নিজস্ব প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল খেয়াঘাট নিয়ন্ত্রণে দুটি গ্রুপের মধ্যে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছে। একটি পক্ষ ইঞ্জিন চালিত নৌকা চালানোর পক্ষে। আর অপর একটি পক্ষ এর বিপক্ষে। এর মধ্যে এক পক্ষে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ মদদ দেওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তেজনার দিকে মোড় নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌকায় ইঞ্জিন লাগানোর পক্ষে নেই বন্দর এক নং খেয়াঘাট মাঝি সমবায় সমিতি সাধারণ সম্পাদক রবিউল। এ নিয়ে ঘাটে নৌকা মালিক সমিতি, মাঝি সমিতি ও সাধারণ মাঝিদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানা যায়। তবে মাঝিরা ঘাটে চলাচলরত ট্রলার সকাল ৬টার পরিবর্তে ৭টা এবং রাত সাড়ে ১২টার পরিবর্তে ১১ টা পর্যন্ত চালানোর দাবি জানান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের কাছে।
এসব অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের খেয়াঘাটগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল ঘাটে (টার্মিনাল-বন্দর) এক নং খেয়াঘাটে অতিরিক্ত যাত্রী চলাচল করায় অন্য ঘাটের মাঝিরা এ ঘাটে নৌকা চালাতে নানা চেষ্টা তদবির করে।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীদের কাছে মাঝিরা ধর্ণা দেয়ে। তখন মাঝিদের সাথে যাতায়াত করে ওইসব নেতারা অর্থ হাতিয়ে নেয়। গত কয়েক বছর ধরেই এমন ঘটনা ঘটছে এই ঘাটে। একই অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মাঝির।
তাদের মতে, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল জাহেরের মাধ্যমে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা করে দিয়ে কয়েকজন মাঝি বন্দর এক নং খেয়াঘাট মাঝি সমবায় সমিতিতে প্রবেশ করে। এতে মাঝিদের মধ্যে আর্থিক লেনদেনে ছিলেন, শিবু দাস (বড় শিবু), মান্নান মেম্বার, বিমল দাস, সিরাজ, হেলু, আশরাফউদ্দিন, নিখিল, শরীফ, পান্ডা, রবিউল, মাসুদ, অশোক।
গত ১০-১২ বছর যাবত সমিতির নামে মাঝিদের কাছ থেকে জনপ্রতি সপ্তাহে ৩০ টাকা করে প্রায় তিন শ মাঝির কাছে থেকে আদায় করলেও তার কোন হিসেব নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। জেটি মেরামতের জন্য প্রতি মাঝির কাছ থেকে এক শ’ টাকা আদায় করা হয়। কেউ তার হিসেব জানতে চাইলে তাকে নানাভাবে শাস্তি দেয়া হয় বলে কেউ এর প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
এমন অর্থ লুটপাটের জন্যই নতুর কৌশল হিসেবে এখন আবার ঘাটে ইঞ্জিন চালিত নৌকা চালুর পায়তারা করছে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা চালানোর জন্য প্রতি মাঝির কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যক্তির নাম করে। প্রথমে ২০টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা চালানোর জন্য উদ্যোগ নিলেও ১৮টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা প্রস্তুত করে। যার মধ্যে ৮টিই অন্যত্র থেকে ভাড়ায় আনা হয়। এর ভাড়া বাবদ আদায় করা টাকা কয়েকজন নেতাকে দেয়া হবে বলে জানানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। আর এর সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় সংসদ সংসদ সেলিম ওসমানের উপদেষ্টা পরিচিত জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল জাহের।
এখন জেটি বাধার টাকা নিয়ে মাঝি সমবায় সমিতির নেতাদের সাথে মালিকদের চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। মাঝি সমিতির নেতারা দাবি করছেন জেটি বাধার খরচের টাকার অর্ধেকটা নৌকা মালিক সমিতির নেতাদের দিতে হবে। শুরু শ্রমিকদের চাকায় জেটি বাঁধা হবে না।
বন্দর এক নং খেয়াঘাট মাঝি সমবায় সমিতি সাধারণ সম্পাদক রবিউল বলেন, আমি নৌকায় ইঞ্জিন লাগানোর পক্ষে না। কারণ কয়েকটি নৌকায় ইঞ্জিন লাগানো হলে অন্য সব মাঝিরা না খেয়ে মরে যাবে। তিনি বলেন আমি শুনেছি এম পি সেলিম ওসমান সাহেব বলেছেন নৌকা ইঞ্জিন লাগানোর জন্য। যদি এমপি সাহেব চান নৌকায় ইঞ্জিন লাগানো হবে। না হলে লাগানো হবে না। তিনি আরো বলেন, জেটি বাঁধা হয় নোকার মাঝিদের খরচে। এখন থেকে নৌকা মালিকদেরও জেটি বাধার খরচের অর্ধেক টাকা দিতে হবে।
জাতীয় পার্টির নেতা আবুল জাহের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে আমার কিছু করার নেই। মাঝিরা আমার কাছে এসেছিল তাই আমি বলে ছিলাম। এখন এম পি সেলিম ওসমান সাহেব দেশে আসার পর সেভাবে বলবেন সেভাবে ঘাট চলছে।