আজ শনিবার, ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নানা কৌশলে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

নানা কৌশলে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নানা কৌশলের মধ্য দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছেন। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কৌশলের নানা ভিন্নতা রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের কেন্দ্র থেকে মহাজোটে জাতীয় পার্টি থাকছে বলে নিশ্চিত হয়েছে যার ফলে একই আসনে আওয়ামীলীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী সহ শরীক দল জাতীয় পার্টির প্রত্যাশীরা মনোনয়নের টিকিট পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। ইতোমধ্যে মনোনয়ন ইস্যুতে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভক্তি দেখা গেছে। তবে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এগোচ্ছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ দলের নেতাকর্মীরা নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দাবি করে শ্লোগান তুলেছে। আর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নৌকা প্রতীকের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি সহ নানা ধরণের বক্তব্য দিয়ে কর্মী গুছিয়ে নেয়ার কাজ সম্পন্ন করছে। তবে এসব দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের শরীক দল জাতীয় পার্টি। আওয়ামীলীগ দলে একই আসনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। এমনকি একই আসনে অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা একেবারে কম।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির নেতা ও এমপি সেলিম ওসমান নির্বাচন করবেন কিনা তা এখনো স্পষ্ট করেননি। তিনি রাজনীতি থেকে উন্নয়নের বেশি প্রধান্য দিয়ে আলোচনার শীর্ষে অবস্থান করছেন। এছাড়া মনোনয়ন ইস্যুতে এখনো তিনি নির্বাচন করার দাবি না করে উন্নয়নের ধারবাহিকতা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

এতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘তিনি বেশ সুকৌশলে উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছেন। মনোনয়ন ইস্যুতে দাবি না তুলে উন্নয়নের কথা বলে একদিকে জনপ্রিয়তা কুড়াতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে জনপ্রিয়তা আর উন্নয়নের মধ্য দিয়ে মনোনয়নের টিকেটও হাসিল হয়ে যাবে। তিনি এই আসনে শিক্ষাখাতে উন্নয়নের ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া নবীগঞ্জ ফেরী ও শীতলক্ষা সেতু নিয়ে তার ব্যাপক তোড়জোর তাকে বেশ আলোচিত স্থানে বসিয়েছে। তবে কোন এলাকার দুর্ভোগ কিংবা সমস্যার চিত্র দেখা দিলে তাৎক্ষনিকভাবে পদক্ষেপ নেয়ার ফলে এই নেতা জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন।’

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এমপি শামীম ওসমান আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে একেবারে নিশ্চুপ রয়েছেন। ইতোমধ্যে ডিএনডির মেধা প্রজেক্ট ও লিংক রোডের সংস্কার কাজের মধ্য দিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এছাড়া সম্প্রতি হকার ইস্যু ছাড়া আর কোন ইস্যুতে বিতর্কে জড়ান নি এই নেতা। এখন তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নৌকা ও প্রধানমন্ত্রীর গুণকীর্তন করে যাচ্ছেন। তবে নিজের জন্য দোয়া ছাড়া আর কিছু চাইতে দেখা যাচ্ছে না। তাই ডাকসাইটে থাকা এই নেতা ডার্ক হর্সের মত বেশ সুকৌশলে মনোনয়ন বাগিয়ে নিবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ আসনে লিয়াকত হোসেন খোকা জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকে নির্বাচন করার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। এই নেতা তার আসনের যানজট নিরসনে নিজে সড়কে নেমে যানজটমুক্ত শহর উপহার দেয়ার নজির স্থাপনের মধ্য দিয়ে বেশ আলোচিত হয়েছে। এছাড়া কোন রকমের বিতর্কে না জড়িয়ে নিজ এলাকার কর্মকা- নিয়ে তিনি বেশি ব্যস্ত সময় পার করছেন।

