সময়ে যে সকল বিতর্ক নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে সেই সকল বিতর্কে নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার ততটা সম্পৃক্ত নয়। সকল বিতর্কের পিছনে রয়েছে তাঁদেরই কিছু অনুসারীদের হাত। শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যে সকল কথিত নেতৃবৃন্দদের নিজেদের আখের গোছানোর জন্য ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারকে বার বার বিতর্কের মুখে ফেলে দিচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীর সন্তান খালেদ হায়দার খান কাজলের ভূমিকার পিছনে রয়েছে ব্যক্তি স্বার্থ। তবে পাল্টা পাল্টি বক্তব্যের কারনে আতংকিত নারায়ণগঞ্জবাসী।

এ দিকে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) ‘বন্দর গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যেগে ১৯৭১ সালের বন্দরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যায় নিহত সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, নারায়ণগঞ্জে এখনও স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের সেই শান্তি বাহিনীর উত্তরসূরিরা বীরদর্পে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেয়। তাদের মুখে স্বাধীনতার কথা শোনা যায়। স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে সামনে এগিয়ে আসতে চায়। পুলিশকে হুমকি স্বরূপ আল্টিমেটাম দেয়। রাজাকারের উত্তরসূরিরা আজ প্রশাসনকে হুমকি দেয়। এটা আমাদের কাছে খুবই লজ্জার।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে যোগযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।