আজ শনিবার, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সৌদি আরবে নিহত আব্দুল মজিদ, রূপগঞ্জে শোকের মাতম

রূপগঞ্জে শোকের মাতম

 

রূপগঞ্জে শোকের মাতম

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সৌদিআরবের রিয়াদে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনে নিহত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার বিরাব এলাকার আব্দুল মজিদের বাড়ীতে এখন শুধুই কান্না আর কান্না।

নিজ সন্তানকে হারিয়ে মা জৈবুন্নেছা কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। বাবা আওলাদ হোসেন ছেলেকে হারিয়ে শুধু নির্বাক হয়ে সকলের দিকে চেয়ে থাকে কিছু বলেনা। স্ত্রী ময়না বেগম স্বামীকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে ফেলেছে। এখন আর তার চোখ থেকে পানি বের হয়না। ৬ বছরের একমাত্র মেয়ে আমেনাকে নিয়ে এখন কিভাবে তার সংসার চলবে এবং ধার দেনা ও সুদের উপর টাকা নিয়ে স্বামী আব্দুল মজিদ পরিবারের সুখের জন্য বিদেশ গিয়েছিল সেই টাকাই বা কিভাবে শোধ করবে সেই চিন্তায় স্তব্দ হয়ে গেছে স্ত্রী ময়না।

সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, কাঞ্চন পৌরসভার বিরাব লালটেক গ্রামের আওলাদ হোসেনের মেজো ছেলে আব্দুল মজিদ খান ৭ বছর আগে পার্শ্ববর্তী শিমুলিয়া এলাকার গোলজার ভূইয়া মেয়ে ময়না বেগমকে বিয়ে করেন। বর্তমানে আমেনা আক্তার নামে ৬ বছরের একটি মেয়ে আছে।

সে স্থানীয় বিরাব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। নিজের ভিটে মাটি ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের। একটি ছোট টিনের ঘরে পরিবার নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে বসবাস করতো আব্দুল মজিদ। হঠাৎ মাথায় চিন্তা ডুকে পরিবার ও নিজেকে সমাজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সৌদিআরব কাজের জন্য পাড়ি জমাবেন। আতœীয় স্বজন, এনজিও ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সুদের উপর ৪ লাখ টাকা নিয়ে ৭ জানুয়ারি পাশ্ববর্তী পলাশ থানাধীন ডাঙ্গা কেন্দুয়াবো এলাকার নাজিমউদ্দিনের মাধ্যমে কাজের জন্য পাড়ি জমান সৌদিআরবের রিয়াদে। সেখানে প্রায় ৩ তিন মাস কোন কাজ পাননি আব্দুল মজিদ। রিয়াদের আল নুরা ইউনির্ভাসিটি আবাসিক এলাকায় একটি একটি ভবনের একটি রুমে ৭/৮ জনের সাথে থাকতো সে। নিজ বাড়ি থেকে টাকা পাঠালে পেটে খাবার জুটতো তার।

১২ দিন আগে সেখানকার ইউনিভার্সিটিতে ক্লিনারে কাজ পায় সে। প্রতিদিনের মত রাতের কাজ শেষ করে শুক্রবার সকালে অন্যদের মত রুমে ঘুমে পড়েন সে। সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে হঠাৎ একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরন ঘটে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন আব্দুল মজিদ খানসহ রুমের সবাই। দুপুরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একই ভবনে থাকা রাশেদ খান নামে এক যুবক আব্দুল মজিদের বড় ভাই বাছেদ আলীকে আব্দুল মজিদের মৃত্যুর খবর জানায়। এরপর থেকে নিহতের পরিবারের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে নিহত আব্দুল মজিদের লাশ রিয়াদের সিমুচি হাসপাতালের মর্গে রয়েছে । লাশ দেশে আনার ব্যাপারে পরিবারের দালালের মাধ্যমে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে নিহত আব্দুল মজিদের স্ত্রী ময়না বেগম বলেন, আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়া টাকা উপার্জন করে একমাত্র আদরের মেয়ে আমেনাকে অনেক বড় শিক্ষিত করবো। বাড়িঘর একটু ভাল করবো। সংসারে সব কষ্ট দূর হইবো। এখন সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। একদিকে স্বামীকে হারিয়ে ও অন্যদিকে স্বামীর ধার করা টাকা কিভাবে দিবে শোধ করবে সেই চিন্তায় হতাশার ছায়া এখন তার চোখে।
এদিকে পিতা আওলাদ হোসেন ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে শুধু চেয়ে থাকে। নিজের ছেলের লাশ কাঁধে নিবেন সেই কথা মনে পড়লে কেঁদে কেঁদে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, সৌদিআরবে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনে নিহত আব্দুল মজিদের পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছি। লাশ দেশে আনাসহ যেকোন ব্যাপারে তার পরিবারের লোকজন কোন প্রকার সহায়তার প্রয়োজন মনে করলে অবশ্যই সহায়তা করবো।