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তিনি এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন হওয়ায় তাকে ওসমান বলয়ের অনুগামী হিসেবে সবার কাছে বেশ পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু মনোনয়ন ইস্যুতে এই আসনে ওসমান পরিবারের আরেক সদস্য ও জাতীয় পার্টি নেতা এমপি সেলিম ওসমান সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ার ফলে কিছুদিন আগে তার বিরোধীতা করে বক্তব্য দিয়েছেন।

আ.লীগের এই নেতা ও এমপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছিলেন, ‘কোন গার্মেন্টে বসে আর কাউকে লাঙলের প্রার্থী দেওয়া যাবে না। নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই নৌকার প্রার্থী দিতে হবে।’

নারায়গঞ্জ ১ রূপগঞ্জ আসনে সর্বকালের সেরা উন্নয়ন করে তৃণমূল আ.লীগের আস্থা অর্জন করেছেন বর্তমান এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী। এ আসনে গোলাম দস্তগীর গাজীর মনোনয়ন প্রায় অনেকটাই নিশ্চিত। এখানে তেমন কোন আ.লীগের বিকল্প প্রার্থী নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহীদ বাদল ওসমান বলয়ের অনুগামীর হওয়া সত্ত্বেও দলের স্বার্থে নৌকার দাবি করে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরোধীতা করছেন। এক্ষেত্রে তার নিজ বলয়ের বিরুদ্ধে, এমনকি বলয়ের প্রধানদের বিরুদ্ধেও বক্তব্য দিচ্ছে। আর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পানি কম ঘোলা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টিকে বন্ধু বলে সম্মোধন করে তাদের নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নিজ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকার কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। তবে কেন্দ্রের এমন হুশিয়ারীর পর থেকে এই নেতা অনেকটা নিশ্চুপ রয়েছে।

এদিকে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করছে।তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রভাবশালী দুই বলয়ের (ওসমান ও আইভী) পক্ষ না নিয়ে ঢালাওভাবে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। যদিও তিনি কোন পক্ষ না নিলেও অধিকাংশ সময়ে ওসমান বলয়ের বিষধগারে বেশি ব্যস্ত দেখা গেছে।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা লাঙলের ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। বন্দরবাসী আর এই ভার বহন করতে চায় না। আমরা আগামী সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই নৌকা দেখতে চাই। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আমি নিজেও নমিনেশন চাইবো। মনোনয়ন পাই আর না পাই নৌকার জন্য সংগ্রাম করেই যাবো।’ তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাজোট নিয়ে নির্বাচনের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের পরে এই নেতারা তার বক্তব্যে অনেকটা সংযত হয়েছেন।

সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ানও একই আসনে নির্বাচন করার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। এই নেতা একইভাবে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ঠেকাতে নানা বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তবে মনোনয়ন ইস্যুতে বিশাল শো-ডাউন সহ বন্দরের বিরাট ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে এই নেতা আলোচনায় উঠে আসছে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহায়তার মধ্য দিয়ে জনপ্রিয়তা কুড়িয়ে মনোনয়ন হাসিল করতে চাইছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য ও আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান দিপু একই আসন থেকে মনোনয়ন প্রাপ্তিতে বেশ সরব রয়েছেন। তবে এই নেতার প্রভাবশালী ওসমান ও আইভী এই দুই মেরু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাই মনোনয়ন প্রাপ্তিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আরজু রহমান ভূঁইয়া প্রথম থেকেই এই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে আসছেন। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তার নৌকার দাবি তুলে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এই নেতা প্রায় ৫০ টি উঠান বৈঠক করে গণসংযোগের মধ্য দিয়ে মনোনয়নের টিকিট হাসিলের চেষ্টা করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনোনয়ন প্রাপ্তিতে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। আর সেই কৌশলের মাধ্যমে মনোনয়ন হাসিলের চেষ্টা করছেন। যদিও কৌশলগুলো অনেক সময় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দৃশ্যমান না হলেও তাদের কর্মকান্ডে অনেক কৌশলে বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যদিও রাজনীতিতে কৌশল ছাড়া এগোনো সম্ভব নয়। তাই এখানে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে।

সর্বশেষ সংবাদ