আজ শনিবার, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অবৈধ অস্ত্রের আতংকে নারায়ণগঞ্জ

অবৈধ অস্ত্রের আতংকে


নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ঘোষণায় বলা হয়েছে বৈধ অস্ত্র নিজ হেফাজতে রাখতে। প্রদর্শন কিংবা ব্যবহার করা যাবে না। অপরদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রধান অন্তরায় হতে পারে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার ও অবৈধ অস্ত্র সন্ত্রাস। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃক্ষলা রক্ষাবাহিনীর চলমান অভিযান আরো বেগবান করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ। ইতি মধ্যে নির্বাচনি প্রচারনায় প্রধান দুই দলের সংঘাত ও সংঘর্ষের কারনে পুলিশ ব্যস্ত থাকায় ভাটা পড়েছে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে। তবে সম্প্রতি রূপগঞ্জে ছাত্র দল নেতা কালা ভাগিনা কে অবৈধ অস্ত্রসহ আটক করেছে পুলিশ।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে অস্ত্রের দাপট বাড়ার আশংকায় ভীত সাধারন নাগরিকগণ। গত বছরের হিসাবে কেবল বৈধ অস্ত্রই ছিল ৯৭১টি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা তাদের নিরাপত্তার সার্থে সরকারী অনুমোদনকৃত বৈধ অস্ত্র বহন করেন। প্রায় সকল জনপ্রতিনিধিদের আছে বৈধ অস্ত্র। কোন কোন জনপ্রতিনিধির একাধিক বৈধ অস্ত্র থাকায় এর ব্যবহার নিয়েও শংকা রয়ে গেছে। বিশেষ করে বর্তমান সাংসদ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নিরাপত্তার স্বার্থে একাধিক বৈধ অস্ত্র রয়েছে।

এর পাশাপাশি অনেক সন্ত্রাসী আছে যারা অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিকে সামনে রেখে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারী ও বিরোধী দলসমূহের নেতা-কর্মীরা আতঙ্কিত। প্রশাসনের উচিৎ ব্যাপক নজরদারী করা যাতে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ সন্ত্রাসীরা বাড়াতে না পারে। মজুদ করলেও যেন সে অস্ত্র ও সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনা হয়। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই ইতিমধ্যে অনেকে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করছে বলে কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
বিপুল সংখ্যক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন মামলার আসামিদের তালিকা দেখে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান করা প্রয়োজন।

জেলায় অবৈধ অস্ত্রের বেশিরভাগই আসছে নির্বাচনে ভোটের মাঠে ব্যবহারের জন্য। নির্বাচনকে ঘিরে অস্ত্র উদ্ধারের সফলতা পুলিশ প্রশাসনের তেমন নেই বলে জানিয়েছে সুশীল সমাজ। অবৈধ অস্ত্রের অধিকাংশই রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করার জন্য পুলিশের অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৯৭১টি। এর মধ্যে পিস্তল ২২৩টি, রিভারবাল ৯৩টি, শর্টগান/বন্দুক ৫৯১টি এবং পয়েন্ট ২২ বোরের বন্দুক ৬৪ টি। সদর মডেল থানায় ৪০৩টি, বন্দর থানায় ৮৯টি ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৯৪টি বৈধ অস্ত্র রয়েছে।
তবে এ জেলার প্রায় প্রতিটি থানায় বৈধ অস্ত্রের চাইতে অবৈধ অস্ত্রের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্রধারীদের অস্ত্র জমা না নিলে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা না গেলে নির্বাচনে এর অপব্যবহার হতে পারে। এতে বিঘিœত হতে পারে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা।

অন্যদিকে, জেলা ও নগরীতে পুলিশের তালিকায় রয়েছে বহু তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। এ তালিকার বাইরেও রয়েছে অসংখ্য সন্ত্রাসী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। এসব অস্ত্র ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীর কাছে মজুদ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র।

বিশেষ করে ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণকারী ছোট বড় প্রায় ২ শত সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে চলে গেছে বিশাল অস্ত্রের ভান্ডার। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর বেশির ভাগই এখন শাসন করছে সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলি, ফতুল্লার বিসিক পল্লী, শিবু মার্কেট, কাঠেরপুলসহ আশপাশের ঝুট ব্যবসা। প্রতি মাসে বিসিকের প্রায় ৩শ’ গার্মেন্টের ১০ কোটি টাকার ঝুট বেচাকেনা করছে এসব সন্ত্রাসীরা। আসন্ন নির্বাচনে এসব অস্ত্রের অপব্যবহার ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকেই।
গত একযুগে জেলায় নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে একে-৪৭সহ পেট্রোভেরেটা, স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন, ডেজার্ট ঈগল, তাউরাসের মতো বিশ্বের নামিদামি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র পাওয়ার ঘটনাই বলে দিচ্ছে কতটা অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে সন্ত্রাসীদের কাছে। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করা যায় না। অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানোর জন্য সন্দেহভাজন কাউকে ধরলে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল থেকে তদবির শুরু হয়। তদবিরের কারণে পুলিশ সন্ত্রাসীদের ধরে রাখতে পারে না। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বিশ্লেষকরা বলছেন, অবৈধ অস্ত্রের পেছনে রাজনীতির ছত্রছায়ায় মাফিয়া ও চোরাচালানিদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক কাজ করছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের জোরদার তৎপরতা হ্রাস পায়। ফলে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বাহকরা অবাধে শহরে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদাসিনতাকেও তারা দায়ী করছেন।

এদিকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অবৈধ অস্ত্রের মজুদ বাড়ালেও তা এখনই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলেও এসব অস্ত্র গর্জে উঠছে। এমনকি এসব অস্ত্র নিয়ে রাজনৈতিক কর্মীদের ছিনতাই, ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ারও নজির রয়েছে। আর এসব কারণেই জনমনে উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, নারায়লগঞ্জের রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে বৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বিপুল পরিমানের অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। এছাড়াও গত কয়েক মাস আগে হকার্স মার্কেট উচ্ছেদ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে গোলাগুলির ঘটঁনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় বৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বিপুল পরিমানের অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার গনমাধ্যম কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট উজ্জল হোসেনের মুঠোফোনে শতাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক (ডিআই ২) সাজ্জাদ হোসেন রোমান জানিয়েছেন, জেলায় কতটি বৈধ অস্ত্র জমা পড়েছে তার হিসেব এখনও তৈরী হয় নি। হিসেব পাওয়া মাত্র জানানো হবে। এছাড়াও প্রচুর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ র‌্যাব-১১’র সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন জানিয়েছেন, চলতি মাসে র‌্যাব-১১’র অভিযানে ৩ টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে অভিযান আরো চালানো হচ্ছে।