তাওসিফ মাইমুন: স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) কয়েকজন শিক্ষককে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেলের দিকে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন বন্ধ করেছে শিক্ষার্থীরা।
৯ ডিসেম্বর, রবিবার রাজধানীর কলাবাগানে অবস্থিত বিজয় ক্যাম্পাসে সকাল থেকে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন বিভাগের কয়েকশ শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বোর্ড অব ট্রাস্টিদের অযাচিত বিভিন্ন হস্তক্ষেপের কারণে অনেক শিক্ষকের চাকরি চলে গেছে। তাই এবার আন্দোলনে নামতে বাধ্য হলাম আমরা। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে না, ততক্ষণ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে অবরুদ্ধ করে রাখব।’
সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে বিভিন্ন বিভাগের মোট সাতজন শিক্ষককে নানা কারণ দেখিয়ে চাকরি ছেড়ে দিতে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন- এসইউবির উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ, ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের উপদেষ্টা অধ্যাপক মহব্বত আলী, একই বিভাগের প্রভাষক এজাজ জামান, জাবের আল ইসলাম, প্রভাষক ও সহকারী প্রক্টর হাবিবা কিবরিয়া, স্থাপত্য বিভাগের প্রধান সাজ্জাদ কবির, স্থাপত্য বিভাগের প্রভাষক মিজান।
এর মধ্যে অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বাকি বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, চাপে পড়ে পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
স্থাপত্য বিভাগের প্রধান সাজ্জাদ কবির বলেন, ‘ইউনিভার্সিটি কোনো কারণ ছাড়াই হয়তো সাশ্রয়ের কারণে এটি করে থাকতে পারেন। তারা আসলে কোনো রিজন (কারণ) দেখাচ্ছেন না। তারা আমাদের রেজিগনেশন (পদত্যাগ) দিতে বলেন। সে মোতাবেক আমরা রেজিগনেশন লেটার সাবমিট করি।’
শিক্ষকদের চাকরি ছাড়তে বলার কারণ নিয়ে এসইউবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. মো. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
একই বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার ফারহানা শারমিনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন রেখে দেন।
অবশ্য সমস্যা সমাধানে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। বৈঠকে উপউপাচর্য অধ্যাপক ড.আনোয়ারুল কবির অভিযোগের তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন বন্ধ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি হলো-
চাকরিচ্যুত সকল শিক্ষকদের সম্মানে স্বপদে বহাল রাখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজকে স্বপদে বহাল করতে হবে।
বিনা নোটিশে বা ইউজিসির আইনের বাইরে গিয়ে কোনো শিক্ষককে অপসারণ করা যাবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ফারহানাকে অপসারণ করতে হবে।
বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কেউ কোনো শিক্ষকের সঙ্গে খারাপ ভাষায় (কুরুচিপূর্ণ) কথা বলা যাবে না।
সেমিস্টারের টিউশন ফি কমাতে হবে।
সকল জরিমানা সম্পূর্ণরূপে মওকুফ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘নতুন কিছু ডটকম’ আবার চালু করতে হবে।
লাইব্রেরিতে আধুনিক বইসহ সকল সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।
ক্যান্টিনের খাবারের মান আরও বাড়াতে হবে। দাম কমাতে হবে,খাবারের আইটেম বাড়াতে হবে।
আন্দোলনরত কোনো শিক্ষার্থীর ওপর একাডেমিক, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা যাবে না।