আজ মঙ্গলবার, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এরশাদের না রওশনের হ্যা সেলিম ওসমানের ভরসা এখন শেখ হাসিনা!

এরশাদের না রওশনের হ্যা সেলিম

এরশাদের না রওশনের হ্যা সেলিম

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জন্য সবই করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের জাতীয় পার্টির এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ এ কে এম সেলিম ওসমান।

মরহুম বড় ভাইয়ের নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুল উদ্বোধন থেকে শুরু করে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা করনীয় বিষয়েও দিকনির্দেশনা নিতে এরশাদকে নারায়ণগঞ্জে এনেছিলেন সেলিম ওসমান। এমনকি প্রতি বছর ঈদের সময়ও এরশাদের বারিধারার বাসভবনে গিয়ে কুশল বিনিময় করেছিলেন তিনি। করেছিলেন নানা সহযোগিতাও।

কিন্তু বিনিময়ে গত ২০১৪ সালের ২৬ জুন উপ-নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার দীর্ঘ ৪ বছরে দল থেকে সেলিম ওসমান কিছু প্রত্যাশা না করলেও শেষতক খোদ সেই দলীয় চেয়ারম্যান দ্বারা ছলনার শিকার হলেন তিনি।

গত এক বছরের ব্যবধানে এরশাদ দু’দফায় সেলিম ওসমানের আমন্ত্রণে নারায়ণগঞ্জে এসে দু’বারই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে পুনরায় সেলিম ওসমানকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে যাওয়ার পরেও সম্প্রতি উক্ত আসনের প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের সহধর্মীনি পারভীন ওসমানকেও নির্বাচনের মাঠে নামার নির্দেশনা দিয়ে এরশাদ সেলিম ওসমানের সাথে রাজনৈতিক ছলনা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা

তাদের মতে, এরশাদ মনোনয়ন ইস্যুতে সেলিম ওসমানের সাথে শুধু ছলনাই করেননি, পাশাপাশি তাঁর বড় ভাবী পারভীন ওসমানকেও একই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রদানের আশ^াসে নির্বাচনের আগ মুহুর্তে মাঠে নামার নির্দেশনা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক ওসমান পরিবারে গৃহ বিবাদসহ স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি করেছেন।

যার ফলে দলীয় চেয়ারম্যান এরশাদের প্রতি আর আস্থা রাখতে পারছেন না সেলিম ওসমান। তাই একাদশ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এমপি প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে এখন তাঁর একমাত্র ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা! ।
বিশেষ সুত্রের মাধ্যমে জানা গেছে নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে এরশাদ নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমানকে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পাটির মনোনয়ন দেবেন। কিন্তু সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ চান সেলিম ওসমান পুনরায় এমপি হোক জাপার।

আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি জাতীয় পার্টিকে আর ছাড় না দেয়ার ক্ষেত্রে অনড় অবস্থানে থাকা আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যখন নিজেরাই নৌকা প্রত্যাশায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণে মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছেন, ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রীর ডিক্লারেশন নিয়েই নির্বাচনের মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমান।

গত ৪ অক্টোবর দুপুরে বন্দর উপজেলা পরিষদের নবনির্মিত অডিটরিয়াম ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রার্থী হওয়া নিয়ে বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে প্রার্থী হিসেবে ৮/১০ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। যারাই নির্বাচনে নিজেদেরকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন দেখা যাবে তারা আমার নির্বাচনই করবেন। কারণ নির্বাচনে এই আসন থেকে কে প্রার্থী হবেন সে সিদ্ধান্ত দিবেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর উনার ডিক্লেয়ারেশন নিয়েই আমি নির্বাচনে মাঠে নামবো।’

আর সেলিম ওসমানের এমন ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীই যে এখন তাঁর শেষ আস্থা, তেমনটাই প্রতীয়মান হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

কারন, আসন্ন একাদশ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাথে পুনরায় মহাজোট গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামীলীগ। আর এমনটা হলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি পুনরায় ছাড় পাবে জাতীয় পার্টি। এ লক্ষ্যে আওয়ামীলীগের কাছে ৭০ টি আসন চেয়ে নামের তালিকাও পাঠিয়েছে জাতীয় পার্টি। যেখানে জাতীয় পার্টির বর্তমান ৩৪ এমপিকে পুনরায় প্রার্থী হিসেবে রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সেলিম ওসমানের প্রার্থীতাও নিশ্চিত হওয়ার পরেও পারভান ওসমানকে এরশাদ মাঠে নামার নির্দেশনা দেয়ায় দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়ে সৃষ্টি হয় ধুম্রুজালের।

যদিও গত ২৬ জুন এমপি নির্বাচিত হওয়ার ৪ বছর পূর্তিতে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের বিরোধীতা স্বত্ত্বেও উন্নয়ণের স্বার্থে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসন থেকে সেলিম ওসমানকেই পুনরায় এমপি প্রার্থী হতে দাবী তুলেছিলেন দলমত নির্বিশেষে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিসহ আমজনতা।

কিন্তু সেদিন সেলিম ওসমান এমপি প্রার্থী হওয়ার পরিবর্তে দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারে বসার ঘোষণা।
তিনি বলেছিলেন ‘যদি উন্নয়ণের স্বার্থে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটেবিলে আলোচনায় বসতে রাজি না হয় তাহলে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি এবং নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে অন্য কেউ এমপি হবে। আর আল্লাহ বাঁচায় রাখলে আগামীতে আমি সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারে বসবো।’