পুরুষ শাসন’ কায়েম না হলে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে না
নবকুমার:
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী বাংলাদেশে কেবল নারী আর নারী দেখেন । আর এই পরিস্থিতিতে দেশের কোনো ভবিষ্যত দেখেন না তিনি। তার ধারণা, ‘পুরুষের শাসন’ কায়েম না হলে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবাধ্য বা নাফরমানও আখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে আলাদা দল গঠন করা এই রাজনীতিক। বলেছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে চলা যায় না।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এক আলোচনা ও দোয়ার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন কাদের সিদ্দিকী। খেলাফত আন্দোলনের আমির শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ এর জীবনী ও কর্ম নিয়ে এই আলোচনার আয়োজন করে প্রয়াত নেতার দল।
নারী নেতৃত্ব থাকলে দেশে আল্লাহর রহমত বর্ষণ হয় না উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের দেশে খালি নারী নারী আর নারী। এই দেশে আল্লাহর রহমত বর্ষণ হতে পারে না।’
‘যতক্ষণ পর্যন্ত এই দেশে পুরুষের শাসন কায়েম না হবে, ততক্ষন পর্যন্ত আল্লাহর কোন রহমত এখানে পৌঁছতে পারে না। আমাদের সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে তা বিশ্বাস করি।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় গৌরবোজ্জল ভূমিকা রাখা কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গুণমুগ্ধ একজন মানুষ। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তিনি সশস্ত্র লড়াইও চালিয়েছিলেন। আর এ কারণে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকেন।
এরশাদ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্ব মেনে আওয়ামী লীগের হয়ে রাজনীতি চালিয়ে যান কাদের সিদ্দিকী। সে সময় তিনি খালেদা জিয়ার কট্টর সমালোচক ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে হেরে গেলেও ১৯৯৬ সালে টাঙ্গাইলে একটি আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন। পরে সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় তার বাড়িতে পুলিশে তল্লাশির ঘটনায় আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং ১৯৯৯ সালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে আলাদা দল গঠন করেন।
২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপির সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে নির্বাচন করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। আর এরপর তিনি নানা সময় খালেদা জিয়ার প্রশংসা করতে থাকেন।
নারী নেত্রীর অধীনে থেকে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসা কাদের সিদ্দিকী এখন নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান কঠোর অবস্থান নিতে না পারায় ইসলামী দলগুলোরও সমালোচনা করেন।
ওই আলোচনায় নারী নেতৃত্ববিরোধী বক্তব্য দেয়া একজনের কথা উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘সম্ভবত ফখরুল ইসলাম বলেছেন আমি নারী নেতৃত্ব মানি না, সত্য কথা বলেছেন। আমি আপনাদের (ইসলামী নেতাদের) মতো সকালে জিহাদের ডাক দেব, রাত্রে প্রত্যাহার করব, ওই ধরনের চরিত্র আল্লাহ আমাকে দেয় নাই।’
নয় বছর নেত্রী মেনে রাজনীতি করা কাদের সিদ্দিকী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনাও করেন। বলেন, ‘শেখ হাসিনার সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন বিরোধ নাই। তবে তিনি যেভাবে দেশ চালান আমি এক মুহূর্তের জন্য তাকে সমর্থন করতে পারি না।’
“তিনি (শেখ হাসিনা) বলেন, ‘আমি মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালাচ্ছি’। মদিনা সনদ ওনি পড়েই দেখেন নাই যে মদিনা সনদটা কী? এই রকম নাফরমানের সাথে আর যাই হোক তার সাথে চলা যায় না। একজন ঈমানদার হিসেবে তার সাথে চলা যায় না।’
‘ক্ষমতা চিরদিন থাকে না, এক দিন না এক দিন আল্লাহতায়ালা ক্ষমতা থেক সরিয়ে দেবেন। আমি চাই ক্ষমতায় যারা আছেন, ক্ষমতাহীনরাও ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের কথা উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘কিন্তু সে রাস্তা তিনি (শেখ হাসিনা) প্রকট করেছেন। গত ৮ মে তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়েছেন।’
‘আর আমি যদি প্রধানমন্ত্রী হতাম তাহলে তিনি তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, তাকে সর্বোচ্চ সুবিধা দিতাম। জেলে তার যেন কোন কষ্ট না হয়।’
সভাপতির বক্তব্যে দেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির শাহ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর বলেন, ‘দেশ এখন চরম একটা কুশাসনের কবলে পড়েছে। দেশে শান্তির শাসন কায়েম করতে হলে মুসলিম অমুসলিম এক হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশে ইসলাম শাসন কায়েম করতে হবে।’