সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হচ্ছে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে। নির্বাচনকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করলেও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের গতিবিধি স্বাভাবিক নয়। কখনো তিনি নিজে মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে দাবী করছেন। কখনো তিনি কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিকের পক্ষে কাজ করছেন।
স্থানীয়দের মতে, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হাইকে সাধারন জনগন তো দূরের কথা খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই বুঝতে পারছেন না। তিনি কমিডি সিরিয়ালের জোকারের মতো বিভিন্ন রূপে রূপগঞ্জবাসী সামনে নিজেকে উপস্থাপন করছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করছেন। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকগন যখন আওয়ামী লীগের ঐক্যে ডাক দিয়ে মাঠে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঠিক সেই মুহুর্তে আব্দুল হাই বিভক্তির পতাকা নিয়ে মাঠে বার বার হাজির হচ্ছেন। কেউ বলছেন রূপগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজীকে ঘায়েল করতে তিনি এসব করছেন। কেউ বলছেন রফিকের পক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তিনি এধরনের বিভক্তির সৃষ্টিতে নেমেছেন।
জানা গেছে, রূপগঞ্জে আব্দুল হাইকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরে তার তেমন একটা মূল্যায়ন নেই। তিনি প্রায় প্রতিদিনই রূপগঞ্জে এসে বিভিন্ন সভা সমাবেশে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকেন। তাই কোন্দল ধীরে ধীরে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীরা বলছে রূপগঞ্জের আওয়ামী লীগের কোন্দলের পেছনে কাজ করছেন আব্দুল হাই। কোন্দলকে জিইয়ে রেখেই তিনি তার ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিল করছেন। তাকে ঘিরে ধীরে ধীরে উপজেলায় কোন্দল বেড়েই চলেছে। মাঠের ত্যাগী নেতারা চায় না তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে রূপগঞ্জে এসে দলকে রসাতলে নিয়ে যাক।
নেতাকর্মীরা বলছেন, তিনি যদি নিজে মনোনয়ণ প্রত্যাশী হন তবে সে বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের পরিস্কার ধারনা দেন। তা না হলে আওয়ামী লীগের জেলার সভাপতি হিসেবে দলের সকলকে সমান চোখে দেখবেন সেটাই দলীয় মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাওয়া। তা না করে তিনি ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য একজনের ঘরে আসবেন সেটা মাঠের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছে না।
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের কোন্দল ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীগন। আর এজন্য তারা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইকেই দায়ী করছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, আব্দুল হাই এক সময় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি দল বদল করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি পেছনে কাজ করতে শুরু করেন। এরপরই তিনি রূপগঞ্জে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিককে নিয়ে গাজী ঠেকাও নীতিতে চলতে শুরু করেন। তিনি রূপগঞ্জে নিজের অবস্থান পরিস্কার করে সকল দ্বন্দ্ব ও কলহের অবসান ঘটাতে পারেন। তবে তিনি তা না করে নিজের স্বার্থ হাসিল করতেই দলীয় কোন্দলকে জিইয়ে রেখেছেন।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজীর নেতৃত্বে বহু উন্নয়ন কর্মকান্ড হয়েছে। রাস্তা ঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ব্রীজ, কালভার্ট, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা দূরীকরনসহ কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে রূপগঞ্জে। সেই উন্নয়নে ইর্ষান্বিত মহল সাংসদের বিরুদ্ধে মাঠে অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে। রফিকুল ইসলাম রফিক এক সময় সাংসদের কৃপাতেই কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। সেই রফিককেই তারা সাংসদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে মাঠে নামিয়েছে। সাংসদের জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে ঘটনো হয়েছে কয়েকটি সংঘর্ষ। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে গিয়ে নিজেরাই ঘায়েল হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। তবে নেতাকর্মীদের মতে এখনও পর্যন্ত দলীয় সভানেত্রী ও বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপগঞ্জের মাটিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজীতেই আস্থা রাখেন। আগামী নির্বাচনে তিনিই ওই আসনে মনোনয়ন পাবেন। রূপগঞ্জবাসীর আর্থ সামাজিক উন্নয়নে তাকে ঘিরেই রয়েছে সব ধরনে জল্পনা কল্পনা।