নিজস্ব প্রতিবেদক:
অমর একুশে বই মেলার চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। মেলা প্রাঙ্গন নতুন রূপে জেগে উঠছে।
গত বুধবার মেলার স্টলের স্থান বরাদ্দের লটারি অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার স্ব স্ব স্থান বুঝে পান প্রকাশকরা। সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। যা চলবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর একদিন পর, পহেলা ফেব্রুয়ারি রীতি মেনে, মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা গেলো, সেখানে এখন ভীষণ ব্যস্ততা। চারপাশে হার্ডবোর্ড কাটা আর বসানোর তোড়জোড়। রমনা কালী মন্দিরের ফটক ধরে এগুতেই নাকে এলো ধূলো-বালির ঝাঁজ। আর মাত্র তিন দিন পর যাতে যোগ হবে নতুন বইয়ের মৌতাত করার গন্ধ। সেই লক্ষেই জোর কদমে চলছে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার প্যাভিলিয়ন আর বিভিন্ন ইউনিটের স্টল নির্মানের ব্যস্ততা। এ ব্যস্ততা প্রমাণ করে মেলার বাকি নেই আর বেশি। বরাবরের মতো এবারও এ প্রাঙ্গণে শুধুমাত্র সৃজনশীল প্রকাশকদের প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্যাভিলিয়ন আর স্টল নির্মানের এমন ব্যস্ততার মাঝে কথা হলো অন্বেষা প্রকাশনের সত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেনের সাথে। তিনি বললেন, প্রস্তুতির এ সময়টা বড় মধুর। কিন্তু আর কয়েকদিন আগে স্থানটা বুঝে পেলে আরও নান্দনিকভাবে সাজানো যেতো প্যাভিলিয়নটি।
এরই মাঝে উদ্যান প্রাঙ্গণে দেখা হয় চারুলিপি প্রকাশনের সত্বাধিকারী হুমায়ূন কবীরের সঙ্গে। তিনি বললেন, এবারের মেলা ভালো হবে। বেশ খোলামেলাভাবে বিন্যাস করা হয়েছে। ফলে পাঠকেরা স্বাচ্ছন্দ্যে মেলায় ঘুরে ফিরে বই কিনতে পারবেন।
মেলা প্রাঙ্গণে হাঁটতে হাঁটতে দেখা হলো উৎস প্রকাশনের সত্বাধিকারী মোস্তফা সেলিমের সঙ্গে। তিনিও মেলার বিন্যাস নিয়ে বেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। একই সুর ছিলো জয়তী প্রকাশনীর সত্বাধিকারী পায়েল হাওলাদার এবং রোদেলা প্রকাশনা সংস্থার সত্বাধিকারী রিয়াজ খানের কণ্ঠেও। স্টল সাজাতে সাজাতে দেশ পাবলিকেশন্সের অচিন্ত্য চয়ন বললেন, মেলাটা এবার ভালোই হবে। কারণ, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতিও খুব ভালো। সদ্য শেষ হওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে কোন ঝামেলা হয়নি। আশা করছি আগামীতেও কোন রকম রাজনৈতিক উত্তপ্ততা থাকবে না। সুতরাং পাঠকেরা নিরাপদে মেলায় আসবেন। আর তারা আসা মানে স্বরস্বতী আর লক্ষীর যৌথ আগমন!
মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরতে ঘুরতে একটা প্যাভিলিয়নের সামনে দেখা হলো অনিন্দ্য প্রকাশের সত্বাধিকারী আফজাল হোসেনের সঙ্গে। প্যাভিলিয়নটি কাদের জানতে চাইলে তিনি হেসে বললেন, অনিন্দ্য প্রকাশের। এটি এবারের মেলার তিন নম্বর প্যাভিলিয়ন। ত্রিশ তারিখের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। আর ৩১ জানুয়ারি প্যাভিলিয়নে বই সাজিয়ে ফেলবো।
এবারের মেলার স্টল বিন্যাস এবং সার্বিক পরিবেশ নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মেলার স্টল বিন্যাস অনেকাংশে পরিবর্তন হয়েছে-ভালোই হয়েছে। যে কারণে এবার আগের চেয়ে গোছালো মেলা হবে। প্রকাশকরা প্যাভিলিয়ন-স্টল সাজাতে ব্যস্ত, সাংবাদিকরা চলে এসেছেন সংবাদ সংগ্রহে। এখন অপেক্ষা পাঠকের। আশা করছি পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকেই পাঠকরা মেলায় আসবেন, বই কিনবেন; তাহলে মেলা পরিপূর্ণতা পাবে।
প্রস্তুতির ছোঁয়া ছিলো বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও। এখানে থাকছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের স্টল। একাডেমি প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী সারাবাংলাকে বলেন, অবকাঠামোকে সুন্দর করতে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলা একাডেমি। এবার এটাকে নতুন পর্ব বলা যেতে পারে। বায়ান্নর চেতনাকে সামনে রেখে সম্পৃক্ত করা হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভকেও।
গতবারের মতো এবারও বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা সংস্থাকে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দুই ক্যাটাগরিতে প্যাভিলিয়ন থাকছে ২৩টি। এর মধ্যে ২৪ বাই ২৪ ফুটের প্যাভিলিয়ন থাকছে ১০টি আর ২০ বাই ২০ ফুটের প্যাভিলিয়ন থাকছে ১৩টি।মেলায় যেসব প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন থাকছে সেগুলো হল-আগামী প্রকাশনী, অবসর, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, অন্যপ্রকাশ, অনুপম, কথাপ্রকাশ, ঐতিহ্য, তাম্রলিপি, শোভা প্রকাশ, অনন্যা, অন্বেষা, পাঠক সমাবেশ,সময়, মাওলা ব্রাদার্স, কাকলী প্রকাশনী, বাংলা প্রকাশ, উৎস প্রকাশন, অনিন্দ্য প্রকাশ, নালন্দা, জার্নিম্যান বুকস, প্রথমা, পার্ল পাবলিকেশন্স এবং ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ।
এছাড়া চার ইউনিটের স্টল থাকবে ১৯টি, ৩ ইউনিটের স্টল থাকবে ৩৫টি, দুই ইউনিটের ১০৯টি এবং এক ইউনিটের স্টল থাকবে ১৫৬টি। আর শিশু কর্নারে শিশুবিষয়ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের জন্য রাখা হয়েছে ৭৫টি বিভিন্ন ইউনিটের স্টল। সব মিলিয়ে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ৩৩৮টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিতে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের শতাধিক স্টল আর লিটল ম্যাগ চত্বর।